রঘুনাথপুর,২৩ মার্চ,২০২১ : লোকসভা ভোটে বিমুখ করেছিল পুরুলিয়া । বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ার আদিবাসীদের মন জয়ে মরীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মঙ্গলবার দিনভর পুরুলিয়া চষে বেড়ালেন তৃণমূল সুপ্রিমো । পুরুলিয়া জেলার পাড়ায় নির্বাচনী সভা সেরেই কাশীপুরের সভায় যান মুখ্যমন্ত্রী । এদিন মমতার শেষ সভা ছিল রঘুনাথপুরে । প্রতিটি সভা থেকেই সবিস্তারে তাঁর সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি কেন্দ্রের মোদী সরকার ও বিজেপিকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জঙ্গলমহল জুড়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ওপর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ যে তাঁকে চিন্তায় রেখেছে এদিনের তিনটি সভায় মমতার ভাষণেই তা স্পষ্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । কাশীপুরের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘ আমি জানি এখানে কিছু প্রব্লেম ছিল আদিবাসীদের সাথে । আমি আদিবাসীদের কথা দিচ্ছি , আপনাদের টিলা দখল করে কিছু করা হবে না। আপনারা যা বলবেন, সেটাই হবে । ‘ তাঁর দলের প্রার্থীরা কে খারাপ , কে ভাল তা নিয়ে ভেবে জনগণের মাথা খারাপ করার দরকার নেই বলে সভায় জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘ কে খারাপ কে ভাল । দেখার দরকার নেই । ভালোটা আমি দেখে নেবো । আমি কলকাতায় বসে থেকে সব খবর রাখি । ‘
স্থানীয় স্তরে দলের নেতাদের ওপর জনগণের ক্ষোভকে সামাল দিতে বরাবরই নিজের ক্যারিশ্মাকে ব্যবহারে অভ্যস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ২০১৬তেও এই কৌশলে ম্যাচ বের করে নিয়েছিলেন তিনি । এবারও মমতা নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজে লাগিয়েই কঠিন লড়াই জিততে চাইছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ।
দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের ওপর স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ থাকতে পারে এই আশঙ্কায় তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন , কে প্রার্থী হল আর কে হল না । ভুলে যান । প্রার্থী এখানে ম্যাটার নয় । যদি আপনারা চান সরকারটা আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করি , তাহলে আপনাদের ভোটটা তৃণমূলকে জোড়াফুল চিহ্নে দিতে হবে । স্থানীয় স্তরে দলের নেতাদের ওপর জনগণের ক্ষোভকে সামাল দিতে বরাবরই নিজের ক্যারিশ্মাকে ব্যবহারে অভ্যস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ২০১৬তেও এই কৌশলে ম্যাচ বের করে নিয়েছিলেন তিনি । এবারও মমতা নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজে লাগিয়েই কঠিন লড়াই জিততে চাইছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ।
পুরুলিয়ার কাশীপুরে নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
পুরুলিয়া জেলায় যে এখনও জল সঙ্কটের সমাধান করা যায় নি , সভায় তা মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী । তবে ভোটে জিতে সরকারে ফিরে এলে পুরুলিয়ার জল সঙ্কট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ পুরুলিয়া জেলায় আগে একটুও জল পাওয়া যেতো না । এখন তো চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ২০০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি । আগামী এক বছরের মধ্যে পুরুলিয়ার পঞ্চাশ শতাংশ মানুষের কাছে জল পৌঁছে দেবো । ‘ পুরুলিয়া জেলায় তিনি মাটি সৃষ্টি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলেও সভায় দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন , মাটি সৃষ্টি – এই নামটা আমারই দেওয়া। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরুলিয়া জেলা জুড়ে মাটি খুঁড়ে জলাধার তৈরি করা হবে বলে জানান মমতা । মাটি সৃষ্টি প্রকল্পে ২৫ হাজার হেক্টর চাষের জমি তৈরি করা হবে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী । জেলার রঘুনাথপুরে জঙ্গলমহল সুন্দরী নামে শিল্প তালুক তৈরি হয়ে গেলে জঙ্গলমহল থেকে আর কাউকে কাজের জন্য বাইরের রাজ্যে যেতে হবে না বলে সভায় আশ্বাস দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসে বিশ্বাস করে পুরুলিয়ার মানুষ আবার তৃণমূলকে ভোট দেন কিনা তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২ রা মে পর্যন্ত ।