নিজস্ব সংবাদদাতা: উত্তরবঙ্গে কি ফের বড় ধরণের নাশকতার ছক কষছে জঙ্গিরা? ময়নাগুড়ি শহরের নতুন বাজারে আইইডির ( ইম্প্রোভাইস এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ) মতো মারাত্মক বিস্ফোরক উদ্ধারের পর এই প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। গোপন সূত্রে বিএসএফ-এর কাছে খবর ছিল, ময়নাগুড়ির নতুন বাজার এলাকায় কিছু বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্যের হাতবদল হবে। শুক্রবার দুপুরে নতুন বাজারে যখন সাপ্তাহিক হাট জমে উঠেছে, তখন অত্যন্ত গোপনে সেখানে অভিযান চালায় বিএসএফ-এর ৯৮ ব্যাটেলিয়ন। বাইকে চেপে সাদা পোশাকে বাজারে ঢোকেন বিএসএফের সদস্যরা। তল্লাশি চালানোর সময় বাজার থেকে একটি দাবিদার হীন ব্যাগ উদ্ধার করেন তারা। নিরাপদ স্থানে পালং শাক দিয়ে ঢাকা দেওয়া ব্যাগটি খুলতেই তিনটি ব্যাটারি চালিত আইইডি, দুটি দেশি পাইপগান, ২০০ গ্রাম সালফার ও ১৫০ গ্রাম কার্বাইড পাওয়া যায়।
আইইডি বিস্ফোরক, বোমা তৈরির মশলা ও পাইপগান উদ্ধার হলেও কাউকে হাতেনাতে ধরতে পারে নি বিএসএফ। বিএসএফ-এর তরফ থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই ভরা হাটের মাঝে ব্যাগ রেখে সটকে পরেছে দুষ্কৃতীরা। অতীতে একাধিকবার কেএলও-র নাশকতার সাক্ষী অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলা। বেলাকোবায় ট্রেনে বিস্ফোরণ থেকে জলপাইগুড়ি শহরের বজরাপাড়ায় বিস্ফোরণ সহ একাধিক ঘটনায় নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।বাম আমলে কেএলও-র হাতে রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের ঘটনাও কম ঘটে নি। ময়নাগুড়িতে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় জনগণের মনে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে- তবে কি আবার ডুয়ার্সে সক্রিয় হয়ে উঠছে কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী?
আরও একটি প্রশ্ন পাবলিক তুলতে শুরু করেছে- বিস্ফোরক খুঁজে পেল বিএসএফ, কিন্তু পুলিশ কেন জানতে পারল না? চিকেন নেক করিডোর হওয়ার কারণে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির নজর উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলে। পা বাড়ালেই নেপাল-ভূটান। মাথার উপরে চিন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একাধিক জঙ্গি সংগঠন জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়িকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে সারা বছর কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদেরও নজরে থাকে এই এলাকা। ব্যাটারি চালিত আইইডি দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা ফাটাতে কাজে লাগে। এই ধরণের মারাত্মক বিস্ফোরকের আদান-প্রদান হচ্ছে ময়নাগুড়ির মতো শহরে। পুলিশের নেটওয়ার্ক কেন আগে থেকেই কিছু আন্দাজ করতে পারল না? প্রশ্ন তুলেছে জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক মহল। বিএসএফ-এর অভিযানের ব্যাপারেও কিছুই জানত না জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ। শনিবার উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বিএসএফ। কেন বিএসএফ পুলিশকে আগাম কিছু জানায় নি, এটাও একটা প্রশ্ন। বিএসএফ কর্তৃপক্ষ কি পুলিশের উপর আস্থা রাখতে পারে নি? জেলা পুলিশের সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিএসএফের অভিযানটি হয়তো অত্যন্ত গোপনীয় ছিল। প্রশ্ন উঠেছে- যে কোনও ধরণের নাশকতা রুখতে নজরদারির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কি কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব?
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। রাজনীতির হাওয়া ইতিমধ্যেই বেশ গরম হতে শুরু করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বোমার ভান্ডারের খোঁজ পাচ্ছে পুলিশ। মজুত বোমায় বিস্ফোরণ ঘটে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এমনকি শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। বিরোধীরা এমন প্রশ্ন তুলে বসেছে, ময়নাগুড়িতে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে হাতবদল হচ্ছিল না তো? ঘটনার নেপথ্যে যাই থাকুক, ময়নাগুড়ি শহরের নতুন বাজারে আইইডি বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্কে উত্তরবঙ্গের মানুষ।
Photo Source- BSF.