সরকার ও দলের খারাপ সময় আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভু জগন্নাথের শরণ নেন- এমনটাই বলে থাকেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা
কলকাতা: চলতি মাসেই জগন্নাথ দর্শনে পুরী যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সময়টা ২১ মার্চ হতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। সেদিন ভুবনেশ্বরে পৌঁছে পরদিন পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরিকল্পনা মমতার। তাঁর সরকার ও দলের সামনে আপদ-বিপদ আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভু জগন্নাথের শরণ নেন- এমনটাই বলে থাকেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। একুশের নির্বাচনের আগে যখন বাতাসে বিজেপি ক্ষমতায় আসে আসে রব, তখনও জগন্নাথের ওপরেই নাকি ভরসা করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ভোটের আগে পুরীতে গিয়ে জগন্নাথ মন্দিরে পুজোও দিয়ে এসেছিলেন। একুশে মমতা তুড়ি মেরেই বিজেপিকে হারিয়েছিলেন বললে অত্যুক্তি হয় না। ভোট মিটলে জগন্নাথের কাছে আবার যেতে ভোলেন নি মুখ্যমন্ত্রী। এমনিতে সরকারি বা রাজনৈতিক সফরে ওড়িশা গেলেই পুরীর জগন্নাথ দর্শন না করে ফেরেন না মমতা। আবার বিপদে পড়লে বা বিপদ দূর হওয়ার পর শুধু জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্যও ওড়িশা যান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর এবারের ওড়িশা সফরটা ব্যক্তিগত বলেই জানা গেছে। অর্থাৎ পুরীতে পুজো দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ওড়িশায় যাচ্ছেন তিনি। তবে রথ দেখার পাশাপাশি কলা খাওয়ার মতোই জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর নাকি ভুবনেশ্বরে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার কথা আছে মমতার। একুশের নির্বাচনে তুমুল জয়ের পর প্রায় বছর খানেক ভালোই চলছিল তৃণমূল সরকার। বাইশের একুশে জুলাইয়ের পর দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ইডির হানার পর থেকেই যেন শনির দৃষ্টি পড়ে মমতার সরকার ও দলের ওপর। তার আগেই অবশ্য আনিস খানের অপমৃত্যু ও বীরভূমের বগটুই গ্রামে গণহত্যার ঘটনায় সরকারের মুখ পোড়ে। তবে নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে পার্থ সবান্ধবী গ্রেফতার হওয়ার জের এখনও টেনে চলেছে তৃণমূল। বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের পর কুন্তল শান্তনুদের মতো দলের চুনোপুঁটিরাও গ্রেফতার হয়েছে। এরপর এই রকম আরও ক’জন কুন্তল-শান্তনু গ্রেফতার হতে পারে বলে বাজারে গুঞ্জন। এইভাবে চলতে চলতে নিয়োগ দুর্নীতি রাজ্য সরকারকে শেষ পর্যন্ত কতটা অপদস্থ করবে, তা নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব টেনশনে বলে জানা গেছে।
এদিকে গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে অনুব্রত মন্ডল সাত মাস যাবত জেলে। এখন তিনি দিল্লিতে ইডির হেফাজতে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জামিন তো দূরের কথা কেষ্ট দিল্লি থেকে বাংলার জেলে ফিরতে পারে কিনা, তা নিয়েই যথেষ্ট সংশয়ে তৃণমূলের নেতারা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাগরদিঘি উপনির্বাচনে জেতা আসন বিরাট ভোটে হেরে বসেছে তৃণমূল। একশ দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়েও সিএজি-র রিপোর্টে ঘাপলার আভাস। এরপর থেকেই বরাদ্দ আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লি থেকে একের পর এক অডিট টিম পাঠানো হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কেন্দ্র মুঠি আলগা করবে, এমন ইঙ্গিতও মিলছে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বারো বছরের শাসনে এমন বহুমুখী চাপে আগে কখনও পড়তে হয় নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরীতে প্রভু জগন্নাথের পুজো দিতে যাচ্ছেন, এমন খবর সংবাদ মাধ্যমের সামনে এল। বিপদে মধুসূদন ভরসা। অতীতে অনেক বিপদ থেকে প্রভু জগন্নাথ তাঁকে রক্ষা করেছেন বলে বিশ্বাস করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুরীতে জগন্নাথ দেবকে পুজো দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী নাকি কলকাতায় ফিরছেন না। ভুবনেশ্বরে নবীন পট্টনায়কের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা আছে। নবীনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাতের ব্যাপার থাকলে মমতার সফরটি আর পুরোপুরি ব্যক্তিগত থাকছে না। লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র বছর খানেক বাকি। আগামী বছর এমন দিনে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর তৃণমূল এমন হাওয়া তুলেছিল যে মনে হচ্ছিল, মমতাই মোদীর বিপরীতে একমাত্র যোগ্যতম মুখ। কিন্তু গোয়া, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে দলের শোচনীয় ফলের পর মমতা লোকসভা ভোট নিয়ে উচ্চাশা ত্যাগ করেছেন বলেই রাজনৈতিক মহলের অনুমান। তবে তৃণমূল যে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কোনও জোটে যাবে না, তা সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের দিনেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অকংগ্রেসী, অবিজেপি অঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে থার্ড ফ্রন্ট গোছের কিছু একটা খাড়া করার দিকেই মমতার ঝোঁক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই নিয়ে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মমতা আলাপ সারতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
Feature Image is Representational.