জলপাইগুড়ির পুরযুদ্ধে একমাত্র নির্দল! একুশে একাই লড়াই জমিয়ে দিয়েছেন নব্যেন্দু - nagariknewz.com

জলপাইগুড়ির পুরযুদ্ধে একমাত্র নির্দল! একুশে একাই লড়াই জমিয়ে দিয়েছেন নব্যেন্দু


পঁচিশ ওয়ার্ডের জলপাইগুড়ি পুরসভায় একমাত্র নির্দল প্রার্থী নব্যেন্দু মৌলিক। একুশে জমিয়ে দিয়েছেন লড়াই। কী চাইছেন? কীভাবে লড়ছেন নির্দল নব্যেন্দু ?বিশেষ প্রতিবেদন-

নির্দলদের বাকিরা যখন মনোনয়ন জমা দেওয়ার রাউন্ডেই লড়াই থেকে ছিটকে গেছেন ছল-বল এবং কৌশলের কাছে হার মেনে, তখন জলপাইগুড়ির পুরযুদ্ধে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে মাঠ কাঁপাচ্ছেন মাত্র একজন‌ই। ২৫ ওয়ার্ডের জলপাইগুড়ি পুরসভায় নির্দল বলতে মাত্র ওই একজন‌ই – নব্যেন্দু মৌলিক।

দল নেই তবে বল আছে যথেষ্টই

বছর সাতাশের সমাজকর্মী। মেধাবী ছাত্র। কিন্তু কলেজের গন্ডি পেরোনোর পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কিম্বা ক্যারিয়ার- দুটি রাস্তার একটিও না মাড়িয়ে সোজা সোস্যাল অ্যাক্টিভিজমে পা বাড়ান নব্যেন্দু।‌ মাঝে অবশ্য কিছুদিন করে নিয়েছেন সাংবাদিকতাও। ভোটের লড়াইয়ে নেমে নির্দল নব্যেন্দুর দাবি-“আমার দল নেই কিন্তু বল আছে। ” অনেক চাপের পরেও মনোনয়ন পর্ব পার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসরে টিকে থেকে নিজের মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় ইতিমধ্যেই দিয়েছেন এই নির্দল প্রার্থী।

সমাজকর্মী নব্যেন্দু মৌলিক। নব্যেন্দুর দাবি-রাজনীতি পাল্টে দেওয়ার রাজনীতি করছেন তিনি।

২৭ তারিখ পুরভোট। এখন রাতদিন জনসংযোগ ব্যস্ত নব্যেন্দু মৌলিক। মানুষের সঙ্গে সংযোগ অবশ্য নব্যেন্দুর কাছে নতুন কোনও অভিজ্ঞতা নয়। রাজ্য স্তরের একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান হবার সুবাদে কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার চষে বেড়াতে হয় তাঁকে। নব্যেন্দুর দাবি-”সারা বছর মানুষের মধ্যেই মিশে থাকি। ” তা মানুষের সঙ্গেই যখন আছেন, সরাসরি রাজনীতিতে নেমে মানুষের সেবা করছেন না কেন এই সমাজসেবক? নব্যেন্দুর জবাব-“রাজনীতি আমার রক্তে। ঠাকুর্দা, বাবা ( নব্যেন্দুর শৈশবেই প্রয়াত ) রাজনীতি করতেন। পিসি রাজনীতি করেন। রাজনীতির ইতিহাস আমার প্রিয় বিষয়। রাজনীতি-সমাজবিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করি। কিন্তু দলসর্বস্ব সঙ্কীর্ণ রাজনীতিকে পছন্দ করি না। রাজনীতি আর দলবাজি এখন সমার্থক হয়ে গেছে। “

রাজনীতি মুক্ত করার রাজনীতি করছেন

নব্যেন্দু মনে করেন, পুরসভা ও পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় সরকার গণতন্ত্রের বুনিয়াদ। কিন্তু রাজনীতির নামে দলবাজি আর দুর্নীতি স্থানীয় সরকারকে অনেকাংশেই অকার্যকর করে তুলেছে। দলসর্বস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে স্থানীয় পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে এবং অভাবী মানুষ এর মাশুল গুনছেন বলে নব্যেন্দু মৌলিকের অভিযোগ। পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলিকে দলীয় রাজনীতি মুক্ত করা আশু প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

নব্যেন্দুর পিসি অনিতা মৌলিক জলপাইগুড়ির পুর রাজনীতির পরিচিত মুখ। দীর্ঘদিন পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্য‌ও ছিলেন অনিতা। এবার ২০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপির প্রার্থী তিনি। এই নিয়ে প্রশ্ন করলে নব্যেন্দুর জবাব-”পিসির রাজনীতি, পিসির লড়াই পিসি তাঁর নিজের মতো করে লড়ছেন। আর মানুষের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আমি আমার মতো করে পালন করার চেষ্টায় আছি। ”

নিজের ওয়ার্ডকে হাতের তালুর মতোই চেনেন

২১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এলাকাগুলি ১৯৯৫ সালে সংযোজিত এলাকা হিসেবে জলপাইগুড়ি পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। নব্যেন্দু মৌলিক মনে করেন, জলপাইগুড়ি পুরসভার অবহেলিত ওয়ার্ডগুলির একটি হল একুশ। এই ওয়ার্ডের বিলপাড়াতেই নব্যেন্দুর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। নির্বাচনী যুদ্ধে নামার বহু আগে থেকেই নিজের ওয়ার্ডকে প্রায় নিজের হাতের তালুর মতোই চেনেন তিনি। সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডের ভেতর দিয়ে বছরভর ওয়ার্ডের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুবাদে আর নতুন করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের মুখ চেনাতে হচ্ছে না নব্যেন্দুকে।

ওয়ার্ডের মানুষের অভাব-অভিযোগ বিস্তর। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে প্রকৃত অভাবীরা সরকারি প্রকল্পগুলির সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ করলেন নব্যেন্দু মৌলিক। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিকদের মনে তাই ক্ষোভ আছে।‌ নব্যেন্দু বলেন, ”পরিকল্পনাহীন উন্নয়নে আমার বিশ্বাস নেই। ভোটে লড়ব- এই রকম একটা মানসিক প্রস্তুতি বহু আগেই নিয়ে রেখেছিলাম। তাই ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকা ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে উন্নয়নের রূপরেখার একটা খসড়া বহু আগেই তৈরি করা হয়ে গিয়েছিল আমার। ” উন্নয়নের বিস্তারিত রূপরেখা নিয়ে ঘরে ঘরে যাওয়া সারা নব্যেন্দুর। তিনি কীভাবে উন্নয়ন করতে চান নাগরিকদের বলছেন। নাগরিকেরা কী কী চাইছেন মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। জিতলে মিলেমিশে ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়ন‌ই লক্ষ্য নব্যেন্দু মৌলিকের।

নকআউট রাউন্ডে জিতবেন তো?

প্রচারে সাড়া পাচ্ছেন কেমন ? নব্যেন্দু জানালেন- ”যা আশা করেছিলাম, তার চেয়েও বেশি। ” নির্দল নব্যেন্দুর প্রচার বলতে ঘরে ঘরে যাওয়া। একবার করে ওয়ার্ডের সব বাড়িতে যাওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই সারা। আর‌‌ও একবার করে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। নব্যেন্দু মৌলিকের প্রতীক আপেল। সামান্য কিছু ফ্লেক্স লাগিয়েছিলেন। যার অধিকাংশই আবার গায়েব করে দেওয়া হয়েছে রাতের অন্ধকারে।

২১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল ছাড়াও বাম ও বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তিন প্রার্থীর সঙ্গেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল নব্যেন্দু মৌলিকের। নব্যেন্দুর স্পষ্ট কথা-”গণতন্ত্রে কেউই শত্রু নয়। সাময়িক প্রতিপক্ষ মাত্র। আমার একটাই লক্ষ্য। অবহেলিত একুশ নম্বরকে মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করা। ”

একুশে একাই লড়াই জমিয়ে দিয়েছেন নব্যেন্দু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিতবেন তো?

প্রবল বাধার মুখেও লড়াইয়ে টিকে থেকে প্রথম রাউন্ডে জিতেছেন নব্যেন্দু মৌলিক। প্রচারেও এগিয়ে। সাড়াও মিলছে যথেষ্টই ভাল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিততে পারবেন ? নির্দল নব্যেন্দুর জবাব- ”রায় দেওয়ার মালিক জনতা জনার্দন। শুধু অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। ”

নিজস্ব ফটো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *