মা হারালেন মোদী। শুক্রবার শেষ রাত ৩টা বেজে ৩০ মিনিটে আমেদাবাদের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হীরাবেন মোদী। হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ায় মঙ্গলবার হীরাবেনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯২৩ সালের ১৮ জুন তদানীন্তন বরোদা রাজ্যের মেহসানা জেলার ভাদনগরে হীরাবেন মোদীর জন্ম। খুব অল্প বয়সেই দামোদরদাস মূলচাঁদ মোদীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হীরাবেনের। দামোদরদাস ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। চায়ের দোকান করে সংসার চালাতেন তিনি। দামোদরদাস-হীরাবেনের পাঁচ পুত্র, এক কন্যা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়। জীবনের শততম বর্ষ পূর্ণ করার আগেই লোকান্তরিত হলেন হীরাবেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন মা অন্ত প্রাণ। মা-ই ছিলেন মোদীর অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস।
মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে শুনেই সব কাজ ফেলে আহমেদাবাদে ছুটে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেখা করেছিলেন মায়ের সঙ্গে। সেটাই ছিল মায়ে-ছেলেতে শেষ সাক্ষাৎ। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে গান্ধীনগর ছেড়ে দিল্লিতে আসার পরে শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে মায়ের সঙ্গে দেখা করতেন মোদী। মায়ের পায়ের কাছে বসতেন। মায়ের আশীর্বাদ নিতেন। মায়ের প্রয়াণের পর প্রধানমন্ত্রী যে ট্যুইট করেছেন, তাতেই বোঝা যায় কী চোখে গর্ভধারিণীকে দেখতেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “সুন্দর একটি শতাব্দী শেষে ঈশ্বরের চরণে বিশ্রাম নিতে গিয়েছেন মা। মায়ের মধ্যে সর্বদাই ত্রিমূর্তি দর্শন করেছি আমি। যাঁর মধ্যে ছিল একজন সাধুর জীবনযাত্রা। একজন কর্মযোগীর উপলব্ধি এবং মূল্যবোধের প্রতি দায়বদ্ধতা। এই ভাবেই জীবন কাটিয়েছেন তিনি।” আরেকটি ট্যুইটে মোদী লিখেছেন, “শততম জন্মদিনে যখন মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন, কাজ করো বুদ্ধি দিয়ে আর জীবনযাপন করো শুদ্ধভাবে।”
হীরাবেন মোদী ছিলেন চিরন্তন ভারতীয় জননী সত্ত্বার প্রতীক। কঠোর পরিশ্রমী। শুদ্ধ, সৎ এবং অনাড়ম্বর জীবন যাপনে বিশ্বাসী। স্বামী ছিলেন অতি সাধারণ ব্যবসায়ী। কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের বড় করে তুলেছেন হীরাবেন। ছিলেন ঈশ্বরে সমর্পিত এবং সাহসিনীও। ছেলেমেয়েদেরও জীবনে সৎ, নির্লোভ ও নিরহঙ্কারি থাকার শিক্ষা দিয়েছেন হীরাবেন। তৃতীয় সন্তান আপন কর্মগুণে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বাকি ছেলেমেয়েরা কেউ চাকরি করেছেন কেউ ব্যবসা করেন। সবাই সৎভাবে খেটে খান। ভায়ের ক্ষমতা জাহির করে পরের সম্পদ হাতিয়ে বেড়ান না।
ছেলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর হীরাবেন বলেছিলেন, ‘কখনও ঘুষ খেয়ো না বাবা।’ মায়ের নির্দেশ গুরুবাক্য। ক্ষমতায় বসে মায়ের কথা ভোলেন নি মোদী। তাই তো দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হীরাবেনের ছেলে বলতে পারেন, “না খাউঙ্গা। না খানে দুঙ্গা।” এই দেশে মায়েরাই তো মানুষ গড়ার কারিগর। মোদীকে গড়ার পেছনেও ছিলেন মা হীরাবেন।
Feature Image- Collected.