অরুণকুমার : ভারত ও নেপাল দুই পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ সুদূর অতীত থেকে পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এই দুই দেশের অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে সাইকেল পর্যটন। যা আগামী দিনে ভারত-নেপাল সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে তুলবে বলেই মনে করছেন দু’দেশের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। ভারত-নেপাল পর্যটন যৌথ পর্যটন শিল্পে আরও নতুন দিগন্ত খুলে যাক- এই বার্তা নিয়েই গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে সাইকেলে চড়ে নেপাল থেকে ভারতে এসেছে ১৫ জনের একটি দল।
শিলিগুড়ি সিটি সেন্টারে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে যোগ দিতে এই সাইকেল র্যালি নেপালের বীরতামোড় থেকে রওনা দেয়। এরপর পশুপতি ফটক পার হয়ে মিরিকে পৌঁছান সাইকেল অভিযাত্রীরা। মিরিক থেকে গাড়িধুরা, খাপরাইল এবং মাটিগাড়া হয়ে সিটি সেন্টারে পৌঁছে যান তাঁরা। ১৫ জনের নেপালি সাইকেল অভিযাত্রী দলের প্রধান ছিলেন আকাশ শ্রেষ্ঠা। সেখানে এই সাইকেল র্যালির দলকে সংবর্ধনা দেন বিশ্ব পর্যটন দিবসের আয়োজক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অফ কনজারভেশন অফ ট্যুরিজম এর কর্তারা। একদিন শিলিগুড়িতে অতিবাহিত করে তারা ফিরে যান নেপালে।
নেপালের সাইকেল অভিযাত্রী দলের সদস্যরা শিলিগুড়িতে এসে সংবর্ধিত হতে পেরে আনন্দে আপ্লুত । তারা মনে করেন, আগামী দিনে পর্যটনের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাতে চলেছে এই সাইকেল পর্যটন। দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে বিকাশের লক্ষ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। সাইকেল একটি পরিবেশবান্ধব যান। সাইকেল পর্যটনের মধ্যে দিয়ে পর্যটকদের শারীরিক, মানসিক উৎকর্ষতা সম্ভব। এর ফলে পরিবেশ সচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন আকাশ শ্রেষ্ঠা। নেপাল-ভারত সাইকেল ভ্রমণ আগামী দিনে দু’দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন নিশা দেখাতে ও অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন আকাশ।
আকাশ শ্রেষ্ঠা একজন সাইক্লিস্ট, এক যুগ ধরে সাইকেল পরিভ্রমণ করেছেন নেপালের বিভিন্ন জায়গায়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদেরকে তিনি সাইকেলের মাধ্যমে সে দেশের ধর্মীয় তীর্থস্থান থেকে আরম্ভ করে, জঙ্গল নদী পাহাড় প্রভৃতি জায়গাকে পরিচিত করিয়েছেন। তাঁর নিজস্ব সাইকেল রয়েছে প্রায় পঞ্চাশটির ওপর। নেপালের বীরতা মোড়ে তাঁর আস্তানা। সেখান থেকে তিনি সালাকপুর, কন্যাম, বাহন ডাঙ্গী এবং পোখরা সহ আরো অনেক জায়গা সাইকেল পর্যটনের মাধ্যমে বিদেশি পর্যটকদের দর্শন করিয়েছেন। এই মুহূর্তে নেপালে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সে সাইকেল পর্যটন। যুবক-যুবতীরা পর্যটনের মাধ্যমে আর্থিক স্বনির্ভরতা লাভ করেছেন গাইড হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির সাইকেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা উঁচু-নিচু রাস্তা সহ কাঁচা-পাকা পথ দিয়ে সহজ ভাবে চলাফেরা করতে পারে। এই সাইকেল গুলির দাম সে দেশের টাকায় কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার । পর্যটন মরসুম ছাড়াও অন্যান্য সময় প্রচুর মানুষ আসেন সাইকেলে করে ভ্রমণ করার জন্য। এখন সাইকেল পর্যটনের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতকেও জুড়তে চান আকাশ শ্রেষ্ঠা। এই সাইকেল পর্যটন উভয় দেশের নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদেরকে আর্থিক স্বনির্ভরতার পথ যেমন দেখাবে, তেমনি অপরদিকে স্বাস্থ্য পর্যটনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। উভয় দেশের প্রকৃতি মানুষ সংস্কৃতি সম্পর্কে একে অপরকে জানতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন আকাশ।
সাইকেল পর্যটনের একটাই সবথেকে বড় সুবিধা হল, পরিবেশবান্ধব এই দুই চাকার যানে চড়ে দুর্গম প্রকৃতির সঙ্গে সহজে একাত্ম হওয়া যায়। ভিন্ন সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতেও সাইকেল পর্যটনের জুড়ি নেই। হিমালয়কন্যা নেপাল সারা বিশ্বের মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আর বিশাল ভারত বৈচিত্র্যে ভরপুর। দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপাল যৌথভাবে সাইকেল পর্যটন শুরু করলে দুই দেশের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার নতুন একটি সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে যোগদান শেষে নেপালের ১৫ জনের সাইকেল দলটি শিলিগুড়ি শহর পরিক্রমা করে হিলকার্ট রোড হয়ে বাগডোগরা, হাতিঘিসা, নকশালবাড়ি এবং পানিট্যাংকি হয়ে নেপালের কাঁকরভিটায় ফিরে যায়।
Feature image is representational and collected from Facebook. Others images-Reporter.