ধেড়ে নয় নেংটি। তাতেই এত! তবে ধেড়েদের পেটে কী আছে?
ডেস্ক রিপোর্ট: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃতদের বিষয়-আশয়ের হিসেব রাখতে গিয়ে নাকি হিমসিম অবস্থা ইডির আধিকারিকদের। নামে-বেনামে তারা কোথায় কী করে রেখেছেন, তা খুঁজে বের করা সহজ ব্যাপার নয়। সব আদৌ বেরোবে তেমনও নিশ্চিত নয়। সংবাদ মাধ্যমে যতটুকু খবর বেরোচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে এই রাজত্বে জায়গায় জায়গায় ছোট ছোট অনেক কুবেরের জন্ম হয়েছে। কুন্তল ঘোষ কিম্বা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়রা হরেদরে কেউই বিশেষ হোমড়াচোমড়া নন। বলা যায় শাসকদলের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা পাতি দালাল বা মিডিলম্যান। কিন্তু তাঁদের বিত্তবৈভব দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।
ইডি-সিবিআই একজনকে পাকড়াও করে আরেকজনের খোঁজ পাচ্ছে। আবার তাকে জেরা করে অন্য আরেকজনকে ধরছে। এই করে করে বেশ কয়েকজনকে খাঁচায় পুড়েছেন তদন্তকারীরা। এইভাবেই হয়তো নিয়োগ দুর্নীতির সিন্ডিকেট বা চক্রটাকে এক্সপোজ করতে চাইছে ইডি-সিবিআই। তবে এরা কেউই ধেড়ে নয় নেংটি ইঁদুর মাত্র। জনগণ বোকা নয়। তারা বুঝতে পারছে, এই নেংটিরা মুখে করে খাবার ধেড়েদের কাছে পৌঁছে দিত।
নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তের সূত্র ধরে সংবাদ মাধ্যমে রোজই নতুন নতুন খবর। শুধু হুগলি জেলাতেই নিয়োগ ঘোটালার যা গভীরতা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, গোটা রাজ্যে না জানি কী বিশাল ‘সিঙ্ক হোল’ হয়ে আছে! ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলির বলাগড়ের ছেলে। পেশায় সাধারণ সরকারি কর্মচারী। রাজনীতিতে তৃণমূলের সামান্য নেতা। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ নাকি পর্বতপ্রমাণ।
হুগলি জেলার জিরাটে ‘দ্য স্পুন’ নামে তাঁর একটি রেস্তোরাঁ আছে। রেস্তোরাঁর উল্টোদিকে অসম লিঙ্ক রোডের পাশে একটি হোম স্টে। বলাগড়ের কৃতী ছেলে। নিজের জায়গায় কিছু না করলে হয়। বলাগড়ের চাঁদরায় মা গঙ্গার পাড়ে শান্তনু গড়েছেন একটি রিসর্ট। রিসর্টের সামনে পেছনে দুটি জমির প্লট। বলাগড় রেল স্টেশনের আরও কয়েকটি প্লট। ব্যান্ডেল শহরের বালির মোড় এলাকায় ৩০ লক্ষ টাকায় কেনা চার কাঠা জমির উপর একটি দোতলা বাড়ি।
চুঁচুড়ার জগুদাস পাড়ার একটি আবাসনে ৫০-৫৫ লক্ষ টাকা করে দামের ১,৭০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট কেনা আছে শান্তনুর নামে। চুঁচুড়া শহরের ময়ূরপঙ্খী ঘাট এলাকায় ৮৪ লক্ষ টাকায় একটি দোতলা বাড়ি ও দু’কাঠা জমি কিনে রেখেছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। চন্দননগরের বড়বাজার এলাকায় ১,৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনলেও ১০ লক্ষ টাকার পর আর বাকি টাকা শোধ করেন নি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার এই তৃণমূল নেতা।
হুগলি ছাড়িয়ে হাওড়া জেলার উন্নয়নেও শরিক হয়েছেন তিনি। হাওড়ার মুন্সিরহাটে বহুতল নির্মাণে নিজের কষ্টার্জিত টাকার কিছুটা শান্তনু বিনিয়োগ করেছেন বলে জানতে পেরেছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর আধিকারিকেরা। চন্দননগরের সত্যপিরতলায় রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার নামে টাকা লগ্নি করেছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। স্ত্রীর নামে বন্ধু নিলয় মালিকের সংস্থায় বিনিয়োগ।
তদন্তকারীদের অনুমান নামে-বেনামে এবং স্ত্রীর নামে আরও বিষয়-সম্পত্তি করে রেখেছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালতের কাছে শান্তনুর সম্পত্তির খতিয়ান তুলে ধরে তেমনটাই জানিয়েছেন ইডির আইনজীবী। সাধারণ মানুষ বলছে, শান্তনুর মতো চুনোপুঁটিদের সম্পত্তি দেখেই যদি সবার চোখ ধাঁধিয়ে যায় , তবে রাঘববোয়ালদের পেটের ভেতরে যখন এজেন্সি হানা দেবে, তখন কী ঐশ্বর্য দেখতে পাবো আমরা!
Feature Image is representational. Photo source-collected.