তিন বছর ধরে গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা করে বাড়িতে টাকার পাহাড়! জানেই না কলকাতা পুলিশ। পেছনে কারও হাত ছিল?
কলকাতা : শনিবার গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলিতে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এখনও নগদ ১৬ কোটি টাকা উদ্ধার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। একাধিক ব্যাঙ্ক থেকে আটটি টাকা গোনার মেশিন এনে বিকেল পর্যন্ত গণনার কাজ চলেছে। টাকার অঙ্ক আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান। এদিন সকাল থেকেই কলকাতার ছয় জায়গায় হানা দেয় ইডি। গার্ডেনরিচের আস্তাবল গলির যে বাড়ি থেকে ১৬ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরের অন্তর্গত।
এই ঘটনার পর থেকেই ফিরহাদ হাকিমকে একটু নার্ভাস দেখাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী আমির খানের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে ফিরহাদের কোনও রকম যোগসূত্র আছে কিনা, ইডি এখনও তা স্পষ্ট করে নি। কিন্তু শনিবার শহর জুড়ে ছয় জায়গায় ইডির ছাপা মারার ঘটনাকে ভাল চোখে দেখছেন না হাকিম। এই নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “বাংলার ব্যবসাকে ধ্বংস করে দিতেই এই ধরণের অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি। বিনিয়োগকারীরা যাতে এই রাজ্য থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে টাকা ঢালে, সেই লক্ষ্যেই তাঁদের মনে ভীতি সঞ্চার করতে এইভাবে হানাদারি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।” কিন্তু তাঁর বিধানসভা এলাকায় বসবাসকারী ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ১৬ কোটি উদ্ধারের ঘটনায় কী প্রতিক্রিয়া ফিরহাদের? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ” আমার বিধানসভা এলাকায় টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে আমায় জবাবদিহি করতে হবে কেন?”
ঠিক কী কারণে শনিবার কলকাতা জুড়ে ইডির রেইড? সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে লোককে প্রতারণা করার একটি বড় চক্রের সন্ধান পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। অ্যাপের গ্রাহকদের প্রতিদিন তিন-চার হাজার করে টাকা জেতার টোপ দিয়ে এই প্রতারণার জাল বিস্তার করা হয়েছিল। কমিশনের টোপ ঝুলিয়ে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে শেষে তাদের আমানত ঝেঁপে দিত এই প্রতারক চক্র। গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী আমির খান এই প্রতারক চক্রেরই একজন বলে জানা গেছে। আমিরের বাড়ির খাটের নিচে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে থরে থরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল টাকা। এমনকি মাটির হাঁড়ি-পাতিল-কলসির ভেতরেও টাকা খুঁজে পান ইডির আধিকারিকেরা। উদ্ধার হওয়া সব নোট ৫০০ ও ২০০০-এর বলে জানা গেছে।
শনিবার নিউটাউন, পার্ক স্ট্রিট, মোমিনপুর এবং গার্ডেনরিচ অঞ্চলের ছয় জায়গায় অভিযান চালায় ইডি। যেই ব্যবসায়ীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে, আমির খান সহ তারা সকলেই মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণায় জড়িত বলে ইডি সূত্রে জানা গেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯-এর পাশাপাশি প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গ সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই এই প্রতারক চক্রের পিছনে নজরদারি চালাচ্ছিলেন ইডির গোয়েন্দারা।
রাজ্যের বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি অভিযানে নামলে তৃণমূল নেতাদের কেন গাত্রদাহ হচ্ছে? তবে কি উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ টাকার সঙ্গে শাসকদলের নেতাদের কোনও সম্পর্ক আছে? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী নেতারা। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে জেলে যেতেই কলকাতার রাজনৈতিক মহলে ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে গুঞ্জন। এই গুঞ্জনে তিনি যে খানিকটা অস্বস্তিতে তা অস্বীকার করেন নি ফিরহাদও। ঠিক এই রকম পরিস্থিতিতে গার্ডেনরিচে ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ১৬ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনা খুব সঙ্গত কারণেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে রাজ্য রাজনীতিতে। ঘটনার সঙ্গে শাসকদলের সত্যিই কোনও যোগ আছে কিনা, তা সময়ই বলবে। কিন্তু রাজ্যে ফের বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিরোধীরা যে হাতে নতুন অস্ত্র পেল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Photo- Collected from sources.