অনুপ্রাণিত বাঙালি আজ জীবনের মানে যা বুঝেছে: টাকা তুলে খাও, টাকা মেরে খাও আর ভাগ পাঠাও - nagariknewz.com

অনুপ্রাণিত বাঙালি আজ জীবনের মানে যা বুঝেছে: টাকা তুলে খাও, টাকা মেরে খাও আর ভাগ পাঠাও


কাঁচা টাকা কী কুদরতি দেখাতে পারে, বাঙালি তা জেনে গেছে। কাঁচা টাকা কীভাবে কামাই করতে হয়, সেই উপায়‌ও আর অজ্ঞাত নেই বাঙালির। এগারোর পর বাংলার শাসকদল আমবাঙালির মানসে একটা মৌলিক পরিবর্তন আনতে পেরেছে- যদি পার তো কামিয়ে নাও এবং যত পার কামিয়ে নাও। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই-ইডি তদন্তভার নেওয়ায় গুতে ঘাঁটা পড়েছে- তাই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, এই যা। কিন্তু মানুষ কি জানে না কীভাবে হরির লুট চলছে! শুধু কি নিয়োগ? রাজ্যে এখন এমন কোন ক্ষেত্রটা বাকি আছে, যেখান থেকে কেউ না কেউ মালকড়ি ঝাড়ছে না? কুন্তলের পর চন্দন। চন্দনের পর তাপস‌। তাপসের পর শান্তনু। নিয়োগ দুর্নীতিতে এরা ধরা পড়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আরও কয়েকজন কুন্তল-শান্তনুর নাম জানতে পারব আমরা।

বাংলা ‌জুড়ে যা চলছে, কুন্তল-শান্তনুরা তার স্যাম্পল বা নমুনা মাত্র। কুন্তল-শান্তনুর টাকা-পয়সা-সম্পত্তির বহর নিয়ে মিডিয়া-সোস্যাল মিডিয়া সরগরম। আরে বঙ্গে কুন্তল-শান্তনুর মতো কৃতী পুরুষ কি স্রেফ দু-চার জোড়াই? জেলায় জেলায়, ব্লকে ব্লকে কি কুন্তল-শান্তনুদের অভাব পড়িয়াছে? ভিন্ন ভিন্ন নামে কুন্তল-শান্তনুরা আপন আপন পৌরুষে কী করে বেড়াচ্ছেন, তা কি মানুষ দেখতে পাচ্ছে না?

কার টাকা কার পকেটে যাচ্ছে। কে টাকা কামিয়ে কাকে কাকে ভাগা পাঠাচ্ছে। কে বেশি কামাচ্ছে। আর কে কম কামিয়ে গর্জাচ্ছ। কে কোন সেক্টর থেকে কামিয়ে নিচ্ছে- এইসব আবিষ্কার করার জন্য সিবিআই-ইডির গোয়েন্দা হ‌ওয়ার দরকার পড়ে না। ঢাক পিটিয়ে কামাই করছে মশাই।‌ আপনিও জানেন, আমিও জানি। লজ্জা কীসের? কাঁচা টাকা কামানো নিয়ে বাঙালির লজ্জা ভেঙে গেছে কবেই।‌ রুলিং পার্টির নেতা, টাকা কামায় না। শুনে পাবলিক‌ই বলবে- আস্ত বলদ একটা। সমাজের পরিস্থিতি এমন‌ই। যার কামানোর মুরোদ নেই, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাকে পদে বসিয়ে রাখবে কেন? রাখেও না। হিসেব খুব সোজা- কামাও এবং পাঠাও। পাঠাতে না পারলে বসে যাও।

বালি-পাথর-কয়লা-গরু। একশ দিনের কাজ- প্রধানমন্ত্রী আবাস- সড়ক-সেতু-শ্মশান-জলাধার। বাদ কিছু আছে যেখান থেকে তোলাবাজদের রোজগার শূন্য? কুন্তল-শান্তনুরা লোকাল এজেন্ট ছাড়া আর কিছু নয়। নেটওয়ার্কের একদম শেষ ধাপের লোক। এরা বাজার থেকে টাকা তুলেছে। কিছু নিজে খেয়েছে। বাকিটা চেইন ধরে চালান করে দিয়েছে। যাদের পিঠে পাবলিক চুনোপুঁটি বলে ছাপ মেরে দেয়, কুন্তল-শান্তনুরা কি তার বেশি কিছু?

যেখানে টাকা সেখানেই ফূর্তি। টাকার গরম বলে একটা কথা আছে। কাঁচা টাকার আবার গরম একটু বেশিই। গুড়ের গন্ধে যেমন মাছি ছুটে আসে। কাঁচা টাকার গন্ধে তেমনি সুন্দরী নারী। টাকা ছাড়া দামি ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি হয় না। দামি ডায়মন্ডের নেকলেস গলায় ওঠে না। পরিশ্রম করে সদুপায়ে টাকা রোজগার সময় সাপেক্ষ। সুখ-সমৃদ্ধি লাভের সহজ রাস্তা যার টাকা আছে তার ঘনিষ্ঠ হ‌ওয়া। যৌবনকালে কোনও কোনও নারীকে এই সহজ পথটাই আকৃষ্ট করে। তাই কুন্তল-শান্তনুদের সঙ্গে হৈমন্তী-সোমা ইত্যাদি ইত্যাদিরাও জুটে যায়।

আত্মসম্মান ধুয়ে কি জল খাবো? সৎ থেকে কি শুকিয়ে মরব? মানুষ যখন এইভাবে চিন্তা করতে শুরু করে তখন বিবেকের বাপের‌ও সাধ্য নেই বাঁকা পথে যাওয়া থেকে তার হাত টেনে ধরে থামায়। আজ সাধারণ মানুষের মনেও এই ভাবনাটা চাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সৎ-অসৎ, ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যটা গুলিয়ে দিতে পারলে সমাজ পরস্বাপহারীকে ছিঃ ছিঃ করার বদলে পিঠ চাপড়ে বাহবা দিতে থাকে। পরের টাকা-পয়সা মেরে খাওয়া কোনও পাপ‌ই নয়- এ’রকম একটা মনোভাব কিন্তু বাঙালি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সততার প্রতীকের বাহাদুরি আছে মানতে হবে। তিনি সৎ-অসতের ঊর্ধ্বে উঠে বাঙালিকে কাঁচা টাকা চিনিয়েছেন।

Profile Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *