দিল্লি: শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে বড় স্বস্তি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর। অপরাধমূলক মানহানির মামলায় রাহুলের দু’বছরের কারাবাসের সাজার উপর স্থগিতাদেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। মোদী পদবি অবমাননা মামলায় গত ২৩ মার্চ রাহুল গান্ধীকে দু’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। পরের দিনই সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করে দেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। একই আইন অনুযায়ী ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগও হারিয়েছিলেন রাহুল। সুপ্রিম কোর্ট জেলের সাজার উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল বলেই মনে করছে আইন বিশেষজ্ঞদের মহল।
পর পর তিনবার আদালতে ধাক্কা খান রাহুল
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে কর্নাটকের একটি সভায় রাহুল গান্ধী মোদী পদবি নিয়ে কুমন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগে রাহুলের বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক মানহানির’ মামলা করেন গুজরাটের বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদী। সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ২৩ মার্চের রায়ের বিরুদ্ধে সুরাটের অতিরিক্ত দায়রা আদালতে আপিল করেছিলেন রাহুল। ২০ এপ্রিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়কেই বহাল রাখেন সুরাট অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক আরপি মোগেরা। এরপর সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাহুল গান্ধী। ৭ জুলাই রাহুলকে নিরাশ করে গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছক জানিয়ে দেন, “নিম্ন আদালত রাহুল গান্ধীকে যে শাস্তি দিয়েছে, তা যথাযথ।”
নিম্ন আদালতের রায় সুপ্রিম কোর্টে সমালোচিত
গুজরাট হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখায় সাংসদ পদ ফেরত পাওয়ার আশা তো দূরের কথা জেল যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল রাহুলের। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন সোনিয়া পুত্র। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাহুলের সাজার উপর স্থগিতাদেশ তো দিয়েছেই এমনকি সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশের সমালোচনা করতেও ছাড়ে নি। মামলার শুনানি চলাকালে সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সমালোচনা করে বিচারপতি আরএস গাভাই ও বিচারপতি পিকে মিশ্র বলেন, “অপরাধ মূলক মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীকে কেন দু’বছরের জেলের সাজা দেওয়া হল, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা বিচারক তাঁর রায়ে দেখাতে পারেন নি।” সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই প্রতিক্রিয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারায় স্পষ্ট করে বলা আছে, কারাবাসের মেয়াদ দুই বছরের চেয়ে একদিন কম হলেও দোষী জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ করা যাবে না। এমনকি ছয় বছরের জন্য ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার থেকেও তাঁকে বঞ্চিত রাখা যাবে না। সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ে কারাবাসের মেয়াদ দু’বছর হওয়ায় দুটোই হারাতে বসেছিলেন রাহুল। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ ও পর্যবেক্ষণ নিম্ন আদালতের রায়ের উপর প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিল কংগ্রেসকে।
রাহুলকে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি
সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা কেসি বেনুগোপাল বলেছেন, “অধ্যক্ষ যত দ্রুততার সঙ্গে রাহুলজির পদ খারিজ করেছিলেন, আমরা আশা করব, তত দ্রুততার সঙ্গেই তাঁর পদ ফিরিয়ে দেবেন তিনি।” একই দাবি করেছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীও। সুপ্রিম কোর্টে রাহুল স্বস্তি পাওয়ায় খুশি হয়ে টুইট করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পর রাহুল জেলযাত্রা থেকে তো বাঁচলেনই এমনকি ওয়েনাড়ের বরখাস্ত হওয়া সাংসদের পদ ফিরে পেতেও আইনি বাধা নেই বলেই জানিয়েছেন দেশের আইনজ্ঞরা। স্বাভাবিকভাবেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর থেকে দিল্লিতে এআইসিসি-র সদর দফতরে খুশির হাওয়া। কংগ্রেসের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা আনন্দে মেতে উঠেছেন। খুশিতে ঢোল পেটাচ্ছেন অনেকেই। বাজি ফাটছে। আবির উড়ছে।যেন ভোটে জেতার আনন্দ। বিকেলে ২৪ নম্বর আকবর রোডের দফতরে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা এলে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙে যায় দলের কর্মী-সমর্থকদের।
Feature image/graphic is representational.