যোগীর ৬ বছরের শাসনে ইউপিতে ১০ হাজার এনকাউন্টার! ভয়েই সিধা হয়ে যাচ্ছে বহু অপরাধী - nagariknewz.com

যোগীর ৬ বছরের শাসনে ইউপিতে ১০ হাজার এনকাউন্টার! ভয়েই সিধা হয়ে যাচ্ছে বহু অপরাধী


কোনও কোনও মুখ্যমন্ত্রী গুন্ডাদের কন্ট্রোল করেন আর যোগী আদিত্যনাথ গুন্ডাগিরি কন্ট্রোল করেন- পার্থক্য এইটুকুই

ডেস্ক রিপোর্ট: মিডিয়ার অভিধানে উত্তরপ্রদেশের আরেক নাম এখন যোগী রাজ্য। যদিও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশকে উত্তমপ্রদেশে পরিণত করতে সচেষ্ট। রিল লাইফ থেকে রিয়েল লাইফ- একটা সময় ইউপি মানেই ছিল গুন্ডাগর্দি। জেলায় জেলায় চলত অবাধ মাফিয়ারাজ। পুলিশের সঙ্গে তলায় তলায় থাকত দুষ্কৃতীদের দোস্তি। দিনেদুপুরে খাল্লাস হয়ে যেত আদমি। আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে বিহার না উত্তরপ্রদেশ- কোন প্রদেশ আগে, এই নিয়ে দেশে হত বিতর্ক। আসছে ২৫ মার্চ লখন‌উয়ের কুর্শিতে ছয় বছর পূর্ণ হবে যোগী আদিত্যনাথের। উত্তরপ্রদেশের ইতিহাসে গোরোক্ষপুরের মোহন্ত‌ই হতে চলেছেন সবথেকে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে কংগ্রেসের ড. সম্পূর্ণানন্দ ৫ বছর ৩৪৫দিন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে ছিলেন। ড. সম্পূর্ণানন্দের রেকর্ড ইতিমধ্যেই ভেঙে দিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। যোগীর আরও একটা রেকর্ড- ছয় বছরে মোট ১০ হাজার এনকাউন্টার! এনকাউন্টারে খতম হয়ে যাওয়ার ভয়ে যোগী রাজ্যে এখন অপরাধ করে নিজে থেকেই থানায় এসে আত্মসমর্পণ করছে দুষ্কৃতীরা।

এনকাউন্টারে ১৬০ দুষ্কৃতী খতম

২০১৭-এ উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নিয়েই যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের বদনাম তিনি ঘোচাবেন। সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নেবে। ইউপিতে রাজনৈতিকভাবে যাঁরা যোগীর বিরোধী তাঁরাও স্বীকার করছেন, অপরাধ দমনে পুলিশ আগের যে কোনও জামানার তুলনায় এখন অনেক বেশি তৎপর। বাইশে যোগীর কুর্শিতে প্রত্যাবর্তনের একটা অন্যতম কারণ ছিল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলায় উন্নতি। চলাফেরায় আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করায় নারীরা ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন বিজেপিকে। এমনকি বহু এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলারাও যোগীর দলকে বিমুখ করেন নি। গত ছয় বছরে উত্তরপ্রদেশে ১৬০জন দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়েছে এনকাউন্টারে। এই এনকাউন্টারগুলির চরিত্র নিয়ে আইনবিদদের মধ্যে সংশয় এবং মানবাধিকারকর্মীদের আপত্তি থাকলেও সাধারণ নাগরিকেরা দিনের শেষে খুশি।

মিরাট জেলাতেই ৬৩ দুষ্কৃতীর বিনাশ

উত্তরপ্রদেশের মিরাট জেলা ছিল অপরাধের জন্য কুখ্যাত। সেই মিরাটে আজ দলে দলে গুন্ডাবদমাইশ এনকাউন্টারে নিকেশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পুরোনো লাইন ছেড়ে ভালমানুষ হয়ে গেছে। গত ছয় বছরে শুধু মিরাট জেলাতেই পুলিশ এনকাউন্টার করেছে ৩,১২৫টি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মিরাটে ৬৩জন দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়েছে। জখমের সংখ্যা বিরাট, ১৭০৮জন। ৫,৯৬৭ জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের তরফে একজনের মৃত্যু ও ৪০১জন আহত হয়েছেন।

আগ্রা দ্বিতীয় তিনে বেরিলি

এনকাউন্টারের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আগ্রা জেলা। আগ্রায় এনকাউন্টার হয়েছে ১,৮৪৪টি। ১৪জন অপরাধী নিহত ও ৪,৬৫৪জন গ্রেফতার হয়েছে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫৫জন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন। তিন নম্বরে বেরিলি জেলা। বেরিলিতে ১,৪৯৭টি এনকাউন্টারের ঘটনায় সাতজন সমাজবিরোধীর মৃত্যু হয়েছে। ধরা পড়েছে ৩,৪১০ জন। আহত হয়েছে ৪৩৭জন দুষ্কৃতী।

থানায় এসে পুলিশের পায়ে ধরছে দুষ্কৃতীরা

বুধবার মুজফ্ফরনগর জেলায় একটি কান্ড ঘটেছে। একবার পুলিশের এনকাউন্টারে পড়ে গেলে জান রাম নাম সত্য হ্যায় হয়ে যাবে, এই ভয়ে জেলার মনসুরপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে মোটরবাইক চুরি চক্রের এক পান্ডা। চুরি করা বাইকটি সমেত থানায় পৌঁছে পুলিশের পায়ে গিয়ে পড়ে অঙ্কুর নামে ওই দুষ্কৃতী। অঙ্কুরের হাতে একটি পোস্টার‌ও ছিল। আর তাতে লেখা- “মুখ্যমন্ত্রী যোগীজি, আমাকে ক্ষমা করেন। আমি বড় ভুল করেছি। জীবনে আর কখনও অপরাধ করব না।” চুরি-লুঠ ও খুনের চেষ্টার একাধিক অভিযোগে অঙ্কুরকে পুলিশ খুঁজছিল। প্রাণের ভয়ে নিজেই এসে ধরা দিল সে।

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ: ক্ষমতায় এসেই অঙ্গীকার করেছিলেন ইউপিকে অপরাধী মুক্ত করার। ফটো- সংগৃহীত

যোগীর এই কড়া শাসনের সুফল পাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ। এক সময় যে রাজ্য গুন্ডাগর্দি, খুনখারাবি ও মাফিয়ারাজ আর বাহুবলীগিরির জন্য কুখ্যাত ছিল, আজ সেই রাজ্যের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্যে সুশাসন আনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে অভিনন্দিত করেছেন। মোদী-শাহ না হয় বিজেপির লোক। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের মুখেও আজ যোগী রাজ্যের ভূয়সী প্রশংসা। ইউপিতে দুর্বৃত্তরাজ চরমে পৌঁছেছিল মুলায়ম সিং যাদবের জামানায়। যার খেসারত আজ‌ও দিয়ে চলেছেন মুলায়ম পুত্র অখিলেশ।‌ বাইশের নির্বাচনে আশা জাগিয়েও অখিলেশের পরাজয়ের একটা অন্যতম কারণ, মানুষের মনে মুলায়ম জামানার দুঃশাসনের দুঃসহ স্মৃতি।

ইউপিতে পুলিশের সঙ্গে সমাজবিরোধীদের সমঝোতা ভাঙতে পেরেছে যোগী প্রশাসন। ছবি- সংগৃহীত

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কেন পারলেন উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শোধরাতে? কারণ, গোরোক্ষপুরের এই মোহন্তের কোন‌ও পিছুটান নেই। দুষ্কৃতী দমনে পুলিশকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ কর্তৃত্ব দিয়েছেন যোগী।‌ পুলিশের মাঝারি তলার সঙ্গে দুষ্টচক্রের সঙ্গে যে গোপন সমঝোতা ছিল, তা অনেকটাই ভেঙে দিতে পেরেছে যোগী প্রশাসন। কোনও কোনও মুখ্যমন্ত্রী গুন্ডাদের কন্ট্রোল করেন আর যোগী আদিত্যনাথ গুন্ডাগিরি কন্ট্রোল করেন- পার্থক্য এইটুকুই।

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *