কলকাতা: আদালতের একের পর এক ধাতানিতে সম্বিত খানিকটা ফিরল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৮২২ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আবেদন করল কমিশন। অবাধ ও সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোটের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে হাইকোর্ট গিয়েছিলেন বিরোধীরা। একই আর্জি নিয়ে আদালত যান সরকারি কর্মচারীরাও। পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিলেও তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন আদৌ অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট চায় কিনা, এই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে দেশের শীর্ষ আদালত।
হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়লেও শিক্ষা হয় নি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার। সুপ্রিম কোর্টে সরকার ও কমিশনে এসএলপি খারিজ হতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে রাজ্যের ২২ জেলার জন্য মাত্র ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আবেদন জানায় নির্বাচন কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন নামমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আদালতের নির্দেশকে কার্যত লংঘন করছে, বুঝতে পেরেই ফের হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিরোধী দলের আইনজীবীরা। বুধবার কমিশনকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে পদক্ষেপ করতে সময়সীমা ও গাইডলাইন বেঁধে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম নির্দেশ দেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী সংখ্যা ২০১৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনের থেকে যেন বেশি হয়। ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে পদক্ষেপ করল নির্বাচন কমিশন। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে কমিশন। ২০১৩-তে ৮২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার মাত্র ২ কোম্পানি বেশি। কমিশনের এই সিদ্ধান্তের মধ্যেও তঞ্চকতা দেখছে রাজনৈতিক মহল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে ৬১ হাজার ৬৩৬টি ভোটকেন্দ্রে। ভোটকেন্দ্র পিছু দু’জন করে সশস্ত্র জওয়ান মোতায়েন করা হলে ১ লক্ষ ২৩ হাজার জওয়ান প্রয়োজন। এক-একটি কোম্পানিতে সদস্য থাকে ১০০জন। ৮২২ কোম্পানিতে পাওয়া যাবে ৮২ হাজার ২০০ জন জওয়ান। যদিও প্রতি কোম্পানিতে ৯০ জনের বেশি সদস্য নিরাপত্তার কাজে যুক্ত থাকেন না। সেই হিসেব মাথায় রাখলে রাজ্যের সব ভোটকেন্দ্রে দু’জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা সম্ভব নয়।
বিরোধীদের প্রশ্ন- কোন হিসেবে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইল রাজ্য নির্বাচন কমিশন? ২০১৩-র থেকে মাত্র দুই কোম্পানি বেশি বাহিনী চেয়ে কমিশন আদালতের নির্দেশ রক্ষা করল বটে কিন্তু আদালতের নির্দেশ মেনে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোট করাতে কমিশনের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় কাটল না।
Feature image is representational.