সায়েন্স ডেস্ক: এই অনন্ত মহাবিশ্ব তো দূরের কথা যে সৌরজগতে আমাদের বাস, তার সম্পর্কেই বা কতটুকু জানি আমরা! মাঝে মধ্যেই মহাকাশ বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার পাল্টে দেয় আমাদের যাবতীয় পুরোনো ধ্যান-ধারণা। এতদিন পর্যন্ত উপগ্রহের সংখ্যার নিরিখে সৌরজগতে শনিই ছিল এক নম্বরে। ৮৩টি চাঁদ নিয়ে শনিদেবই ছিলেন শীর্ষে। শনিকে সরিয়ে সেই স্থান দখল করে নিল বৃহস্পতি। আমেরিকার ওয়াশিংটনের ‘কার্নেগি ইনস্টিটিউশন ফর সায়েন্স‘-এর জ্যোতিবিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে বৃহস্পতির আরও ১২টি উপগ্রহ খুঁজে পেয়েছেন। এতদিন আমরা জানতাম বৃহস্পতির চাঁদের সংখ্যা ৮০। নতুন আবিষ্কার আমাদের জানান দিচ্ছে, সৌরজগতের সর্ববৃহৎ গ্রহের সংসারটাও সবার থেকে বড়। দেবগুরু বৃহস্পতির ছেলেপুলের সংখ্যা ৯২।
কার্নেগি ইন্সটিটিউশন ফর সায়েন্স-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল স্কট শেপার্ডের নেতৃত্বে দু’বছর ধরে গ্রহরাজ বৃহস্পতির ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এই আবিষ্কারটি করেছেন। তাঁদের গবেষণার বিস্তারিত জানিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আমেরিকার ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন’স মাইনর প্ল্যানেট সেন্টার‘। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ‘স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ‘ জানাচ্ছে, আবিষ্কৃত হওয়া উপগ্রহগুলি আকারে অতি ক্ষুদ্র এবং বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করতে ৩৪০দিনের থেকেও বেশি সময় নেয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহলের ধারণা, এখানেই শেষ নয়, বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। গ্যাসীয় গ্রহ বৃহস্পতি পৃথিবীর থেকে ১১ গুণ বড়। সৌরজগতের অবশিষ্ট গ্রহদের ভর যোগ করলে যা দাঁড়ায়, বৃহস্পতির ভর তার থেকেও আড়াই গুণ বেশি। সৌরজগতের এই সর্ববৃহৎ গ্রহের দেহ থেকে যে আলো প্রতিফলিত হচ্ছে, তার জেরে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে চলা ক্ষুদ্র বস্তুগুলিকে শনাক্ত করার কাজটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিকে ঘিরে পাক খাচ্ছে, এমন আরও কিছু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চাঁদ হয়তো অদূর ভবিষ্যতেই আবিষ্কৃত হবে।
নাসার ইউরোপা অভিযান
বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন- এই চারটি গ্যাসীয় গ্রহকে বলা হয় জোভিয়ান জগত। জোভিয়ান জগত নিয়ে আরো জানতে ‘ইউরোপা ক্লিপার‘ নামে একটি বিশেষ অভিযানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘নাসা’। আগামী বছর বৃহস্পতির চারটি গ্যালিলীয় উপগ্রহের ( বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলাই বৃহস্পতির যে চারটি উপগ্রহ প্রথম আবিষ্কার করেন।) মধ্যে সবথেকে ছোট ইউরোপার উদ্দেশ্যে মহাকাশ যান পাঠাচ্ছে আমেরিকার এই মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা।
পৃথিবীর চাঁদের থেকে সামান্য ছোট বৃহস্পতির এই পাথুরে উপগ্রহে জীবনধারণের উপযোগী পরিবেশ আছে কিনা জানতেই নাসার এই অভিযান। ইউরোপার পৃষ্ঠদেশের ২৭০০ কিলোমিটার ওপর থেকে উপগ্রহটিকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করবে ‘ইউরোপা ক্লিপার’। পর্যায়ক্রমে নামতে নামতে ইউরোপার পৃষ্ঠদেশ থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে নেমে আসবে মহাকাশযানটি। নাসার ইউরোপা ক্লিপার মিশনের আগে বৃহস্পতির উপগ্রহ বিষয়ক এই নতুন আবিষ্কারকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহল।
Feature Photo Credit- NASA.