পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘনাচ্ছে, মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়ছে - nagariknewz.com

পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘনাচ্ছে, মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়ছে


সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মে-জুন মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। সরকার চাইলে ভোট এগিয়েও আনতে পারে। এই ব্যাপারে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনও দাম নেই। নবান্নের সিদ্ধান্ত‌ই চূড়ান্ত। গ্রামীণ ভোট যখন‌ই হোক, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বাঙালি রাজনীতি প্রিয় জাতি। তাই বাংলায় সারা বছর‌ই রাজনীতি হয়। সেই রাজনীতির ভাষা কী অনুপম, রোজ‌ই তার প্রমাণ পাচ্ছি আমরা। বাঙালির রাজনীতি শুধু কুকথা আর ভাষা সন্ত্রাসেই সীমাবদ্ধ নয়, হাতাহাতি, লাঠালাঠি, মারামারি এমনকি গুলি-বোমাবাজিও বাঙালির রাজনীতি চর্চায় সহজাত। ভোট এগিয়ে এলে তাই বঙ্গসমাজে হিংসা-উত্তেজনা বাড়ে।‌

রাজনৈতিক দলগুলি যে তলে তলে পঞ্চায়েত ভোটের ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলতে শুরু করে দিয়েছে। দিকে দিকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। বোমার ডিপোর খোঁজ মিলছে। জমিয়ে রাখা বোমায় বিস্ফোরণ ঘটায় বাড়িঘরের চাল উড়ে যাচ্ছে। বোমা বানাতে গিয়ে কারিগরদের হাত-পা উড়ে যাওয়া থেকে প্রাণনাশের খবর‌ও পাওয়া যাচ্ছে। অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষ বুঝতে পারছে, পুলিশ যত বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করছে, তা হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র। সদিচ্ছা থাকলেও পুলিশ কেন রাজনৈতিক হিংসার বীজ গোড়া থেকেই উৎপাটন করতে পারে না, সেই কারণ আমাদের ভালমতোই জানা আছে।

পশ্চিমবঙ্গে ভোট মানেই হিংসা। যেই হেতু গ্রাম‌ই রাজনৈতিক শক্তি ও ক্ষমতার ভিত্তি, তাই গ্রামীণ ভোটকে কেন্দ্র করে শাসক-বিরোধী সব পক্ষই সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে পঞ্চায়েত ভোটে সংঘাতের ঘটনা লোকসভা-বিধানসভা-পুরসভা নির্বাচনের থেকে বেশি ঘটে থাকে বরাবরই। তবে ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা-সন্ত্রাস-অনিয়ম অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। আঠারোর পঞ্চায়েত নির্বাচনের তিক্ত স্মৃতি এখনও মানুষের মন থেকে দূর হয় নি। তাই আর‌ও একটা পঞ্চায়েত ভোটের দিন‌ এগিয়ে আসতেই আতঙ্কে প্রমাদ গুনছে সবাই।

প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা থাকলে রাজনৈতিক হিংসা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু আমাদের রাজ্যে প্রশাসন চলে শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে। শাসকদলের বাসনা যদি হয় বিরোধী শূন্য বোর্ড, তবে ভোটে হিংসা ঠেকায় কে। আমরা তো গত পঞ্চায়েত ভোটে দেখেছি, পুলিশের চোখের সামনে‌ই বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা থেকে বুথ দখল করে ছাপ্পা, সব‌ই ঘটতে পারে। নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত‌ই চূড়ান্ত। কিন্তু তার জন্য কমিশনের মাথায় যিনি বসে থাকেন, তাঁর শিরদাঁড়া দৃঢ় হ‌ওয়া প্রয়োজন। তাই মীরা পান্ডের মতো সৎ ও সাহসী আইএএস-কে একবার‌ই রাজ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। আঠারোর পঞ্চায়েত ভোট ও পরবর্তীতে একাধিক পুর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে জনগণের জানা- রাজ্য নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার কথা ভুলে গিয়ে শাসকদলের সন্ত্রাসের সামনে কীভাবে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করে। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধী শিবির- সবার মনেই সংশয় থাকা স্বাভাবিক।

আঠারোর পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা-সন্ত্রাস ও অনিয়মের মাত্রা এতটাই ব্যাপক ছিল যে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলে তৃণমূলের ‌নেতারা পর্যন্ত লজ্জায় পড়ে যান। তবে রাজনৈতিক নেতাদের লজ্জা বড় সাময়িক। পঞ্চায়েত নির্বাচন যখন দুয়ারে এসে দাঁড়াবে, তখন হয়তো লজ্জাটজ্জা ভুলে ফের স্বমূর্তি ধারণ করবেন তাঁরা। একটাই আশা- ভোটদাতা জনগণ ভোট দিতে না পারার অপমানটা মনে রাখে। আঠারোর পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা-সন্ত্রাসের কারণে গ্রামের মানুষ ভোট দিতে পারেন নি। একুশের লোকসভা নির্বাচনে যেই নির্ভয়ে ভোটদানের সুযোগ পেলেন জনতাজনার্দন, শোধ তুলতে ভোলেন নি। তেইশের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরেও চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন আসবে- পঞ্চায়েত ভোটে যারা কাছা খুলে সন্ত্রাসের পরিকল্পনা নিচ্ছেন, কথাটা মনে রাখলে তাদের‌ই মঙ্গল।

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *