মালবাজার : ডুয়ার্স জুড়ে বিষাদে ভারাক্রান্ত বিজয়া। কোথাও আর কোনও আনন্দের ছিঁটেফোঁটাও নেই। বুধবার রাতে ভাসানের অনুষ্ঠানের সময়, মাল নদীতে হড়পা বানে মৃত এখনও পর্যন্ত আটজন। নিখোঁজের সংখ্যা ঠিক কত, প্রশাসনের কাছেও তার কোনও সঠিক হিসেব নেই। যারা বানে ভেসে গেছেন, তাদেরও চরম পরিণতিই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিসর্জন চলা কালে মাল নদীতে মর্মান্তিক বিপর্যয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যেই প্রশাসনের দিকে গাফিলতির আঙুল উঠতে শুরু করেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ডুয়ার্সের নদীগুলি হড়পা বান প্রবণ। মাত্র ১৪ দিন আগেই মাল নদীতে হড়পা বানে ভেসে গিয়েছিল আস্ত একটি ট্রাক। প্রশ্ন উঠেছে, তারপরেও বিসর্জনের আগে কেন সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিল না প্রশাসন? সিকিম, দার্জিলিং পাহাড় এবং হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস ছিলই। মাল শহর সংলগ্ন মাল নদীতে প্রত্যেক বছর ৭০-৭৫ টি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিসর্জনের অনুষ্ঠানে ভিড় ছিল যথেষ্টই। নদীর মাঝখানে মঞ্চ করা হয়েছিল। অসংখ্য মানুষ নদীর চড়ায় দাঁড়িয়ে বিসর্জন দেখছিলেন। অথচ ভিড় ও বিপর্যয় সামাল দেওয়ার মতো তেমন কোনও ব্যবস্থাই সেখানে ছিল না বলে অভিযোগ। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ হড়পা বান নামে। তার আগে থেকেই মাল নদীতে জল বাড়ছিল। দুর্ঘটনার সময় বিসর্জনস্থলে মাত্র আটজন সিভিল ডিফেন্স কর্মী মোতায়েন ছিলেন। প্রশাসনের তরফে উপযুক্ত সরঞ্জাম ও লোকবল না থাকায় উদ্ধার কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
মাল নদীতে বিসর্জনের ব্যবস্থাপনায় যে গাফিলতি ছিল, সেই খবর পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর কানেও। মর্মান্তিক ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ট্যুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী ট্যুইটারে লেখেন- ” পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় দুর্ঘটনার জেরে আমি ক্ষুব্ধ। দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শোকপ্রকাশ করছি।” বৃহস্পতিবার সকালে আরও একটি ট্যুইট করে মাল নদীতে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার পিছু দুই লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার খরচ বাবদ ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মোদী।
মৃতদের পরিবার ও আহতদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকারও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবার পিছু দুই লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা সাহায্য দেওয়া হবে।
ঘটনায় আর কেউ নিখোঁজ নেই বলে ট্যুইটারে ইতিমধ্যেই দাবি করে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী কীসের ভিত্তিতে এই দাবি করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
Video and photos- Reporter.