'সৎ রঞ্জন' অবশেষে সিবিআই-এর জালে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার বাগদার চন্দন মন্ডল - nagariknewz.com

‘সৎ রঞ্জন’ অবশেষে সিবিআই-এর জালে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার বাগদার চন্দন মন্ডল


রঞ্জন সৎ! কারণ, ইনি টাকা নিয়ে চাকরি দিতে ব্যর্থ হলে টাকা সুদ সমেত চাকরপ্রার্থীদের ফেরত দিতেন।

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বাগদার চন্দন মন্ডলকে জালে তুলল সিবিআই। আসল নাম চন্দন হলেও সিবিআই-এর প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা উপেন বিশ্বাসের কৃপায় ‘রঞ্জন’ নামেই পরিচিত ইনি। উপেনবাবুর কথায় ‘সৎ রঞ্জন’। সৎ! কারণ, ইনি চাকরি দিতে ব্যর্থ হলে টাকা সুদ সমেত ফেরত দিতেন। শুক্রবার সকালে চন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠান সিবিআই আধিকারিকেরা।‌ এর আগেও বার কয়েক চন্দন মন্ডলকে জেরা করেছে সিবিআই। এদিন আর নিজাম প্যালেস থেকে বাড়ি ফেরার সুযোগ পান নি চন্দন মন্ডল। মিথ্যে বলে বিভ্রান্ত বলার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিবিআই-এর আধিকারিকেরা।

দুপুরেই আলিপুর আদালতে তোলা হয় ধৃত চন্দন মন্ডলকে। বিচারক তাকে চারদিনের সিবিআই হেফাজতে পাঠিয়েছেন। বাগদার চন্দনের বিরুদ্ধে অভিযোগ- প্রাথমিক ও হাইস্কুলে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা তুলতেন তিনি। উপেন বিশ্বাস ২০১১ সালে বাগদা থেকেই তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত সিবিআই-এর হাতে যাওয়ার আগেই সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করে চন্দন মন্ডলের কীর্তির কথা প্রথম জনসমক্ষে আনেন উপেনবাবুই। গোপনীয়তার খাতিরে চন্দনের পরিচয় দিয়েছিলেন ‘রঞ্জন’ নামে। উপেন বিশ্বাসের ভিডিওর শিরোনাম ছিল ‘রঞ্জন সৎ’।

রঞ্জনের আসল নাম চন্দন মন্ডল। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে চন্দন লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ।

উত্তর চব্বিশ পরগনা জুড়ে অসংখ্য চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে চন্দন মন্ডল টাকা তুলেছিলেন বলে অভিযোগ। টাকা নিয়ে এক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে দরাদরি করার একটি কল রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল কয়েক মাস আগে।  যিনি টাকার বিনিময়ে চাকরি প্রদানের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলেন তিনিই উপেনবাবু কথিত ‘সৎ রঞ্জন’ বলে বাজারে গুঞ্জন উঠেছিল। এক-একটি চাকরির বিনিময়ে ১০ থেকে ১৪-১৫ লক্ষ টাকা নিতেন রঞ্জন ওরফে চন্দন‌। এখন চন্দন মন্ডলের হাত দিয়ে টাকা কোথায় কোথায় পৌঁছে যেত, এটাই প্রশ্ন। উপেন বিশ্বাস বহু আগেই অভিযোগ করেছিলেন- চন্দন মূলত দালাল, তার মাধ্যমে টাকা কলকাতায় প্রভাবশালীদের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে যেত।

উপেন বিশ্বাসের ভিডিও প্রচারিত হ‌ওয়ার পর গত এক বছরে জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। একুশে জুলাইয়ের পর দিন ইডির হাতে সাবান্ধবী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার এবং পার্থর বান্ধবী অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাট থেকে দুই দফায় পঞ্চাশ কোটির বেশি নগদ টাকা উদ্ধার। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একে একে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য, স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুই প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও অশোক সাহা, এস‌এসসি-র প্রাক্তন সভাপতি সুবীরেশ ভট্টাচার্য গ্রেফতার হন। দু’দিন আগেই সিবিআই-এর‌ হাতে ধরা পড়েছে কুন্তল ঘোষ নামে নদীয়ার এক যুব তৃণমূল নেতা। শুক্রবার গ্রেফতার হলেন বহু গুঞ্জিত সৎ রঞ্জন থুরি চন্দন মন্ডল।

রঞ্জন নামের আড়ালে চন্দনন্ডলের কীর্তির কথা সর্বপ্রথম মানুষের নজরে আনেন উপেন বিশ্বাস। ছবির উৎস- ফেসবুক

চন্দন মন্ডলের মুখোশ উন্মোচনের পেছনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার থেকেও বড় ভূমিকা সিবিআই-এর প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা উপেন বিশ্বাসের। উপেন বিশ্বাসের ভিডিওর সূত্র ধরেই গত জুলাই মাসে বাগদায় চন্দন মন্ডলের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। পরে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে উপেনবাবুকে  ডেকে আনেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। হাইকোর্টের এজলাসে দাঁড়িয়ে উপেনবাবু জানিয়ে দেন, তাঁর কথিত রঞ্জন‌ই আসলে চন্দন। চারা ঘোটালা মামলায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে জেলের ঘানি টানিয়ে ছেড়েছেন উপেন বিশ্বাস। বাংলায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেও উপেন বিশ্বাসের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

শোনা যায়, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে চন্দন মন্ডল যে টাকা তুলতেন, তার একটি ভাগ নিজের পকেটে ঢুকিয়ে বাকিটা অন্যদের দিতেন। এই অন্যরা কারা? যারা ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে জেলে, তারাই কি সেই প্রভাবশালী, যাদের কাছে চন্দনের টাকার হিস্যা সময় মতো পৌঁছে যেতো? জেলের বাইরেও কি এমন আরও কেউ কেউ ভাল মানুষের ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে নেই, যারা  ‘সৎ রঞ্জনের’ তোলা টাকায় ভাগ বসাতেন?

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *