দিনহাটা,২ এপ্রিল,২০২১ : নন্দীগ্রামে নিজের আসনে ভোট পর্ব সেরেই এবার নজর উত্তরবঙ্গে । শুক্রবার কোচবিহার জেলার দিনহাটা ও নাটাবাড়ির পর আলিপুরদুয়ারেও সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নন্দীগ্রামে তিনিই জিতছেন বলে উত্তরবঙ্গের তিন সভা থেকে দাবি করলেন মমতা । ভোট হয়ে যাওয়া প্রথম দু’দফার ৬০ টি আসনের মধ্যে ৫০টিতেই তৃণমূল জিতবে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী । কিন্তু তারপরেও সভার পর সভা থেকে নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো । রাজনৈতিক মহল বলছে , ২০১৪ র লোকসভা নির্বাচন থেকেই মমতার এই ট্রেন্ডের শুরু । বিরোধীদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকেও প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলা একটি রাজনৈতিক রেওয়াজে পরিণত করে ফেলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ।
প্রথম দু’দফায় নন্দীগ্রাম সহ পঞ্চাশটি আসন জেতার দাবি করা তৃণমূল নেত্রী শুক্রবার দিনহাটার সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে অনেকটাই সময় ব্যয় করলেন চাঁচাছোলা ভাষায় নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমালোচনায় । প্রথম দু’দফায় বিক্ষিপ্ত গোলমাল ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ পর্ব মেটাতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন । কমিশনের নজিরবিহীন কড়াকড়ির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । কিন্তু দেখা যাচ্ছে কমিশনের ওপর মোটেই সন্তুষ্ট নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন , ‘ আজকে দুঃখের সাথে বলছি ইলেকশন ইলেকশন কমিশন পরিচালনা করছে না করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । ‘ মমতার বিস্ফোরক অভিযোগ – কেন্দ্রীয় বাহিনী গ্রামে গ্রামে অত্যাচার করছে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , ‘ কালকে নন্দীগ্রামের প্রত্যেকটা এলাকায় সিআরপিএফ গিয়ে তান্ডব করেছে । বিএসএফ তান্ডব করেছে । আইটিবিপি তান্ডব করেছে । যেমন আপনাদের এখানে বর্ডারে গুলি করে মেরে দেয় । সেই রকম । কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা গ্রামে গ্রামে বিজেপির নামে ভোট চাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তৃণমূল সুপ্রিমোর অভিযোগ, ‘ বিজেপিকে ভোট দাও বলে গ্রামে গ্রামে যুবকদের ওপর অত্যাচার করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী । ‘
দিনহাটায় নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । |
কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ করেই থেমে যান নি মুখ্যমন্ত্রী । মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে প্রতিরোধেরও ডাক দিয়েছেন তিনি । তৃণমূল সুপ্রিমো জনতার উদ্দেশ্যে বলেন , ‘ মা-বোনেদের বলছি । যদি দেখেন অত্যাচার করছে । প্রতিবাদ করবেন শান্তিপূর্ণ ভাবে । উলুধ্বনি দিয়ে প্রতিবাদ করবেন । শঙ্খধ্বনি দিয়ে প্রতিবাদ করবেন । আজান দিয়ে প্রতিবাদ করবেন । ছাড়বেন না। ‘ নির্বাচনের পর তিনি দেখে নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী । মমতা বলেন , ‘ আমি শুধু ইলেকশনটার জন্য অপেক্ষা করছি । এদের কাউকে আমি রেহাই দেবো না । আমি লড়াই জানি । লড়াই আমি করে নেবো । শুধু ইলেকশনের সময়টা আপনারা শান্ত থাকুন । ‘
দিনহাটায় তৃণমূূলের সমাবেশের একাংশ । |
বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের ৮০টির মতো বুথে তৃণমূল এজেন্ট বসাতে পারে নি বলে কোনও কোনও সূত্রে জানা গেছে । এ নিয়ে কমিশনের কাছে নালিশও করতে দেখা গেছে তৃণমূল নেতৃত্বকে । পুলিশের আশ্বাসেও তৃণমূলের এজেন্ট বুথমুখো হয় নি এমন দৃশ্যও টিভিতে দেখেছেন মানুষ । লোক পায় নি বলে তৃণমূল এজেন্ট বসাতে পারে নি বলে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেও তৃণমূলের বক্তব্য অন্যরকম । তবে পুলিশের আশ্বাসের পরেও কর্মীদের বুথে না যাওয়ার ব্যাপারটি যে তিনি মোটেই হালকাভাবে নেননি তা মমতার দিনহাটার বক্তৃতা থেকেই পরিস্কার । এই ঘটনায় দলের নেতা কর্মীদের ওপরেই রুষ্ট তৃণমূল সুপ্রিমো । রীতিমতো ক্ষোভের সুরে মমতা বলেন , ‘ আপনারা কেন দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন ? আমার ভায়েরা যেখানে বলছে বিজেপি মারছে । আমি এজেন্ট থাকব না । আমি তাদের বলি , ‘ এই এজেন্ট আমার দরকার নেই । যদি একটা মহিলা শক্তিশালী হয় যে এজেন্ট থাকবে আর বিজেপির সঙ্গে লড়াই করবে , তাঁকে আমি পুরস্কৃত করব । কিন্তু আমি দুর্বল ছেলেমেয়ে চাই না । ‘ ভোটের পরবর্তী দফাগুলিতে দলের বুথ লেভেল কর্মীদের মনোবল নিয়ে চিন্তিত মমতা এদিন উদয়ন গুহ সহ অন্যান্যদের মঞ্চের ওপরেই ডেকে নিয়ে বলেন , ‘ আমাকে অ্যাসিওর করতে হবে প্রত্যেকটা বুথে যেন এজেন্টরা স্ট্রংলি লড়াই করে । আমি এটা যেন না শুনি বিজেপি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে ।’ এদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের কারণে জেতার ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর আত্মবিশ্বাস নেই দেখেই তিনি নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করছেন বলে কটাক্ষ হেনেছেন বিরোধীরা ।