আলিপুরদুয়ার: সরকারকে নাগরিকদের দুয়ারে পৌঁছে দিতে বাইসাইকেলে চাপলেন মহকুমা শাসক। নভেম্বরের এক তারিখ থেকে ফের চালু হয়েছে রাজ্য সরকারের জনপ্রিয় প্রকল্প দুয়ারে সরকার। এবারে দুয়ারে সরকার যথার্থ অর্থেই ঘরের দুয়ারে। অর্থাৎ ‘দুয়ারে মোবাইল ক্যাম্প’-এর মাধ্যমে রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘দুয়ারে মোবাইল ক্যাম্প’ সফল করতেই গাড়ি ছেড়ে বাইসাইকেলে চেপেছেন আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক বিপ্লব সরকার। ডুয়ার্স মানেই নিবিড় অরণ্য আর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দুনিয়া। আলিপুরদুয়ার জেলা জুড়ে অসংখ্য চা বাগান। এখনও বহু চা বাগানে যোগাযোগের তেমন সুবিধে গড়ে ওঠে নি। কিন্তু সরকারকে তো চা শ্রমিকদের মহল্লা আর বনবস্তির বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে যেতে হবে। দুই ধারে চায়ের বাগান। মাঝ বরাবর সরু মাটির পথ। এই পথ ধরে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যেতে সাইকেলের চেয়ে নির্ভরযোগ্য বাহন আর কী হতে পারে।
ছাত্রজীবনে দেদার প্যাডেল মেরেছেন। এখন সরকারি কাজে চার চাকার গাড়ি নিত্যসঙ্গী হলেও সাইকেল চালানোর অভ্যেসটা ছিলোই। তাই মহকুমা শাসক নিজে সাইকেলে চাপলেন। সহকর্মীদেরও বললেন- ঘরের কোনায় পড়ে থাকা সাইকেলটি বের করে চলো যাই নাগরিকদের দুয়ারে। এসডিও বিপ্লব সরকারের সঙ্গী হলেন আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সঞ্জয় প্রধান সহ ব্লকের অন্যান্য আধিকারিক ও কর্মীরা। গত শনিবার ব্লকের বিবেকানন্দ ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত উত্তর জিৎপুর চা বাগান এলাকার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেল প্রশাসনের বাইসাইকেল বাহিনী। যার নেতৃত্ব দিলেন খোদ মহকুমা শাসক।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রশাসনের লোকেরা দেখলেন, এখনও লক্ষ্মীর ভান্ডার, এসটি সার্টিফিকেট সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বহু মানুষ বঞ্চিত। যারা যেই প্রাপ্য প্রকল্প থেকে বঞ্চিত, তাদের হাতে সেই প্রকল্পের ফর্ম তুলে দেন মহকুমা শাসক বিপ্লব সরকার। যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে হাতে হাতেই ফর্ম পূরণ করান ব্লক প্রশাসনের কর্মীরা। তবে বারে বারে দুয়ারে সরকারের শিবির করার পরেও কীভাবে এখনও বহু মানুষ বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত আছে, বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বিপ্লববাবুকেও।
বাইসাইকেলে চেপে গ্রামের পথে পথে এমন সফরে না বেরোলে, মানুষের বহু অভাব-অভিযোগের কথাই যে নজরের বাইরে থেকে যেতো, তা বুঝতে পেরেছেন সরকারি আধিকারিকেরা। অফিসারদের বাড়ির উঠোনে পেয়ে আপ্লুত গ্রামবাসীরাও।