দিল্লি প্রতিনিধি : ডিএ আন্দোলনকে দিল্লি পৌঁছে দিলেন বাংলার সরকারি কর্মচারীরা। সোমবার সকাল ১১টা থেকে মুখরিত যন্তরমন্তর- এখানেই দু’দিনের ধর্নায় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা চাই- এই আওয়াজ রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা দিল্লিতেও পৌঁছে দেওয়ায় নবান্ন মহারুষ্ট বলে জানা গেছে। যন্তরমন্তরে ধর্নায় বসা ৫০০ সরকারি কর্মচারীকে দেখে নেওয়ার প্রস্তুতি নাকি শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
তবে সরকারের চাপের মুখে কি আর কর্মচারীরা পিছিয়ে আসবেন। আন্দোলনকারীদের মরীয়া ভাব কিন্তু বলছে, তাঁদের ভয় ভেঙে গেছে। দুই খেপে ৫০০ সরকারি কর্মচারী ট্রেনে দেশের রাজধানীতে রওনা হয়ে যান। দিল্লিযাত্রা নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে কোনও গোপনীয়তা লক্ষ্য করা যায় নি। সবাই হই হই করতে করতে ট্রেনে চেপেছেন এবং সেই ছবি-ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে ভুলেন নি। এই দৃশ্য দেখেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা- আগের মতো আর প্রশাসনকে ভয় পাচ্ছেন না রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা দাবি-দাওয়া নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসেছেন- রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তির জন্য তা মোটেই ভাল নয়। এই জন্য ধর্নায় বসা কর্মচারীদের প্রতি নবান্নের রাগ হওয়াই স্বাভাবিক। আন্দোলনকারীদের সরকার আগেই আলোচনার জন্য ডেকে নিলে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না বলে অনেকেই মনে করছেন। দিল্লিতে ধর্নায় বসলে রাজ্য সরকার যে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে পারে, তা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতাদের অজানা নয়। শহিদ মিনারে কর্মচারীদের টানা অবস্থানই তো নবান্নের চক্ষুশূল। হাইকোর্ট রক্ষাকবচ দিয়ে রাখায় আন্দোলনকারীদের উপর বলপ্রয়োগ করতে পারছে না সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে সরকারী কর্মচারীদের চোর-ডাকাত বলেন, তখন বোঝা যায় নেহাত হাইকোর্টের কারণে হাতপা বাঁধা, তাই তিনি কিছু করতে পারছেন না। নইলে দেখিয়ে দিতেন।
এখনও পর্যন্ত শোকজ নোটিশ ধরিয়ে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ আন্দোলনকে ভাঙতে পারে নি সরকার। ভয় পেয়ে দিল্লির ধর্না কর্মসূচি থেকেও পিছিয়ে আসে নি সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। দিল্লি থেকে ৫০০ সরকারি কর্মচারী ফিরলে নবান্ন তাদের বিরুদ্ধে কোনও শক্ত ব্যবস্থা নেয় কিনা, এটাই দেখার। তবে তাঁরা যে মানসিকভাবে যে কোনও চাপের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন, যৌথ মঞ্চের নেতারা তা জানিয়ে দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের এই দৃঢ়তা দেখেই রাজ্যের শাসকদলের সন্দেহ- বিরোধীরা সবাই মিলে ইন্ধন জুগিয়ে যাওয়াতেই সরকারকে উপেক্ষা করার সাহস দেখাচ্ছেন কর্মচারীরা। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডিএ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে- এই আশঙ্কাও যে সরকারকে সংযত রেখেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তার ওপর ডিএ আন্দোলনে হাইকোর্টেরও একটা নজরদারি রয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে ১৭ এপ্রিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তিনজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে। তার আগে আন্দোলনকারীদের উপরে শাস্তির খাড়া নেমে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
নবান্ন কী ব্যবস্থা নেবে, এই টেনশন সোমবার যন্তরমন্তরে ধর্নায় বসা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটুও লক্ষ্য করা গেল না। সকাল থেকেই ধর্নাস্থলে স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীত, বক্তৃতা চলছে। কারও মধ্যেই জোশের কোনও ঘাটতি নেই। দু’দিনের ধর্না চলতে চলতেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিদের।
Feature Photo- NNDT