বছরভর হম্বিতম্বিই সার! মনোনয়ন পর্বেই পিছিয়ে পড়ে ত্রিপুরার ভোটে 'দুধভাত' হয়ে পড়ল তৃণমূল - nagariknewz.com

বছরভর হম্বিতম্বিই সার! মনোনয়ন পর্বেই পিছিয়ে পড়ে ত্রিপুরার ভোটে ‘দুধভাত’ হয়ে পড়ল তৃণমূল


অর্ধেক আসনে লড়াইয়েই নেই ঘাসফুল। কার‌ও সঙ্গে জোট‌ও করে নি তৃণমূল। ত্রিপুরায় ভোটের দৌড়ে মমতার দল স্রেফ ‘অলসো রান’!

আগরতলা: বাংলা জয়ের পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরা রাজ্য জয় করা। মাঝে দমে গেলেও একুশের নির্বাচনে বিপুল বিক্রমে বাংলার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর ফের ত্রিপুরা বিজয়ের স্বপ্ন চাগিয়ে ওঠে তৃণমূলের। এবার বাংলার বাইরে সংগঠন বিস্তারে হাল ধরেন ভাইপো অভিষেক। ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং গোয়াকে টার্গেট করে আদাজল খেয়ে নামেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। গত বছর গোয়ার ভোটে প্রচারে ৪১ কোটি টাকা খরচ করে তৃণমূলের প্রাপ্তি শূন্য। ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে নির্বাচন। গত বছর মেঘালয়ে কংগ্রেসের ১২ জন বিধায়ককে ভাঙিয়ে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়েছিল তৃণমূল। এখনও পর্যন্ত বাংলার বাইরে তৃণমূলের বড় সাফল্য বলতে এইটুকুই।

মেঘালয় বিধানসভার ৬০ আসনের মধ্যে ৫২টিতে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা পরপরই তৃণমূলের দুই বিধায়ক দল ছেড়ে এনপিপিতে যোগদান করেন। আরও এক বিধায়ক আগেই তৃণমূল ছাড়েন। ফলে ভোটের মুখে তৃণমূলের বিধায়ক হ্রাস পেয়ে নয়ে দাঁড়িয়েছে। মেঘালয়ে তৃণমূল কেমন ফল করবে তা জানতে ভোট গণনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ৬০-এর মধ্যে ৫২ আসনে প্রার্থী দিয়ে তৃণমূল যে মেঘালয়ে লড়াইয়ে আছে, তা মানতে হবে। কিন্তু ভোটের আগেই তৃণমূল কার্যত ‘দুধভাত’ হয়ে গেল বাঙালির দ্বিতীয় রাজ্য ত্রিপুরায়।

সোমবার ছিল ত্রিপুরায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। দিনের শেষে দেখা গেল ৬০ সদস্যের ত্রিপুরা বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থী তিরিশ। অর্থাৎ অর্ধেক আসনে তৃণমূল লড়াইয়েই নেই। অথচ ক্ষমতায় আসার লক্ষ্য নিয়ে ত্রিপুরা অভিযানে নেমেছিল তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এক সময় কলকাতা-আগরতলা প্রায় ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছেন। মমতা ত্রিপুরায় গিয়ে বেশ কয়েকবার সভা করেছেন। কুণাল ঘোষ আগরতলায় গিয়ে পড়ে থাকতেন। মিডিয়ার নজর‌ও কেড়েছেন ভালোই। পুলিশের মামলা পর্যন্ত খেয়েছেন কুণাল সহ পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন তৃণমূল নেতা।

বাংলার রাজীব ব্যানার্জি। পাশে বসে অসমের সুস্মিতা দেব। দু’জনের কাঁধে ত্রিপুরার দায়িত্ব দিয়েছিলেন অভিষেক। ছবি- সংগৃহীত

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নাকে খত দিয়ে তৃণমূলে ফেরার পর তাঁকে পানিশমেন্ট ট্র্যান্সফার দিয়ে আগরতলায় পাঠিয়েছিলেন অভিষেক। সেই থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রিপুরায় পড়ে আছেন রাজীব। অসমের প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতাকে রাজ্যসভার সদস্যপদ গিফট দিয়ে তৃণমূলে আনার পেছনে মমতার উদ্দেশ্য ছিল, বরাক উপত্যকার পাশাপাশি ত্রিপুরাতেও দলের ভিত শক্ত করার কাজ করবেন সুস্মিতা। রাজীব-সুস্মিতাকে দিয়ে ত্রিপুরা চষে ফেলেও শেষ পর্যন্ত কী পেলেন মমতা-অভিষেক? টাকাও তো কম ঢালা হয় নি। বাংলা থেকে সেই টাকা কীভাবে জোগাড় করা হয়েছে, তা নিয়ে বাঁকা কথা বলতে ছাড়েন না বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত অর্থ এবং দৌড়ঝাঁপ- সব‌ই তো জলে গেলো ত্রিপুরায়!

একুশের নভেম্বরে পুরভোট ও বাইশের জুনে বিধানসভার উপনির্বাচনে শোচনীয় ফল করার পর থেকেই ত্রিপুরায় তৃণমূল মনোবল হারাতে শুরু করে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্য দল ভাঙিয়ে যাদের তৃণমূলে আনা হয়েছিল, তাঁরা প্রায় সবাই একে একে কেটে পড়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেখা যাচ্ছে, ত্রিপুরার বিরোধী পরিসর বাম-কংগ্রেস ও টিপরা মোথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তৃণমূল সেখানে দাগ কাটতে ব্যর্থ। বছর ভর বড় বড় হুঙ্কার মেরে ভোটের সময় অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিতে যে দলের গলদঘর্ম অবস্থা হয়, ইভিএমে বোতাম টেপার সময় জনগণ যে সেই দলকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনবে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিজেপিকে হারাতে কৌশলগত কারণে দল অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিয়েছে বলে সুস্মিতা দেব সংবাদ মাধ্যমে দাবি করেছেন। বাস্তব হল, যে তিরিশটি আসনে তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, সেই আসনগুলিতে ভোট কাটতে পারলে বিজেপির লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। ত্রিপুরায় গিয়ে রাজ্যপাট দখলের বিস্তর হম্বিতম্বি করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারে আসার গর্জন করে কি শেষে ত্রিপুরায় স্রেফ ভোট কাটুয়ার ভূমিকা নিতে চলেছে তৃণমূল?

বাংলার বাইরে দলের বিস্তারে অভিষেক ডাহা ফেল। ত্রিপুরায় মমতা প্রচারে যান কিনা সন্দেহ। ছবি- সংগৃহীত

মনোনয়ন পর্বেই পিছিয়ে পড়া তৃণমূলের প্রচার নিয়ে ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলের আর আগ্রহ থাকার কথা নয়। ত্রিপুরায় দলের ভবিষ্যৎ বুঝতে পেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়‌ও প্রচার নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। চব্বিশের নির্বাচনে মমতাকে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী মুখ করার যে বাই তৃণমূলের উঠেছিল, বেশ কিছুদিন হল তা চুপসে গেছে। আসলে বাংলায় নানা ঘোটালায় ফেঁসে গিয়ে তৃণমূল সরকার এখন এতটাই ব্যতিব্যস্ত যে মাথার থেকে প্রধানমন্ত্রী হ‌ওয়ার ভাবনা বোধ হয় ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিকে বাংলার বাইরে দল বিস্তারের কাজে অভিষেক ডাহা ফেল। গোয়ার পর ত্রিপুরাতেও টাকা ও শক্তির অপচয় ছাড়া আর বিশেষ কিছু হচ্ছে না। বিষয়টি বুঝতে পেরে মমতাও নাকি ভেতরে ভেতরে রুষ্ট। এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরায় দলের হয়ে প্রচারে গিয়ে নিজের ইমেজ নষ্ট করার ঝুঁকি নাও নিতে পারেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

Feature Image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *