অপর্ণার স্বামী প্রতীক যদিও মুলায়মের ঔরসজাত সন্তান নয়। প্রতীকের মা সাধনা গুপ্তাকে ২০০৩ সালে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করে নেন মুলায়ম। যদিও সাধনার সঙ্গে মুলায়মের সম্পর্ক ১৯৮২ থেকেই। সৎমায়ের সঙ্গে অখিলেশের বনিবনা নেই। এই নিয়ে বহুদিন থেকেই পারিবারিক অশান্তিতে জেরবার বৃদ্ধ সমাজবাদী নেতা।
বিশেষ প্রতিবেদন : মুলয়ামের ঘরের বহুরাণীরই মন কেড়ে নিল কমল। বুধবার বিজেপিতে যোগ দিলেন মুলায়ম সিং যাদবের পুত্রবধূ অপর্ণা যাদব। নতুন দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে পদ্মপতাকা হাতে তুলে নিলেন অপর্ণা। অপর্ণা মুলায়মের ছোটছেলে প্রতীকের স্ত্রী। অনেক দিন ধরেই এমন জল্পনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত ভোটের মুখে মুলায়মের অন্তঃপুরেই বিজেপির সার্জিক্যাল স্ট্রাইক!উত্তরপ্রদেশে ভোটের দামামা বাজতেই শিবির ত্যাগ করে সমাজবাদী পার্টিতে নাম লেখান পরপর বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট বিজেপি নেতা, যাঁদের তিনজন আবার যোগী ক্যাবিনেটের সদস্য। মুলায়মের ঘর ভেঙে যোগী তার শোধ তুললেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে মুলায়মের ঘরে অশান্তি নতুন নয়। বড়ছেলে অখিলেশই সব ক্ষীর খেয়ে নিচ্ছে বলে ছোটছেলে প্রতীকের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। প্রতীককে মুলায়ম সিং যাদব আইনতঃ পুত্র হিসেবে মেনে নিলেও প্রতীক মুলায়মের ঔরসজাত সন্তান নয়। প্রতীকের মা সাধনা গুপ্তা মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রতীকের বাবার নাম চন্দ্রপ্রকাশ গুপ্তা। ১৯৯০ সালে চন্দ্রপ্রকাশের সঙ্গে সাধনার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। যদিও তার বহু আগে থেকেই মুলায়মের সঙ্গে সাধনা গুপ্তার ঘনিষ্ঠতা। সাধনা বয়সে মুলায়মের থেকে বিশ বছরের ছোট। লখনৌর বাতাসে সমাজবাদী সুপ্রিমোর দ্বিতীয় পক্ষের অস্তিত্ব নিয়ে গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। তবে ঘটনাটা মুলায়ম স্বীকার করে নেন অনেক পরে। পুরো ব্যাপারটা মুলায়মের বিশ্বস্ত অনুচর প্রয়াত অমর সিং গোড়া থেকে জানলেও চেপে রেখে ছিলেন। ১৯৮২ সাল থেকেই সাধনার সঙ্গে মুলায়মের সম্পর্ক। প্রথম স্ত্রী মালতী দেবীর প্রয়াণের পরেই আর দেরি করেন নি মুলায়ম। ২০০৩ সালে সাধনা গুপ্তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন মুলায়ম। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদের অভিযোগে ২০১৬-য় মুলায়ম সিং যাদবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। তখনই প্রতীককে নিজের আইনতঃ সন্তান হিসেবে ঘোষণা করেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান।
স্বাভাবিকভাবেই সৎমায়ের সঙ্গে অখিলেশ যাদবের সম্পর্ক ভাল নয়। মুলায়ম সৎ ছেলে প্রতীককেও পার্টিতে বড় পদ দিবেন – শোনা যায় এমন প্রতিশ্রুতি নাকি স্বামীর কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছিলেন সাধনা। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির বিজয়ের পর অখিলেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথেও নাকি কাঁটা বিছানোর চেষ্টা করেছিলেন সৎমা। ২০১৪ থেকেই এইসব নিয়ে পারিবারিক বিবাদে মুলায়মের জীবন জেরবার। মুলায়মের সংসারে অপর্ণা বউ হয়ে আসার পর আরও জটিল হয় পরিস্থিতি। ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে অপর্ণাকেও টিকিট দিতে বাধ্য হন শ্বশুর। যদিও লখনৌ ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্র থেকে বিজেপির রীতা বহুগুনা যোশীর কাছে পরাস্ত হন অপর্ণা যাদব।
গত প্রায় এক বছর ধরেই বেসুরো গাইছিলেন মুলায়মের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক মাধ্যমে মোদীর প্রশংসা করে একাধিক পোস্টও দিয়েছেন। এরপর থেকেই বাতাসে খবর রটতে শুরু করে ঘরের বউকেই হারাতে চলেছেন প্রবীণ সমাজবাদী নেতা। শেষ পর্যন্ত জল্পনাই সত্যি হল। বিজেপিতেই যোগ দিলেন অপর্ণা যাদব। শোনা যাচ্ছে যে, শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ছোট বউমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। কিন্তু পদ্মের আকর্ষণ থেকে বউমার মন ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন বৃদ্ধ শ্বশুর। অপর্ণার বিজেপিতে যোগদানের পেছনে মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনা ও সৎছেলে প্রতীকের ইন্ধন থাকার সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক মহল।
Photo Credit- BJP official FB page. Video Credit- BJP official Youtube channel.