'প্রেম' অনুভূতিটাই ভীষণ ভাল, দেশপ্রেমিকরাও প্রেমিক হতে পারে, প্রেমিকরাও 'দেশপ্রেমিক' - nagariknewz.com

‘প্রেম’ অনুভূতিটাই ভীষণ ভাল, দেশপ্রেমিকরাও প্রেমিক হতে পারে, প্রেমিকরাও ‘দেশপ্রেমিক’


প্রেম’ জিনিসটাই এত্ত ভাল যে তাকে ঘৃণা করার কোনও সুযোগ‌ই নেই। লিখলেন ঋতুপর্ণা-

অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যেখানে ভালবাসার থেকে ঘৃণা অনেক সস্তায় বিকোয়। আমাদের ও আমাদের চারপাশের মানুষের সমস্যাটা আসলে কোথায়? প্রেমকে ঘৃণা করে নাকি ঘৃণাকে প্রেম করে?

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন’স  ডে। সেদিনও ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। তখনও এই ভয়ংকর জঙ্গি হামলা হয়নি, সকাল থেকেই শুরু হলো “ভালবাসার আলাদা কোনো দিন হয় নাকি?” আরে বাবা, ভালবাসার আলাদা দিন হয়না সেটা সত্যি, তাহলে ভক্তিরও তো আলাদা দিন হয় না।  তাহলে সরস্বতী পুজোর জন্য বসন্ত পঞ্চমীর দিকে কেনো তাকিয়ে থাকি? স্বাধীন দেশে ১৫ই আগস্টের আলাদা কি মূল্য আছে? বলে দেখুন। উত্তর আসবে “দুটো আলাদা বিষয়। আজকাল  আদিখ্যেতা যেন বাড়াবাড়ি রকমের হচ্ছে”। জবাব দিতে গিয়েও থেমে যাই, প্রেমিক প্রেমিকা আলাদা করে দেখা করলে, ভালোবাসলে বাড়াবাড়ি!  হলুদ শাড়ি পরে কিংবা পাঞ্জাবি পরে একটি বিশেষ দিনে কার‌ও বুকে ঝড় তোলাটা বাড়াবাড়ি! আর সারাবছর ‘কোরাপ্টেড’ থেকে সারাদিন জয় হিন্দ, জয় হিন্দ করাটা বাড়াবাড়ি নয়?

১৪ ফেব্রুয়ারি এলে একদল বলতে শুরু করবে, “আজ ভগৎ সিং এর ফাঁসির দিন। সবাই সেটা ভুলে নেকামো করতে লেগেছে।” যদিও এটা একদম ভুলভাল তথ্য। তাদের বলি, ভাই বাকি দিনগুলো কোথায় থাকিস? বাকি সময় কোথায় থাকে তোদের এই দেশপ্রেম। খুব চিন্তা হয় এদের নিয়ে। ফুলশয্যার রাতে এরা, “ভারত মাতা কি জয়” বলে গুগল খুলে বসে না তো? আজকে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে দেখে সারারাত নীরবতা পালন করে না তো?

২০১৯- এর ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সারা পৃথিবী দেখল ভালোবাসার দিনে ঘৃণার আস্ফালন।  বেছে নেওয়া হলো এই দিনটাকেই। এটা কি উপরে উল্লিখিত মানুষগুলোর বৃহৎ সংস্করণ নয়? উপরের মানুষগুলোর প্রতিক্রিয়ার বৃহৎ সংস্করণ নয়? কিন্তু তাতে উপরে উল্লেখ করা মানুষগুলোর জীবনে কোথাও যেনো স্বস্তি এনে দিলো। রাত থেকেই শুরু হলো কুমিরের কান্না। যেটা সকাল থেকে বারবার বলতে চেয়েছে সেটা প্রমাণ করার অস্ত্র পেয়ে গেলো, ‘এটা ভালোবাসার দিন নয়, এটা একটা কালো দিন’ ইত্যাদি, ইত্যাদি।  সত্যিই সেদিন একটা কালো দিন ছিল। কিন্তু দুটোকে মিলিয়ে দেওয়ার গুরুত্ব কোথায় এখনও মাথায় ঢুকলো না।

আসলে ভালোবাসতে দম লাগে। অদ্ভুত এই সমাজে আমরা যদি কাউকে বলি, “আমি তাকে ভালোবাসি ” লোকজন হাঁ হাঁ করে আসবে। আমি যদি বলি, “আমার তাকে সহ্য হয় না”। লোকজন?  নরম সুরে, “ও আচ্ছা! কেনো?” বলি ভাই বোনেরা ভালো না বাসতে পারেন চুপ থাকুন না…. দেশপ্রেম দেখাতে চান, তাই দেখান না। দুটোকে মেলাচ্ছেন কেনো? দেশপ্রেম দিয়ে কি সংসার বাঁধা যায়? নাকি ভালবাসার দিন না পাললে সব আতঙ্কবাদীরা, মৌলবাদীরা দেশভক্ত হয়ে উঠবে?

সবশেষে এটাই বলার, ভোটের রাজনীতি বড় বালাই। “রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়” তারচেয়ে বরং আসুন আমরা উলুখাগড়ারা এক হই, ভালোবেসে হাতে হাত দিয়ে আরও শক্ত হয়ে থাকি। তাহলে অন্তত বোরের চাল হওয়া থেকে কে বলতে পারে বেঁচেও যেতে পারি। আরেকটা কথা, দেশকে প্রেম করার পরেও জমিয়ে প্রেম করা যায়। দেশপ্রেমিকরাও প্রেম করেছেন। ইতিহাসের পাতা একটু উলটে দেখুন, আপনার মনোভাব পাল্টে যেতেও পারে। সীমান্তে বাচ্চা বাচ্চা যে জ‌ওয়ানেরা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দেশকে রক্ষা করে, তাদের‌ও ঘরে ব‌উ আছে, গ্রামে প্রেমিকা আছে। ভালোবাসার বিশেষ দিনটিতে সিয়াচিনের ‘আইস চেম্বারে’ পরিণত ব্যাঙ্কারে বসে শত্রুর দিকে নজর রাখতে রাখতেও মনের মানুষটির কথা যে তাদের মনে পড়ে না, তা কে বলতে পারে। ‘প্রেম’ জিনিসটাই এত্ত ভাল যে তাকে ঘৃণা করার কোনও সুযোগ‌ই নেই।

Feature image is representational. Image credit- Berkeley.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *