মমতার পরামর্শে ৬ লক্ষ স্থায়ী পদ তুলে দিয়ে গেছেন অমিত মিত্র- শহিদ মিনারের সভায় বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর
কলকাতা: বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা মহাসমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে ছয় লক্ষ স্থায়ী পদ অবলুপ্ত করে দেওয়ার অভিযোগ আনলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতার শহিদ মিনারে ময়দানে ওই সমাবেশ হয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডাকা সমাবেশে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী ও কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচী সহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বুধবার ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের চোর-ডাকাত ও চিরকুটে চাকরি পাওয়া বলে কটাক্ষ করে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কথা শোনার পর থেকেই ক্ষোভে-রাগে ফুঁসছেন আন্দোলনকারীরা। মুখ্যমন্ত্রীর কুকথা তাঁদের জোশ ও জেদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মহাসমাবেশে আসা সরকারী কর্মচারীরা জানান। মুখ্যমন্ত্রীর হুমকিতে ভয় না পেয়ে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন বিরোধী দলনেতাও।
ভয় পাবেন না, সঙ্গে আছি
শুভেন্দু অধিকারী সরকারি কর্মচারীদের সমাবেশে বলেন, “আপনারা ভয় পাবেন না। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন আপনাদের সঙ্গে আমরা আছি। বিজেপি আছে। ডিএ নিয়ে আমাদের স্ট্যান্ড আমরা অনেক আগেই ক্লিয়ার করে দিয়েছি।” শুভেন্দু আন্দোলনকারীদের আরও বলেন, “আপনারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনেক আগেই বিধানসভার ভেতরে রাজ্যপালের ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে ও বাজেট নিয়ে বক্তৃতা করার সময় আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, ডিএ কর্মচারীদের অধিকার। সেই অধিকার আপনাদের পূরণ করতে হবে। টাকা কোথা থেকে আনবেন, সেই দায়িত্ব আপনার।”
৬ লক্ষ স্থায়ী পদ তুলে দিয়ে গেছেন অমিত মিত্র
রাজ্য সরকার সরকারি দফতরগুলিতে স্থায়ী পদ তুলে দিয়ে দলের ক্যাডারদের দিয়ে সিভিক প্রশাসন চালু করতে চায় বলে সমাবেশে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর চোখের সামনেই রাজ্য ক্যাবিনেটের একের পর এক মিটিংয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ৬ লক্ষ স্থায়ী পদ অবলুপ্তি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমি অবাক হয়ে দেখতাম, রাজ্যের পূর্বতন অর্থমন্ত্রী ডঃ অমিত মিত্র, তিনি প্রত্যেকটা ক্যাবিনেট মিটিংয়ে সরকারি কর্মচারীদের পদ অবলুপ্ত করে দিচ্ছেন। আমার চোখের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে ক্যাবিনেটে ৬ লক্ষ স্থায়ী পদের অবলুপ্তি ঘটিয়েছেন অমিত মিত্র।”
৬০ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী দিয়ে সিভিক রাজ
শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, ছয় লক্ষ স্থায়ী পদ তুলে দিয়ে ৬০ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করে সরকার। প্রথম দিকে সরকারিভাবে তাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হলেও পরে ডব্লিউ টি এল নামক এক এজেন্সির মাধ্যমে মাত্র ছয়মাস মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। চার হাজার টাকা থেকে বেতন শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। ছয়মাস পর পর রিনিউয়্যাল। এইভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুরো সরকারি ব্যবস্থাটাকেই সিভিক ব্যবস্থায় পরিণত করে দিয়েছে বলে সভায় কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা।
কালীঘাটের মাধ্যমে চাকরি বিক্রির দোকান খুলেছিলেন পার্থ
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিক্ষা দফতরের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছেন বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো ডাকাত যিনি শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমে ডিপিএসসি-র অবলুপ্তি ঘটান ২০১৪ সালে। পাঁচটি জোন ছিল আমাদের এসএসসি-র। এই পাঁচটি জোনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে পুরো বিষয়টা কালীঘাট কেন্দ্রীক বিকাশ ভবনে নিয়ে আসা হয়। অর্থাৎ সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম করে প্রাথমিক শিক্ষক, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অধ্যাপক, অধ্যক্ষ, প্রধানশিক্ষক – সব নিয়োগকে কার্যত সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেমের মধ্য দিয়ে দোকান খুলে বিক্রি করার ব্যবস্থা করেন পার্থ।”
নয়ছয় করে টাকা শেষ করেছে সরকার
সভায় শুভেন্দু অধিকারী সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করুন, ১২ বছর ধরে যে ২৭ হাজার কোটি টাকা এনজিওগুলিকে দিয়েছেন, তাতে কোন কাজ হয়েছে? ১০ হাজার ক্লাবকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। কী কাজে লেগেছে এত এত টাকা?” বিরোধী দলনেতা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের ডিএ আটকাতে শুধু আইনজীবীদের পেছনেই ৫০ কোটি টাকা খরচ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” অর্থের নয়ছয় করে করে রাজ্য সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে বলে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তিনি সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “সরকার যদি বলে ডিএ দেওয়ার মতো পয়সা নেই, তবে সরকারকে বলুন, পয়সা জোগানোর দায়িত্ব আমাদের নয়।” ডিএ-এর দাবি ন্যায্য এবং এই দাবিতে কর্মচারীদের আন্দোলন ন্যায্য বলে মনে করেন শুভেন্দু অধিকারী। সভায় ডিএ আন্দোলনের জয় নিশ্চিত বলে জানান বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, “এই রাজ্যের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলছি, আপনারা ট্রাইব্যুনালে যেমন জয় পেয়েছেন। হাইকোর্টে যেমন জয় পেয়েছেন। তেমনই জয় পাবেন সুপ্রিম কোর্টেও।”
আদালতে জয় আনতে ভাল ভাল আইনজীবী দেবো
ডিএ-র দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনে বামপন্থীদের তুলনায় বিজেপির সহযোগিতা-সমর্থন যে কম কিছু নয়, তা বোঝাতেই এদিনের সভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এই আন্দোলনের পাশে যেমন বিকাশবাবুরা আছেন, তেমন আমরাও আছি। আপনারা যাতে আদালতে জিততে পারেন, তার জন্য ভাল ভাল আইনজীবী দিয়েছি। আরও ভাল আইনজীবী দেবো। আপনাদের জয় নিশ্চিত।” তবে আইনি পথে জয় অবশ্যম্ভাবী হলেও রাজপথের লড়াই থেকে সরে না আসতে সরকারি কর্মচারীদের প্রতি আবেদন জানান বিরোধী দলনেতা।
Feature Image- Reporter.