মাশা আমিনির অপমৃত্যু স্ফুলিঙ্গের কাজ করেছে। কিন্তু একটা চূড়ান্ত দমনমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের মনের ভেতরে কতটা অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হলে একটা ঘটনায় তা এমনভাবে ব্লাস্ট করতে পারে? আরও যা লিখলেনউত্তম দেব-
সারা পৃথিবীর মানুষ এতদিনে মাশা আমিনিকে চিনে গিয়েছে। মাশা আমিনি ২২ বছরের হতভাগ্য এক কুর্দ তরুণী। সরকারের ঠিক করে দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ী হিজাব না পরার অপরাধে মাশাকে তেহেরানের রাস্তা থেকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে ইরানের নীতি পুলিশ। গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মাশার মৃত্যু হয়। পথেঘাটে নাগরিকেরা বিশেষত নারীরা ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী বেশভূষা পরে চলাফেরা করছে কিনা, তা দেখার জন্য ইরানে নীতিপুলিশ রয়েছে। নীতিপুলিশের ‘গাইডেন্স প্যাট্রল’ ইরানে নতুন কিছু নয়। ১৯৭৯-তে ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে এর আমদানি। আয়াতুল্লাহ খোমেইনির জামনায় নাগরিকদের বেডরুমে পর্যন্ত ঢুকে নজরদারি চালানোর অধিকার ছিল নীতিপুলিশ বা ধর্মীয় পুলিশের। গত ৪৩ বছরে কত মাশা আমিনি যে ধর্মীয় পুলিশের হাতে নিহত-নিগৃহীত হয়েছে, দুনিয়া তাদের নাম জানে না। কিন্তু বছর বাইশের মাশা মৌলবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে আজ সারা দুনিয়ার কাছে পরিচিত। কারণ, মাশা মরে গিয়ে ইরানের দমনমূলক মৌলবাদী শাসনব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ইসলামিক বিপ্লবের পর এমন জনরোষ দেখে নি ইরান
পুলিশ হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর সাত সপ্তাহ পরেও গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ ইরান সরকার। বিক্ষোভের সামনের সারিতে অকুতোভয় ছাত্র-যুবরা। ধর্মাশ্রিত রাষ্ট্রের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মেয়েরাও দলে দলে রাস্তায়। বিক্ষোভ কার্যত বিদ্রোহের রূপ নিয়েছে এবং সরকারের দমন-পীড়নও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সোমবার ( ২ নভেম্বর, ২০২২) পর্যন্ত ২৮৪ জন নারী-পুরুষ নিহত। মৃতদের ৪৬ জন শিশু! সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, চিনের মতোই ইরানেও সংবাদমাধ্যম ‘রেজিম’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অগ্নিগর্ভ ইরানের ভেতরে ঠিক কী চলছে, তা বাইরে থেকে ঠাহর করা মুশকিল। তবে একটা বিষয় পরিস্কার, ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরানের মৌলবাদী সরকার আগে কখনও এমন জনরোষের সম্মুখীন হয় নি।
মাশার মৃত্যু ক্ষোভের স্তুপে অগ্নিসংযোগ করেছে মাত্র
এমন নয় যে, চলমান বিক্ষোভের জেরেই ইরানে ধর্মকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হবে। কিন্তু ধর্মাশ্রিত অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে ইরানের মধ্যবিত্ত সমাজের বৃহদাংশ যে চরম বিরূপ হয়ে উঠেছে তুমুল বিক্ষোভ তার প্রমাণ। স্ফুলিঙ্গ থেকেই দাবানলের সৃষ্টি হয়। মাশা আমিনির অপমৃত্যু স্ফুলিঙ্গের কাজ করেছে। কিন্তু একটা চূড়ান্ত দমনমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের মনের ভেতরে কতটা অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হলে একটা ঘটনায় তা এমনভাবে ব্লাস্ট করতে পারে? পাঁচটা আমিনি খুন হয়ে গেলেও পনেরো বছর আগে মানুষ এইভাবে রাস্তায় নামার সাহস দেখাত না। কিন্তু এখন নামছে এবং প্রচন্ড দমন-পীড়নের পরেও ৪৯ দিন ধরে মানুষ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামিক প্রজাতান্ত্রিক ইরানে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা জানেন সেখানে সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কাজটি কতটা কঠিন। আয়াতোল্লা আল খোমেইনির ইসলামিক বিপ্লব ইরানের শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ কোনও দিনই মেনে নেয় নি। ইরানের মানুষ চরিত্রগতভাবে উদার-আধুনিক এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধী। সারা পৃথিবীতে নির্বাসিত ইরানিদের সংখ্যা চল্লিশ লক্ষেরও বেশি, যারা খোমেইনি প্রবর্তিত ইসলামিক শাসন থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন। প্রত্যেক বছর ইউরোপ-আমেরিকায় অভিবাসী ইরানিদের সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক বছরে ইরানের অভ্যন্তরে অনেক সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু সেই সব আন্দোলন ছিল বহরে ছোট এবং মেজাজে ঠান্ডা। তাই দমন করতে বেগ পেতে হয় নি প্রশাসনকে। কিন্তু ইরানের ধর্মাশ্রয়ী অগণতান্ত্রিক সরকারও জানে, দেশের বড় অংশের মানুষ শাসনব্যবস্থায়, সমাজে সংস্কার চাইছে। ধর্মীয় নেতাদের শাসন দমবন্ধ লাগছে মানুষের।
ইরানের মানুষের মনে ক্ষোভ আছে। এবং সেই ক্ষোভের কারণ ইসলামিক শাসন। ইসলামিক বিপ্লবের ৪৩ বছর পর বিক্ষোভে উত্তাল ইরান। নারীরা মাথা থেকে হিজাব ছুঁড়ে ফেলছে। তারা নিজেদের খুশি মতো পোশাক পরার স্বাধীনতা চাইছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গণতন্ত্র দাবি করছে। এই যাত্রায় পুলিশ এবং সরকারের সিক্রেট এজেন্সি যদি নির্মম অত্যাচার চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ছাত্র-যুব-নারীদের ঘরে ঢুকিয়েও দেয়, মানুষের মনের ভেতরে যে দগদগে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা নিরাময় করতে পারবে না। ইরানের সমাজকে আর আগের মতো নিজেদের তাঁবে রাখতে পারছেন না শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা ধর্মীয় নেতারা। মানুষ রাজনৈতিক-সামাজিক সংস্কার চাইছে। এটার মোকাবিলা করতে গিয়ে নাগরিকদের আগের তুলনায় খানিকটা ছাড়ও দিতে বাধ্য হয়েছে মৌলবাদী সরকার। কিন্তু মানুষ অল্পে তুষ্ট থাকবে কেন? এখন একটাই প্রশ্ন- ইরানের এই থিয়োক্রেটিক রেজিমের আয়ু কতদিন?
আলি খামেনির অবর্তমানে কী হবে?
ইসলামিক বিপ্লবের পর ৪৩ বছর অতিক্রান্ত। যে শক্তিশালী গোষ্ঠীটি শাসন ক্ষমতা ধরে রেখেছে, দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ভেতরে অনেক টানাপোড়েন চলছে। গোঁড়া চরমপন্থীদের সঙ্গে মধ্যপন্থীদের দ্বন্দ্বের জেরে শাসনকাঠামো ভেতরে ভেতরে অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ইসলামিক প্রজাতান্ত্রিক ইরানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। ইরান চলে ‘সুপ্রিম লিডার’-এর কথায়। ১৯৮৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ইমাম সৈয়দ রুহুল্লাহ আয়াতুল্লাহ খোমেইনির মৃত্যুর পর থেকে সুপ্রিম লিডারের চেয়ারে সৈয়দ আলি হোসেইনি আয়াতুল্লাহ খামেনি। ইনিই ইরানের দন্ডমুন্ডের কর্তা। তিন বাহিনী তাঁর অধীন।খামেনি একই সঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এবং সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। বারো সদস্যের গার্ডিয়ান কাউন্সিল বা অভিভাবক পরিষদের মাধ্যমে গোটা দেশটাকে চালান সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি। আলি খামেনির বয়স এখন তিরাশি। খামেনি ছিলেন ইসলামি বিপ্লবের দিন থেকে ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেইনির ডান হাত। আয়াতুল্লাহ খোমেইনি কবরে প্রবেশের পর দেশের প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে সুপ্রিম লিডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। খোমেইনির শেষ ইচ্ছেও ছিল তাই।
আয়াতুুল্লাহ খোমেইনির পর বিনা বিড়ম্বনায় আলি খামেনি সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু খামেনির পর কে? বৃদ্ধ খামেনি যে কোনও মুহূর্তে হড়কে যেতে পারেন। আলি খামেনির এন্তেকাল হলে ইরানের শাসনব্যবস্থায় বড় ধরণের শূন্যতার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা। গার্ডিয়ান কাউন্সিলের দ্বাদশ সদস্যের মধ্য থেকে কাউকে খামেনির উত্তরসূরী বাছাইয়ের কাজটি খুব মসৃণ না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। কেননা, এই মুহূর্তে ইরানের রাজনীতিতে আলি খামেনির সমতুল্য দ্বিতীয় কোনও প্রভাবশালী নেতা চোখে পড়ছে না। খামেনির অবর্তমানে সর্বোচ্চ নেতার পদ নিয়ে শিয়া ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে বিবাদ চরমে পৌঁছতে পারে। কে বলতে পারে যে, তা খামেনি পরবর্তী ইরানে ধর্মভিত্তিক কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানকে ত্বরান্বিত করবে না?
রাশিদুন খিলাফতের আগ্রাসন ও পারস্যবাসীর আত্মপরিচয়ের সঙ্কট
ইরানের আগের নাম ছিল পারস্য। পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে পারস্য অন্যতম। জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য প্রাচীন পারস্যের কাছে জগৎ ঋণী। খ্রিস্টিয় সপ্তম শতাব্দীতে ( ৬৩৩ থেকে ৬৫৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ) আরবের মুসলমানরা পারস্য দখল করে গৌরবময় সাসানীয় যুগের অবসান ঘটায়। পারস্যবাসীদের আদি ধর্মের নাম ‘জরাথুস্ত্র’। জরাথুস্ত্র পৃথিবীর প্রাচীন ধর্মগুলির একটি। খ্রিস্টের জন্মের ১,৫০০ থেকে ১,২০০ বছর আগে এর উদ্ভব বলে মনে করা হয়। কোনও কোনও গবেষকের মতে ‘জরাথুস্ত্র’ ধর্মের সূচনা খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ শতাব্দীতে। সপ্তম শতাব্দীতে রাশিদুন খিলাফতের জামানায় আরবের মুসলমানদের হাতে পারস্য পর্যুদস্ত হলে প্রবল নির্যাতনের মুখে অগ্নি উপাসক জরাথুস্ত্রীয়রা নিজভূমি থেকে ধীর ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তরবারির মুখে অধিকাংশই ধর্মান্তরিত হয়। যারা ধর্মত্যাগে রাজি হয় নি, তাদের অনেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসে। পারস্য ইসলাম ধর্মের অধীনে এসেছিল আরবের সুন্নি মুসলমান শাসকদের হাত ধরে। সপ্তম থেকে পনেরোশো শতাব্দী পর্যন্ত ইরানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল সুন্নি মতাবলম্বী। ষোড়শ শতাব্দীতে পারস্যে শিয়া মাজহাবের প্রাধান্য স্থাপিত হয়। সাফাভি রাজবংশের আমলে ষোড়শ শতাব্দীর সূচনাতেই ‘শিয়া ইসলাম’ পারস্যের রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষিত হয়। বর্তমান ইরানে মুসলমান ব্যতীত অন্যান্য ধর্মগোষ্ঠী কার্যত বিলুপ্ত। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ৯০ শতাংশই শিয়া। মাত্র ১০ শতাংশ সুন্নি মুসলমান। সেই সপ্তম শতাব্দীতে বহিরাগত আরবদের হাতে পর্যুদস্ত হওয়ার পর থেকে পারস্যবাসীদের মনে যে আত্মপরিচয়ের সঙ্কটের সূত্রপাত, সেই ধারাবাহিকতা আধুনিক ইরানেও বহমান। পারস্যবাসী চাপের মুখে ধর্মান্তরিত হলেও নিজেদের গৌরবময় অতীত আজও ভুলতে পারে নি। তাই ইউরোপ আমেরিকায় আশ্রিত ‘ইরানিয়ান ডায়াস্পোরা’ প্রবলভাবে আধুনিক, মৌলবাদ বিরোধী এমনকি ধর্মবিমুখ।
ইরানে আধুনিক যুগের সূত্রপাত পাহলভি জামানায়
১৯৩৫ সালে পারস্যের ‘ইরান’ নামকরণ করেন পাহলভি বংশের প্রথম শাসক রেজা শাহ। ইসলামিক বিপ্লবের আগে দীর্ঘ ৭৪ বছর ইরান ছিল ‘পাহলভি’ বংশের নিয়ন্ত্রণে। ১৯২৫ সালে তেহরানে পাহলভি শাসনের সূচনা করেন রেজা শাহ পাহলভি। রেজা শাহকে আধুনিক ইরানের জনক বলা চলে। তিনি ছিলেন ইউরোপের উদার ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত মানুষ। ধর্মীয় শিক্ষাকে ঐচ্ছিক করে দিয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেন রেজা শাহ। দেশ জুড়ে আধুনিক শিক্ষাদানের উপযোগী স্কুল-কলেজ গড়ে তোলেন। ১৯৩৫ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ঘরের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে বলেন শাহ। শিক্ষান্তে নারীরা চাকরি পেতে শুরু করেন। শুধু ধর্মীয় মতেই বিয়ে যথেষ্ট নয়, প্রতিটি বিয়েকে সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশ দেন রেজা শাহ। এমনকি মেয়েদের বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার পর্যন্ত দেন তিনি।
রেজা শাহের পর মসনদে বসেন তাঁর পুত্র মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি। ১৯৬৩ সালে পুরুষদের বহু বিবাহের অধিকার আইন করে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। শাহদের জামানায় ইরান থেকে পর্দাপ্রথা কার্যত বিলুপ্ত হয়। নিজের স্ত্রী-কন্যাকে ইউরোপীয় পোশাক পরিয়ে সর্বসমক্ষে আনতেন রেজা শাহ। ১৯২৮ সালে এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে সম্রাটপত্নী স্কার্ট পরে উপস্থিত হলে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত এক ধর্মীয় নেতা বিষয়টির নিন্দা করেন। রেজা শাহ ওই নেতাকে গ্রেফতার করে তাঁর নিতম্বে বেত মারার আদেশ দেন।
ইরানে ইসলামিক বিপ্লব ও ইতিহাসের পরিহাস
ইরানের শাহরা নিঃসন্দেহে স্বৈরাচারী ছিলেন কিন্তু আধুনিক, উদার এবং সহনশীল জীবনধারার পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছেন। পাহলভি জামানায় ইরানে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ প্রশ্রয় পায় নি। নারীরা আধুনিক শিক্ষা পেয়েছে। জীবনযাপনে স্বাধীনতা ছিল মেয়েদের। গণ অভ্যুত্থানের মুখে মোহম্মদ রেজা শাহ পাহলভি আমেরিকায় পালিয়ে গেলে ১৯৭৯-র ফেব্রুয়ারিতে নির্বাসন কাটিয়ে ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেইনি। এপ্রিলেই ইরানে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়। ডিসেম্বর থেকে পুরোপুরি ধর্মাশ্রিত একপাক্ষিক শাসনব্যবস্থা জারি হয় ইরানে। মহম্মদ রেজা পহলভির ‘সেক্যুলার’ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েছিল বামপন্থীরাও। বিপ্লব সফল হওয়ার পর ক্ষমতা যায় কট্টর ইসলামপন্থীদের হাতে। শেষে খোমেইনির অনুগামীদের হাতে যত্রতত্র গর্দান হারিয়েই দোস্তির মূল্য চোকায় ইরানের বামপন্থীরা।
ইতিহাসের আরও একটা পরিহাস উল্লেখ না করলেই নয়। যে বিপ্লব সফল করতে ইরানের নারীরা পুরুষদের থেকেও বেশি সক্রিয় ছিল, সেই বিপ্লব শেষ পর্যন্ত তাদের অশ্রুপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বীর নারীদের সাহসিকতার অনেক অনেক প্রশংসা করার পর ইসলামের মূল্যবোধ মেনে তাদের ঘরে ঢুকে পড়ার নির্দেশ দেন বিপ্লবের মহানায়ক ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেইনি। ৪৩ বছর পরে ইরানি নারীরা আবার রাস্তায়। ১৯৭৯ সালের এপ্রিলের আগের স্বাধীনতা ফিরে পেতে আরও একটা বিপ্লবের জন্য মরীয়া তারা! ইতিহাসের মতিগতি সত্যিই বিচিত্র।
Feature image is representational. Photo credit- Reuters/ The Guardian/ Ozan Kose/ Getty Images/ WANA.