ডেস্ক রিপোর্ট : নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের নিরসনে কেন্দ্রের কোনও সরকারই উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয় নি বলে মনে করে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলার সম্পাদকীয় সন্দর্ভে অভিযোগ করা হয়েছে, পাছে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোয়, এই ভয়েই নেতাজি অন্তর্ধান নিয়ে চুপচাপ মোদী সরকারও। সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে – ” ইতিহাস বলছে, ভারতের স্বাধীনতা ৭৫ বছর পেরোবে। কোনও কেন্দ্রীয় সরকারই নেতাজি রহস্য সমাধানে কড়া পদক্ষেপ নেয় নি। আর পাঁচটা তদন্ত কমিশনের মতোই তিন-তিনটি কমিশন হয়েছে। আর রিপোর্ট হিমঘরে পচেছে। কিছু শব্দবন্ধ কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি করেছে। গুরুত্বপূর্ণ ফাইল প্রকাশ্যে আনার কথা হলেই বলা হয়েছে স্পর্শকাতর। “
উল্লেখ্য, নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করতে নেহেরু জামানায় শাহনেওয়াজ কমিশন। ইন্দিরা জামানায় খোশলা কমিশন এবং অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে এনডিএ জামানায় জাস্টিস মুখার্জি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের কোনও কিনারা হয় নি। শাহনেওয়াজ ও খোসলা কমিশনের রিপোর্টে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর কথা মেনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই দুই কমিশনের রিপোর্টকে মেনে নেন নি অধিকাংশ দেশবাসী, অসংখ্য নেতাজি অনুরাগী , অনেক নেতাজি গবেষক এবং নেতাজি পরিবারের একাধিক সদস্য। একমাত্র মুখার্জি কমিশনই বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর দাবি খারিজ করে দেয়। নেহরু, ইন্দিরা, রাজীব – এই তিন প্রধানমন্ত্রীই বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্বে সরকারি শিলমোহর দিতে উদগ্রীব ছিলেন। পিভি নরসীমা রাওয়ের আমলে এমনকি কেন্দ্রে ইউপিএ’র জামানাতেও একাধিকবার রেনকোজি মন্দিরে রক্ষিত ভস্মাধার দেশে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। যদিও জনগণের বাধায় সেই সব চেষ্টা সফল হয় নি।
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিতে কুন্ঠিত হয় নি। কিন্তু মোদীর আমলেও নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের সমাধানে তেমন কোনও অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কয়েক বছর আগে নেতাজি সম্পর্কিত বেশ কিছু গোপন ফাইল ডিক্লাসিফায়েড করা হলেও তাতে নেতাজি রহস্যের কিনারা হয় নি। এখনও সরকারের হাতে থাকা কিছু ফাইল প্রকাশ্যে আনা হয় নি বলে নেতাজি গবেষক ও অনুরাগীদের অভিযোগ। এই বিষয়টি নিয়েই সাম্প্রতিক সময়ে বারে বারে সরব হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। নেতাজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেও এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার একই অভিযোগ তুলল তৃণমূলের মুখপত্রের সম্পাদকীয়ও। মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, কেন নেতাজি সংক্রান্ত কিছু ফাইল স্পর্শকাতর বলে এড়িয়ে যাচ্ছে সরকার? কিছু ফাইল প্রকাশ্যে এলে নাকি সরকারের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হবে! এমনই কানাঘুষো সাউথ ব্লকের বাতাসে।
যদিও নেতাজি অন্তর্ধানের ৭৭ বছর পর এই সংক্রান্ত কোনও গোপন নথির উন্মোচনে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে – এই যুক্তি অসার বলেই মনে হয় দেশের মানুষের কাছে। জাগো বাংলার সম্পাদকীয়তেও একই কথা বলা হয়েছে – ” গুরুত্বপূর্ণ ফাইল প্রকাশ্যে আনার কথা হলেই বলা হয়েছে স্পর্শকাতর। এবং প্রকাশ হলেই নাকি বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার আহাম্মক হতে পারে, ভারতবর্ষের মানুষ নন। প্রায় আশি বছর আগের ঘটনার পর পৃথিবীর মানচিত্রটাই বদলে গিয়েছে। তাহলে? আসলে অনেক গবেষকই বলছেন, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরনোর ভয়। ”
Photo Credit- Jago Bangla and Archives.