সায়েন্স ডেস্ক: চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভারতের যান। সংগ্রহ করছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সফল চন্দ্রাভিযানের ১০ দিনের মাথায় ইসরোর মুকুটে নতুন পালক- সূর্যের উদ্দেশে নিরাপদে রওনা হয়ে গেল আদিত্য-এল১। শনিবার ভারতীয় সময় সকাল ১১টা বেজে ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে আদিত্য-এল১ কে বহন করে মহাকাশে পাড়ি দিল পিএসএলভি (পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল) রকেট। যে কোনও মহাকাশ অভিযানের প্রথম ধাপ সফল উৎক্ষেপণ। আদিত্য-এল১ এর উৎক্ষেপণ সফল হওয়ায় দেশ জুড়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে প্রতি মুহূর্তে আপডেট পাঠাচ্ছে রোভার ‘প্রজ্ঞান’ও ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। আর মাত্র চার দিন চাঁদে সচল থাকার কথা প্রজ্ঞান ও বিক্রমের। একটি মিশন সফলভাবে শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় মিশনের সফল সূচনা প্রমাণ করে দিচ্ছে এখন মহাকাশ গবেষণার জগতে ভারতের ‘ইসরো’ ভরসার আরেক নাম। চাঁদের উদ্দেশে জাপানের মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ শেষ মুহূর্তে বারে বারে স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণের দু’দিন আগেই চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়ে রাশিয়ার ‘লুনা-২৫‘। বিক্রমের আগেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে লুনা-২৫ কে নামানোর পরিকল্পনা ছিল রুশ মহাকাশ সংস্থা ‘রসকসমস’এর। কোনও সন্দেহ নেই, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অভিযান চালিয়ে আমেরিকার ‘নাসা’, রাশিয়ার ‘রসকসমস’ ও চিনের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সিএনএসএ’-র পরেই নিজের স্থান করে নিয়েছে ভারতের ‘ইসরো’।
ভারতের আগে আর কারও মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাতে পারে নি। তাই মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে আমেরিকার ‘অ্যাপেলো-১১’ মিশনের মতোই নজির হয়ে থাকবে ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশন। চন্দ্রযান-৩ মিশন থেকে কী কী নতুন তথ্য উঠে আসে, এখন সেই দিকেই তাকিয়ে পৃথিবীর মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মহল।
সংস্কৃত ভাষায় সূর্যের আরেক নাম আদিত্য। তাই ইসরোর বিজ্ঞানীরা সূর্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া প্রথম যানের নাম রেখেছেন আদিত্য-এল১। আদিত্য-এল১ ঠিক ১২০ দিন পর যে কক্ষপথে পৌঁছাবে মহাকাশ বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে বলা হয় ‘হ্যালো’। সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে হ্যালো কক্ষপথের একটি ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে’ আদিত্য-এল১ কে প্রতিস্থাপন করা হবে। এর জন্য ভারতের মহাকাশযানটিকে মহাশূন্যে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার পথ। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টগুলির বৈশিষ্ট হল, এখানে সূর্য ও পৃথিবীর অভিকর্ষজ বল সমান সমান। অর্থাৎ এখানে পৃথিবীর আকর্ষণ বল যতটা, বিকর্ষণ বলও ঠিক ততটাই। আবার এখান থেকে সূর্যের আকর্ষণ বল যতটা, বিকর্ষণ বলও ঠিক ততটাই। ফলে মহাকাশের এই অঞ্চলে পৃথিবী থেকে প্রেরিত কোনও মহাকাশযান স্থির অবস্থায় থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। আদিত্য-এল১ কে ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট-১’ এ প্রতিস্থাপন করা হবে।
পৃথিবীর কক্ষপথে প্রায় ১৬ দিন পাক খাওয়ার পর হ্যালো কক্ষপথের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে আদিত্য-এল১। পাঁচটি ধাপে গতি বাড়িয়ে যানটির কক্ষপথ পরিবর্তন করাবেন ইসরোয় গ্রাউন্ড স্টেশনে থাকা আদিত্য-এল১ মিশনের বিজ্ঞানীরা। এরপর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে-১’এর দিকে ছুট দেবে আদিত্য-এল১। ১০৪ দিন পর সেখানে পৌঁছে সূর্যের গঠন, সৌরঝড় এবং সূর্যের বিভিন্ন স্তর নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পৃথিবীতে তথ্য পাঠাবে মহাকাশযানটি। আদিত্য-এল১’য়ে থাকা ভিসিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফি (ভিইএলসি) প্রতিদিন সূর্যের ১,৪৪০টি ছবি তুলে নিয়ন্ত্রণকক্ষে পাঠাবে বলে ইসরো সূত্রে জানা গেছে। আদিত্য-এল১ অভিযানে ইসরোর বাজেট মাত্র ৩৭৮.৫৩ কোটি টাকা। মহাকাশ গবেষণার জগতে ইসরোর অভিযানগুলি যেন হয়ে উঠছে সস্তায় পুষ্টিকর। এই টাকায় সৌর অভিযান নাসার কাছে কল্পনারও অতীত।