সোনিয়া-রাহুলের একটা রাবার স্ট্যাম্প সভাপতির দরকার ছিল। খাড়্গে নিঃসন্দেহে সেই চাহিদা পূরণ করবে। আরও যা লিখলেন উত্তম দেব-
দলের পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তা ঠিক করতে সোমবার ভোট দিলেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রায় নয় হাজার প্রতিনিধি। দিল্লির এআইসিসি সদর দফতরের পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেসের দফতরগুলিতেও ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত করার সুযোগ পেয়েছেন কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। রাহুল গান্ধী ব্যস্ত ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায়। রাহুল এখন আছেন কর্নাটকে। সকালে সেখানেই ভোট দিয়েছেন তিনি। দিল্লির এআইসিসি দফতরে গিয়ে ভোট দিয়েছেন সোনিয়া ও প্রিয়াঙ্কা। ভোটের ফলাফল জানা যাবে ১৯ অক্টোবর।
কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থী দু’জন- মল্লিকার্জুন খাড়্গে ও শশী থারুর। নির্বাচন পর্বের সূচনায় ভোট নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরমহলে যথেষ্ট উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও ইতিমধ্যেই তা নিছক আনুষ্ঠানিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। উচ্চশিক্ষিত ও সুবক্তা শশী থারুরের ক্যারিশ্মা নিয়ে কংগ্রেসের বিরোধীদেরও কোনও সংশয় নেই। কিন্তু থারুরের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার কোনও সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছেন না কেউ। এমনকি থারুর নিজেও। মল্লিকার্জুন খাড়্গেই যে তাঁদের পছন্দের প্রার্থী, তা ভোটের আগেই হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন সোনিয়া-রাহুল। মা-ছেলের মনোভাব নিয়ে রাজনৈতিক মহলের আর কোনও সংশয় নেই। তবে প্রিয়াঙ্কা ঠিক কাকে দলের সভাপতি পদে দেখতে চাইছেন, তা নিয়ে কিঞ্চিত ধোঁয়াশা আছে।
সোনিয়া-রাহুল খাড়্গের খুঁটি- এটা জানার পরেও থারুর লড়াইয়ে আছেন, এটাই বড় কথা। হাই প্রোফাইল শশী থারুরের বদলে লো প্রোফাইল মল্লিকার্জুন খাড়্গে কেন গান্ধী পরিবারের পছন্দের পাত্র, তা কংগ্রেসের ভেতরে-বাইরে সকলেরই বোঝা সারা। ১৯৯৮ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। মাঝে ২০১৭ থেকে ১৯ দায়িত্ব সামলেছেন রাহুল। অর্থাৎ টানা ২৪ বছর কংগ্রেস গান্ধী পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। কংগ্রেসের শনি লাগে ২০১৪ থেকে। লোকসভা নির্বাচনে চূড়ান্ত ভরাডুবি হয় ভারতের গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির। উনিশেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় গোঁসা করে সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল। অনুরাগীরা মানভঞ্জনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে ফের সভাপতির দায়িত্ব যায় সোনিয়ার হাতে। শোনা যায়, একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই যাত্রায় দায়িত্ব নিয়েছিলেন সোনিয়া। তখন থেকেই বাজারে শোনা যাচ্ছিল, মা-ছেলে দু’জনেরই নাকি মনোবাঞ্ছা- দলের সভাপতির দায়িত্ব গান্ধী পরিবারের বাইরে কারও কাঁধে সঁপে দেওয়া।
অনেক টালবাহানা এবং জি-২৩ গোষ্ঠীর বিদ্রোহের পর, অবশেষে বাইশের অক্টোবরে গান্ধী পরিবারের বাইরে কোনও একজনকে কংগ্রেসের সভাপতি বেছে নিতে নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু ভোটের সূত্রপাত থেকেই নানা টানাপোড়েন। নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা হওয়া মাত্রই সবার আগে প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম জানান দেন শশী থারুর। এরপরেই আসরে নামেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেও গেহলটকে পিছিয়ে আসতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ধরে রেখেই দলের সভাপতি হতে চেয়েছিলেন অশোক গেহলট। বাধ সাধেন সচিন পাইলট। গেহলট-পাইলটে সম্পর্ক কী ভীষণ মধুর, রাজস্থানের রাজনীতির খবর রাখা সবারই তা জানা। সচিন পাইলটকে সিংহাসনের সুখ থেকে বঞ্চিত রাখতে শেষ পর্যন্ত রণেভঙ্গ দিতে হয় অশোক গেহলটকে।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল শশী থারুরের বিপরীতে অশোক গেহলটই সোনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কার পছন্দের প্রার্থী। শশী থারুর এবং অশোক গেহলট সভাপতির দৌড়ে আছেন শুনে আসরে নামতে দেরি করেন নি বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও। কিন্তু দলের সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেও শেষে পিছিয়ে আসেন দিগ্বিজয়। দিগ্বিজয়ের মন পরিবর্তনের পেছনে সোনিয়া-রাহুলের হাত আছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। এমনকি অশোক গেহলটকে গোড়াতেই থামিয়ে দেওয়ার পেছনেও গান্ধী পরিবারের কারসাজি আছে বলে দিল্লির বাতাসে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে। তবে কি রাবার স্ট্যাম্প মল্লিকার্জুন খাড়্গেই সোনিয়া-রাহুলের পূর্ব নির্ধারিত কংগ্রেস সভাপতি? খাড়্গের পথ পরিস্কার রাখতেই কায়দা করে অথবা চাপ দিয়ে অশোক গেহলট ও দিগ্বিজয় সিংহকে লড়াই থেকে সরিয়ে দেওয়া?
খাড়্গের মাথায় সোনিয়া-রাহুলের হাত- এটা জানার পরেও ক’জন কংগ্রেসী শশী থারুরকে ভোট দেবেন? সোনিয়া-রাহুলের নেতৃত্বে নির্বাচনের পর নির্বাচনে দলের যতই ভরাডুবি হোক, এখনও কংগ্রেসের ভেতরে গান্ধী পরিবারের অনুগতদেরই আধিপত্য। এই পরিস্থিতিতে গো হারান না হারলেই শশীর মুখরক্ষা। শুধু একটা কথাই বলার বাকি- মায়েপোয়ে মিলে ভোটের এই রঙ্গ করার কোনও দরকার ছিল কি? দলে যখন তেনারাই শেষ কথা তখন এত রঙ-ঢঙ করে মাথায় একজন সাক্ষীগোপাল না বসালেও কংগ্রেসের চলত।
Photo credit- Verified facebook page of Rahul & Sonia Gandhi.
exJ2UBcC