আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মসজিদকে বলেন ‘আল্লাহর ঘর’। আল্লাহর ঘরে প্রার্থনা করার সময় পাকিস্তানের পেশোয়ারে বোমা বিস্ফোরণে মৃত কমপক্ষে ৫৬ জন। আহত দেড় শতাধিক। আহতদের মধ্যে অনেকরই অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
সোমবার দুপুরে পেশোয়ারের পুলিশ লাইন এলাকার একটি মসজিদে ইবাদতকারীরা যখন যোহরের নামাজ আদায় করছিলেন, ঠিক সেই সময়ই দুই আত্মঘাতী জঙ্গি প্রার্থনাস্থলে ঢুকে পড়ে। নামাজ শুরু হতেই দেহে লুকিয়ে রাখা বোমায় বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। স্থানীয় পুলিশ বলছে, ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা বেজে ৪০ মিনিট। মুহূর্তের মধ্যে প্রচন্ড বিস্ফোরণে গোটা মসজিদ চত্বর কেঁপে ওঠে। আলোর তীব্র ঝলকানির পর পুরো এলাকা কালো ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে। আহতদের আর্তনাদে প্রার্থনাস্থল দোজখের রূপ নেয়।
ঘটনার সময় মসজিদটিতে আড়াইশোর বেশি মানুষ ছিলেন। দুই আত্মঘাতী বোমারু নামাজ শুরু হওয়ার অনেকটা আগেই মসজিদে ঢুকেছিল বলে পেশোয়ার পুলিশের অনুমান। তাই নামাজের প্রথম সারিতেই তারা জায়গা করে নিতে পারে। বিস্ফোরণের সাথে সাথেই দুই জঙ্গির দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বিস্ফোরণ এতটাই জোরালো ছিল যে মসজিদের একাংশ ধ্বসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায় পুলিশ ও দমকলের। আহতদের পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নামাজের সময় মসজিদে হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা পাকিস্তানে নতুন কোনও ঘটনা নয়। ২০২২-এর ৫ মার্চ এই পেশোয়ার শহরেরই কিসসা খাওয়ানি বাজারের একটি শিয়া মসজিদে নামাজের সময় একই রকমের আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ৬২ জনের। বছর ঘোরার আগেই পেশোয়ারের মসজিদে ফের জঙ্গি হামলায় গণমৃত্যু প্রমাণ করে দিল, নামাজিদের পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে বারে বারে ব্যর্থ পাকিস্তান সরকার। যদিও মসজিদগুলিতে জঙ্গি হামলা ঠেকাতে প্রবেশপথে পুলিশ বসিয়ে রাখা হয়। সিসি ক্যামেরার নজরদারিও থাকে। তারপরেও কীভাবে মসজিদের ভেতরে আত্মঘাতী জঙ্গিরা ঢুকে পড়ে, এই প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তানের নাগরিক সমাজ।
পুলিশ লাইন এলাকাতেই পেশোয়ার পুলিশের সদর দফতর। পাশাপাশি রয়েছে গোয়েন্দা দফতর ও কাউন্টার টেরোরিজম ব্যুরোর আঞ্চলিক সদর দফতরও। কিছুটা দূরেই প্রাদেশিক সচিবালয়। স্বাভাবিক ভাবেই ২৪ ঘন্টা কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকে এলাকাটি। তারপরেও নিরাপত্তা কর্মীদের নজর এড়িয়ে পুলিশ লাইন এলাকার মসজিদে কীভাবে আত্মঘাতী দুই জঙ্গি বিস্ফোরক সহ ঢুকে পড়ল? এই প্রশ্ন উঠেছে পাকিস্তানের মিডিয়ায়। ঘটনাটিকে দেশের জঙ্গি মোকাবিলায় নিয়োজিত এজেন্সি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির শোচনীয় ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল।
তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কট ও খাদ্যাভাবে এমনিতেই দিশেহারা পাকিস্তান। তার উপর জঙ্গি হামলা। বালোচদের বিদ্রোহ ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে তেহরিক-ই-তালিবানের ক্রমবর্ধমান উৎপাত। সোমবার পেশোয়ারে মসজিদে হামলার ঘটনাটা কারা ঘটিয়েছে, সেই বিষয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী ঘটনাটির দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় নি। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বিস্ফোরণে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। খবর পেয়েই ইসলামাবাদ থেকে পেশোয়ারে ছুটে গিয়েছেন শাহবাজ শরিফ।
পেশোয়ারে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার পর শাহবাজ শরিফের সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে দেরি করে নি বিরোধীরা। সব থেকে বেশি সরব প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ট্যুইট করেছেন ইমরান। বিস্ফোরণে আহতদের রক্ত দিতে এগিয়ে আসতে দলের সদস্যদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান। গোয়েন্দা ও পুলিশ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে না পারলে দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ দমন করা যাবে না বলে জানিয়েছেন ইমরান। যদিও ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসে ইমরান নিজেও জঙ্গি দমনে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন।
Feature Image Credit – Dawn.