হে কালের যাত্রী, কালীই তোমার কান্ডারী। কালীনামের অনন্ত মাহাত্ম্য। বর্ণিলেন ডঃ তমাল দাশগুপ্ত-
কালী সর্বোচ্চ উপাস্য। কলৌ কালী কলৌ কালী নান্যদেবো কলৌ যুগে! কলিযুগে তিনি ভিন্ন অপর উপাস্য নেই। মা কালী কলিযুগেশ্বরী, কলিযুগের একমাত্র গতি। তিনি কলির অধিষ্ঠাত্রী, তাই তিনি কালী।কালী হলেন কালের অধিষ্ঠাত্রী। কালের কলন করেন তাই এই নাম। যাঁর ভয়ে দক্ষিণদিকের অধিপতি যম পালিয়ে যান তিনিই দক্ষিণাকালী। বিধি বাম হলে যিনি একমাত্র রক্ষাকর্ত্রী, কালস্রোতের সমস্ত বাম/বিঘ্ন থেকে মুক্তি পেতে যাঁর উপাসনা করি, তিনিই বামাকালী। দক্ষিণাচার হোক বা বামাচার, সব পূজা তাঁর পায়েই অর্পিত হয়।
তিনি বৈদিকদের কালরাত্রি। তিনি হরপ্পা সভ্যতায় পূজিত নিশা। তিনিই বৈদিকদের ভীতি মিশ্রিত রাত্রিসূক্তের কেন্দ্রে। তিনি ঘোর অমানিশা রাত্রির অধিষ্ঠাত্রী, কার্তিকী অমাবস্যায় এজন্য তিনি পূজিত হন। সব রঙ এসে কালো রঙে মেশে এজন্য তিনি কালী নাম ধারণ করেন। তিনি কালো রঙের দ্বারা প্রকাশিত হন, এজন্য কালী।
কৈবল্যদায়িনী, এজন্য কালী কৃপাহি কেবলম্। কালী আমাদের তন্ত্রাশ্রয়ী বর্ণমালার অধিষ্ঠাত্রী, পঞ্চাশ বর্ণ তাঁর পঞ্চাশ মুণ্ডমেলায় প্রকাশিত। কালী স্বয়ং প্রথম বর্ণ “ক” তে সূচিত হন। তিনি জগদকারণ, তিনিই উৎস, এজন্য প্রথম বর্ণ। কালীনাম ও কালীমন্ত্র এই ক অক্ষরের গূঢ় ও অসীম দ্যোতনায় প্রকাশিত হয়।
কালীনাম কণ্ঠে নিলে সমস্ত ক্লান্তি ক্লেদ ও ক্লেশ দূর হয়, এজন্য সর্বদা কালীর নাম করবেন। মা কালীর নামে আপনার জাতীয় পরিচয় নিহিত, কালিকা বঙ্গদেশে চ! কাজেই কালীর নাম করবেন। কালী কালী মহাকালী কালিকে পাপহারিণী! একবার কালীনামে যত পাপ হরে, মানুষের সাধ্য নেই তত পাপ করে, তাই সর্বদা কালীর নাম করবেন।
মা কালীর নামেই সমগ্র বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ও ইতিহাস, সমগ্র তন্ত্রধর্মের সারাৎসার, সমস্ত বিশ্বচরাচর নিহিত আছে। তাই, তাঁর নাম নিলেই সমস্ত শব্দ, সমস্ত দর্শন, সমস্ত জ্ঞানের উপলব্ধি ঘটে। জয় মা কালী ধ্বনি দিলে আর পৃথকভাবে অন্য কারও কোনও নাম নিতে হয় না। এই বিষয়ে আর কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই যে, কালীসাধনাই আমাদের আবহমান তন্ত্রধর্মের শ্রেষ্ঠতম সাধনমার্গ। কার্তিকের অমানিশার পুণ্য তিথিতে শ্যামামায়ের পুজো সমাগত। আসুন বদন ভরে বলি- জয় মা কালী। জয় জয় মা।
ছবি- সংগৃহীত।
- লেখক পরিচিতি – ডঃ তমাল দাশগুপ্ত । দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক। সপ্তডিঙা পত্রিকা , জার্নাল অভ বেঙ্গলি স্টাডিজ ও মাৎস্যন্যায় ব্লগজাইন নামক তিনটি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। সপ্তডিঙা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান । নিজেকে বাঙালির আত্মপরিচয়ের সন্ধানে নিবেদিত একজন ইতিহাস শ্রমিক ও ভাষাকৃষক হিসেবে পরিচয় দিতেই ভালবাসেন লেখক ।