সব রাজ্য তথ্য দিচ্ছে, দিচ্ছে না শুধু বাংলা- অভিযোগ কেন্দ্রের
ডেস্ক রিপোর্ট: ডেঙ্গু নিয়ে লুকোছাপা করছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার কলকাতায় এমনই অভিযোগ করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডঃ ভারতী প্রবীণ পাওয়ার। ডেঙ্গুর সংক্রমণ যখন রাজ্য জুড়েই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, তখনই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগের তিরে বিদ্ধ হল নবান্ন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ- ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে চেয়েও পাচ্ছেন না তাঁরা।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছেন ভারতী প্রবীণ পাওয়ার। কলকাতায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ে প্রতিনিয়ত রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সব রাজ্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলেও বাংলা করছে না।” কতজন ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়েছে। পজিটিভি রেট কত। মৃত্যুর সংখ্যা কয়টি। এই সব নিয়ে সর্বশেষ তথ্য নবান্নের কাছে জানতে চেয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে সাড়া মিলছে না বলে অভিযোগ কেন্দ্রের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে কেন্দ্র ও রাজ্য একযোগে কাজ করতে হবে। তাই ডেঙ্গু সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত রাজ্যগুলির।
সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে
ডেঙ্গু নিয়ে রাজ্য সরকার খুলে কিছু না বললেও পরিস্থিতি যে উদ্বিগ্ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট, প্রতিদিনই তার ইঙ্গিত মিলছে সংবাদ মাধ্যমে। সংক্রমণ এবং মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিরোধীরা। রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘মহামারি’ বলে দাবি করে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ডেঙ্গু মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবীয়কে চিঠিও পাঠিয়েছেন শুভেন্দু।
রাজ্যের তরফে ব্যর্থতার অভিযোগ ঝেড়ে ফেলা হলেও সংক্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে নবান্নের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ নতুন নয়। কোভিড পরিস্থিতিতেও প্রথম দিকে রাজ্যের বিরুদ্ধে রোগী মৃত্যুর কথা চেপে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো নয়। শীত পড়লেই ডেঙ্গু পালাবে।” অথচ বৃহস্পতিবারও কলকাতায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪ বছরের এক কিশোরীর মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। একই দিনে হুগলির উত্তরপাড়া পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভদ্রকালী এলাকায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে স্বপন ঘোষ নামে ৫৩ বছরের এক পৌঢ়ের। শুক্রবার কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে রোহিত দাস নামে বছর তিরিশের এক ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডেঙ্গুর তথ্যে স্বচ্ছতা চান চিকিৎসকেরা
রাজ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কত, তা নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর স্পষ্ট করে কিছু জানাচ্ছে না। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলির দাবি, তারা প্রতি দিনের ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য, ডেঙ্গুতে কোনও রোগীর মৃত্যু হলে সেই রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু নবান্ন সেই সব তথ্য জনগণকে জানাচ্ছে না বলে চিকিৎসক মহলের অভিযোগ। বহু ক্ষেত্রেই বেসরকারি হাসপাতালগুলি থেকে পাঠানো ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য রিভিউ করার নামে পাল্টে দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। এমনই অভিযোগ চিকিৎসকদের একটি অংশের। জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো আটকাতেই ডেঙ্গুর তথ্য নিয়ে এত কড়াকড়ি বলে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি। কিন্তু চিকিৎসকদের বক্তব্য ভিন্ন। তাঁরা মনে করেন, এর ফলে সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছে না মানুষ। জনগণকে সচেতন করে তুলতেই ডেঙ্গু নিয়ে যাবতীয় সরকারি তথ্যে স্বচ্ছতা থাকা জরুরী বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
বিশ্বে বছরে ডেঙ্গুতে মৃত ২১ হাজার
কলকাতায় ডেঙ্গুর পজিটিভিটি রেট ৩৫ শতাংশ! নিঃসন্দেহে চমকে দেওয়ার মতো। হুগলিতে ২৩, জলপাইগুড়িতে ১৮ এবং উত্তর চব্বিশ পরগনাতে ১৪ শতাংশ বলে জানা গেছে। এডিস ইজিপ্টাই মশা ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে। মশক বাহিত ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হুর একটি রিপোর্ট বলছে, এই মুহুর্তে পৃথিবীর ১০০টি দেশের ৩.৬ বিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ডেঙ্গুর ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে। প্রতি বছর বিশ্বে ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হন। এর মধ্যে ১০ কোটি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মারা যান ২১ হাজার। অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের ১২টি রাজ্য থেকে ডেঙ্গুতে ৮০ হাজারের বেশি পজিটিভ কেস ও মোট ৬০টি মৃত্যুর খবর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সার্ভারে নথিভুক্ত হয়েছে। সর্বোচ্চ ২০টি মৃত্যুর তথ্য এসেছে কেরালা থেকে।
Feature Image is representational.