বায়রন বিশ্বাস বিধানসভার সদস্য হওয়ার সাথে সাথেই গ্লানিমুক্ত হল কংগ্রেস
কলকাতা: বিজয়ী হওয়ার বিশদিন পর বিধায়ক হিসেবে শপথ নিলেন বায়রন বিশ্বাস। সাগরদিঘির নব নির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়ককে বুধবার রাজ্য বিধানসভার নৌশাদ আলি কক্ষে শপথবাক্য পাঠ করান অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথ নিয়ে কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় জিতেও বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিতে এত দিন অপেক্ষা করতে হল বায়রনকে। বায়রনের বিলম্বে শপথকে তৃণমূলের ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বায়রন বিশ্বাস বিধানসভার সদস্য হওয়ার সাথে সাথেই অভিশাপ মুক্ত হল কংগ্রেস। স্বাধীনতার পর রাজ্যের পরিষদীয় রাজনীতিতে কখনও শূন্য হয়ে যায় নি কংগ্রেস। কিন্তু সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের পাশাপাশি নিশ্চিহ্ন হয়েছিল কংগ্রেসও। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি উপনির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ফের খাতা খুলল কংগ্রেস। বাংলায় বিধানসভা ভোটের দু’বছর পর বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে ফের দেখা যাবে হাতের কোনও প্রতিনিধিকে। এখন থেকে বিরোধী বেঞ্চে বিজেপির ৭০ ও আইএসএফ-এর একজন বিধায়কের পাশাপাশি কংগ্রেসেরও এক বিধায়ক বসবেন।
বায়রন বিশ্বাসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজ্যের পরিষদীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু , বিজেপির তিন বিধায়ক অম্বিকা রায়, সত্যেন রায় ও বঙ্কিম ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। শপথ শেষ হতেই বায়রনকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিজেপির বিধায়কেরা। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল বেরিয়েছিল ২ মার্চ। ২৩ হাজার ভোটে তৃণমূলের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেন বায়রন বিশ্বাস। রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়েছিল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে বিরাট মার্জিনে জিতেছিলেন সুব্রত সাহা। উপনির্বাচনে ১৬ শতাংশ ভোট হারায় শাসকদল। কংগ্রেসের ভোট বাড়ে ২৭.৯ শতাংশ।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ৬৪ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিধানসভায় দল এইভাবে ধরাশায়ী হওয়ায় চাপে পড়ে গেছে তৃণমূল। যদিও মুখে তা মানছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বায়রন বিশ্বাসকে বিজেপির লোক বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কংগ্রেস, বাম ও বিজেপি অশুভ আঁতাত করে সাগরদিঘিতে তৃণমূলকে হারিয়ে দিয়েছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি। মুখে এ’সব বললেও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাগরদিঘিতে ১৬ শতাংশ ভোট হাতছাড়া হওয়ার ঘটনায় মমতা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাগরদিঘিতে কেন সংখ্যালঘুরা বড় সংখ্যায় তৃণমূল থেকে মুখ ফেরালো, তা অনুসন্ধানে দলের ভেতরে একটি কমিটি গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে সাগরদিঘিতে বড় মার্জিনে জয়ের ফলে অধীর গড়ে ফের উজ্জীবিত কংগ্রেস। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে মুর্শিদাবাদ জেলার কয়েকটি গ্রামে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদানের ঘটনা ঘটেছে। বায়রন বিশ্বাস জেতার পর থেকেই তাঁকে দলে ভেড়াতে তৃণমূল বিভিন্ন ভাবে টোপ দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। শপথ গ্রহণে অযথা বিলম্বের পাশাপাশি শপথ গ্রহণের আগে-পরে কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়কের উপর শাসকদল চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ধুলিয়ানের তৃণমূল নেতা সঞ্জয় জৈনের অভিযোগের ভিত্তিতে সাগরদিঘির কংগ্রেস বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে বিধানসভায় বায়রন বিশ্বাস শপথ নেওয়ার আগেই সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর গ্রেফতার দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিধানসভায় বায়রন বিশ্বাস বলেছেন,”শপথ নিতে না নিতেই আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র করছে তৃণমূল। আমি তৃণমূলের দিকে ঝুঁকলে এইসব করা হত না। যেহেতু কংগ্রেস ছাড়ছি না, তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে শাসকদল।”
Feature image source- Reporter.