দেশেে ফিরবেন না। স্পেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন ইরানের বক্সিং ফেডারেশনের প্রধান হোসেইন সুরি।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পুলিশের মারে কুর্দ তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর দুই মাস পরেও বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। হিজাব ঠিকমতো না পরার অভিযোগে মাসাকে তেহরানের রাস্তা থেকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ২২ বছরের মাসার মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ইরান। দেশটির ভেতরের খবর খুব কমই বাইরে আসছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত ৪০০ বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত, যাদের বড় অংশই নারী। এমনকি মৃতদের মধ্যে ৪৬ জন শিশুও আছে। ১৬ হাজারের বেশি জেলে। হিংসায় জড়িত থাকার অপরাধে পাঁচজনকে মৃত্যুদন্ডও দিয়েছে আদালত। বিক্ষোভে মদত দেওয়ার অভিযোগে এবার দেশের দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করল ইরানের মৌলবাদী সরকার।
হেনগামেহ গাজিয়ানি ও কাতাইয়ুন রিয়াহি ইরানি সিনেমার দুই বিখ্যাত অভিনেত্রী। তাঁদের অভিনয়ের খ্যাতি আন্তর্জাতিক স্তরেও ছড়িয়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার জয় করেছেন দু’জনেই। রবিবার তাঁদের গ্রেফতারের খবর স্বীকার করেছে দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা। হেমগামেহ ও কাতাইয়ুনের অপরাধ- তাঁরা মাথায় হিজাব ছাড়াই রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। গ্রেফতারের কারণ উল্লেখ করে ইরনা জানিয়েছে, এই দুই অভিনেত্রী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা শাসিত তেহেরানের মৌলবাদী রেজিম এখন মেয়েদের প্রকাশ্যে হিজাব না পরাটাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবেই দেখছে।
মাসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ইরান জুড়ে হিজাব বিরোধী যে বিক্ষোভ চলছে, তাতে সমর্থন জানিয়ে একাধিকবার সোচ্চার হয়েছেন হেনগামেহ গাজিয়ানি ও কাতাইয়ুন রিয়াহি। স্বাভাবিকভাবেই কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়েছেন এই দুই শিল্পী। তাঁদের উপর যে সরকারের দমন-পীড়ন নেমে আসতে পারে, এই ব্যাপারে যথেষ্টই সচেতন ছিলেন গাজিয়ানি ও কাতাইয়ুন। গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যমে হেনগামেহ গাজিয়ানি লিখেছেন- “যাই ঘটুক না কেন, সবাই জেনে রেখো, বরাবরের মতোই আমি ইরানের জনগণের পাশে থাকব। হয়তো এটাই আমার শেষ পোস্ট।”
ইরানের শিল্প-সাহিত্য-বিনোদন এবং ক্রীড়া, প্রতিটি ক্ষেত্রের কৃতী ও বিখ্যাতরা ধর্মাশ্রিত সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। হাজার দমনমূলক ব্যবস্থা নিয়েও ইসলামিক সরকার জনগণের মুখ বন্ধ রাখতে পারছে না। এমনকি বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরেও ইরান সরকারের মুখ পুড়েছে। কাতার বিশ্বকাপে অংশ নিতে আসা ইরান ফুটবল দলের অধিনায়ক এহসান হাজসাফি শাস্তির তোয়াক্কা না করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সামনে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুলেছেন। এহসান হাজসাফি বলেছেন, “আমাদের মানতে হবে যে, দেশের পরিস্থিতি ঠিক নেই। আমাদের জনগণ ভাল নেই।” একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে এখন স্পেনে আছেন ইরানের বক্সাররা। বক্সিং ফেডারেশনের প্রধান হোসেইন সুরি জানিয়ে দিয়েছেন, “টুর্নামেন্ট শেষ হলেও আমি আর দেশে ফিরছি না।” স্বদেশে সরকারের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে স্পেনে অথবা ইউরোপের অন্য কোনও দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেবেন সুরি।
দু’দিন আগেই ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ও ইরানকে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করার হোতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনির পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। মাসা আমিনির মৃত্যুর দুই মাস পরেও নির্বিচারে গুলি ও জেলে ভরেও গণ বিক্ষোভ দমানো যাচ্ছে না ইরানে। হিজাব বিরোধী বিক্ষোভ এখন মৌলবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে অসন্তোষে পরিণত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল মনে করছে। যদিও তেহেরানের অভিযোগ, সরকার বিরোধী দাঙ্গার পেছনে আমেরিকা ও পশ্চিমী শক্তির মদত রয়েছে।
Feature image is representational.