ঋণের বোঝায় নাক পর্যন্ত ডুবতে বসেছে দেশ। বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবহারে কোপ। পাকিস্তানে মন্ত্রীদের মাথা ঠিক না থাকাই স্বাভাবিক।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বৈদেশিক ঋণের বোঝায় ডুবতে বসা পাকিস্তানের মন্ত্রীদের মাথা ঠিক নেই। বিদ্যুত খাতে খরচ বাঁচাতে রাত আটটার মধ্যেই দেশের সমস্ত দোকান-বাজার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার। বিয়ের অনুষ্ঠানও রাত দশটার মধ্যে সেরে ফেলতে বলা হয়েছে। যদিও রাত আটটায় বাজার-হাটে ঝাঁপ ফেলার যে কারণ দেখিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা মহম্মদ আসিফ, তাতে সবাই টাস্কি খেয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ভরা সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রীসাহেব বলেন, “দেশের যে সব জায়গায় রাত আটটার পর দোকান-বাজার বন্ধ হয়ে যায়, সেই সব জায়গায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। অতএব দেশের সবখানেই এই নিয়ম লাগু হওয়া চাই।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য পাকিস্তান জুড়ে ভাইরাল। পাকিস্তানের অধিকাংশ নাগরিকেরই জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে মাথাব্যথা নেই। বরং কয়েক ডজন সন্তানের জন্ম দেওয়া সওয়াবের কাজ বলেই মনে করে অসংখ্য পাকিস্তানি পুরুষ। এ হেন দেশে ঠিক কোন গবেষণার ফল থেকে শাহবাজ সরকারের মন্ত্রী খোয়াজা মহম্মদ আসিফ এই সিদ্ধান্তে আসলেন, তা জানতে চাইছেন পাকিস্তানের নেটিজেনরা। আসিফের বক্তব্যের ভিডিও নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছেই। এমন উদ্ভট মন্তব্যের জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে ট্রোল করতে ছাড়ছেন না কেউই। অনেকে বলছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের এই দাওয়াই আবিষ্কারের জন্য আসিফকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হোক। কেউ কেউ আবার রসিকতা করে বলছেন, দোকান-বাজার বন্ধ করে মানুষ রাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে গেলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কাই বরং বেশি।
ঋণে ডুবতে বসেছে পাকিস্তান
রসিকতার আড়ালে সরকারি নির্দেশের আসল কারণটি বুঝতে অবশ্য দেরি হচ্ছে না পাকিস্তানিদের। দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। বৈদেশিক ঋণের পাঁকে পাকিস্তানের গলা পর্যন্ত ডুবে গেছে। এখন নাক বরাবর আসতে যতটুকু সময় বাকি। পাকিস্তান সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০.৫ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানি কারেন্সিতে যা ২৪৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিপজ্জনকভাবে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। শেষ তিন মাসে পাকিস্তানের ঘাড়ে চেপেছে ৮১৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ। যা পাকিস্তানি মুদ্রায় ১৮৫ বিলিয়ন ডলারের সমান।
ব্যয় সংকোচনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে কোপ
এইভাবে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকলে দেশের শ্রীলঙ্কা হতে বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করছেন পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদেরা। এই পরিস্থিতিতে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। খরচ বাঁচাতে বিদ্যুত, গ্যাসের মতো অপরিহার্য দৈনন্দিন পরিষেবাতেও ব্যাপক কাটছাঁট করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রাত আটটার মধ্যে দেশের সমস্ত মল, শোরুম, বাজার ও দোকান বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে রাত ১০টা পর্যন্ত। বেশি বিদ্যুত খরচ হয় এমন ধরণের ফ্যান ও এসির উৎপাদন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। একমাত্র বিদ্যুত সাশ্রয়ী এলইডি বাতি জ্বালানোরও নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
ক্যাবিনেটের বৈঠকও সূর্যের আলোতে
সরকারি দফতর, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও বিদ্যুত সাশ্রয় করতে বলা হয়েছে। যেই কাজ ঘরে বসেই করে ফেলা সম্ভব, সেই কাজ অফিসে না এসে বাড়িতেই সেরে ফেলতে সরকারি কর্মচারীদের উপর নির্দেশ এসেছে। অফিসগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ঘরে কৃত্রিম আলোর মধ্যে না করে খোলা জায়গায় সূর্যের আলোর নিচে করতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এলপিজি গ্যাসের সরবরাহ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এমনকি গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পর্যন্ত বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানো হয় নি। বৈঠকটি সূর্যের আলোয় হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা মহম্মদ আসিফ। এইভাবে জীবনযাত্রার ধরণ বদলে দিতে পারলে বছরে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পাকিস্তানি মুদ্রায় ৬০ বিলিয়ন টাকা, সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে সরকার। সরকারের কৃচ্ছতা অভিযানের ঠ্যালায় পাকিস্তানের জনগণ রান্না করার গ্যাসও পাচ্ছে না। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে মানুষ বিপজ্জনকভাবে বেলুন বা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে গ্যাস ভরে রাখছে, সামাজিক মাধ্যমে এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই যখন দেশের পরিস্থিতি, তখন পাকিস্তানের মন্ত্রীদের মাথা ঠিক থাকে কীভাবে?
Feature Image is representational and collected from Dawn.