ফেসবুকে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে বাংলাদেশে ফাঁসানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের , করা হচ্ছে মামলা-হামলা - nagariknewz.com

ফেসবুকে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে বাংলাদেশে ফাঁসানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের , করা হচ্ছে মামলা-হামলা


রংপুর পীরগঞ্জের জেলেপাড়া থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবক গ্রেফতার ফেসবুকে ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে

বাংলাদেশ ডেস্ক : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের জন্য ‌ফেসবুক গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুকে হিন্দুদের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ধর্মীয় অবমাননাকর মন্তব্য পোস্ট করে গন্ডগোল বাঁধানোর একাধিক নজির রয়েছে সাম্প্রতিক বাংলাদেশে । সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনও যুবকের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে এই ধরণের পোস্ট করা হয় । এরপর যুবকের নামে পুলিশে মামলার পাশাপাশি সংখ্যালঘু মানুষের মহল্লায় হামলা , ভাঙচুর , মারধর ‌ এবং অগ্নিসংযোগ – বাদ যায় না কোনোটাই । রবিবার রংপুর জেলার ‌পীরগঞ্জের জেলেপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৪০টি বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পিছনেও আছে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ।‌

আজকের বাংলাদেশ : অসহায় সংখ্যালঘুর কান্না।

পরিতোষ হালদার নামে জেলেপাড়ার এক যুবকের ফেসবুক পোস্ট তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে – এই অভিযোগ তুলে রবিবার রাত দশটা নাগাদ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার উত্তেজিত ‌জনতা গ্রামটি পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিন্দু যুবকের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে মিথ্যা কথা প্রচার করে গোলমাল করা হয়েছে – প্রাথমিকভাবে এমনটাই জানিয়েছিলছন পুলিশের কর্মকর্তারা । কিন্তু ঘটনার ৪৮ ঘন্টা পেরোনোর আগেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিতোষ হালদারকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

রংপুর পীরগঞ্জের জেলেপাড়ায় পুড়ছে সংখ্যালঘুদের গ্রাম।

পীরগঞ্জের জেলেপাড়ায় এখনও শ্মশানের নিস্তব্ধতা । দুশো পরিবার সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত । এই অবস্থায় নির্যাতিতদের‌ই একজনকে এমন মামলায় গ্রেফতার করা হল যেই মামলার সত্যতা নিয়ে পুলিশ নিজেই যথেষ্ট সংশয়ে । পীরগঞ্জের জেলেপাড়ায় হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন , ” হামলার পেছনে যেই প্রভাবশালীরা আছে , তাদের শান্ত করতেই বিনা দোষে সংখ্যালঘুদের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । ” প্রত্যেকটি দাঙ্গার পরেই এক‌ই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে বলে সংখ্যালঘু সংগঠন গুলির অভিযোগ । ২০১৬ সালের অক্টোবরে কুমিল্লার নাসিরনগরেও‌ ফেসবুকে ভুয়ো পোস্ট ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে আগুন দেয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর একটি অংশ। ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে রসরাজ দাস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করে পুলিশ। পরে তদন্তে দেখা যায়, রসরাজের নামে করা ফেসবুক পোস্টটি ভুয়ো । চক্রান্ত করে দাঙ্গা বাঁধাতে‌ই এই কাজটি করা হয়েছে। দুই মাস পর জামিনে মুক্তি পান রসরাজ দাস।

রসরাজ দাস ও ঝুমন দাস : এই দুই হিন্দু যুবকের নামে ভুয়ো পোস্ট দিয়ে নাসিরনগর ও শাল্লায় সংখ্যালঘু নির্যাতন করা হয়েছিল।

চলতি বছরের মার্চে সুনামগঞ্জ উপজেলার শাল্লায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ফের সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-দোকান এবং মন্দিরে হামলা চালায় শতশত উত্তেজিত জনতা । ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে ঝুমন দাস নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঝূমনকে‌ও ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ফাঁসানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িত সন্দেহে ধৃতদের অনেক আগেই ‌জামিন মিললেও হাইকোর্ট থেকে ঝুমনের জামিন মিলল দিনকয়েক আগে।

ভুয়ো ফেসবুক পোস্টকে অজুহাত করে একদিকে গোলমাল বাধাচ্ছে চক্রান্তকারীরা , অন্যদিকে দোষ না করেও জেলে যাচ্ছে হিন্দুরা । এই পরিস্থিতিতে এখন বাংলাদেশ জুড়ে আতঙ্ক নেমে এসেছে সংখ্যালঘুদের মধ্যে । কখন তাদের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ফাসিয়ে দেওয়া হয় কিম্বা অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেই আপত্তিকর কিছুর পোস্ট দেওয়া হয় , এই আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা । অনেকেই আগেভাগে নিজেদের ফেসবুকে ডিসক্লেইমার দিয়ে রাখছেন । মহাষ্টমী পুজোর দিন কুমিল্লা থেকে সংখ্যালঘুদের উপর যে হামলার সূত্রপাত তা গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে । দেশ জুড়ে নিপীড়নের মুখে পড়ে এমনিতেই আতঙ্কে আছ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা তার উপর ফেসবুক নিয়েও শান্তি নেই তাদের । এই পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‌ঝুঁকিমুক্ত রাখা যায় , তা নিয়ে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ ।

ফটো- সংগৃহীত।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *