পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার হয়ে নীরবে চোখের জল ফেলতে হয় নিরপরাধ নাগরিকদের। আদালতের এই রায় সাধারণ মানুষকে ভরসা জোগাবে বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
কলকাতা : ন্যায়ালয়ের কাছে এমন ন্যায়েরই প্রত্যাশা করেন নাগরিকেরা। মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে একজনের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন নদীয়ার চাপড়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর চন্দন সাহা। বিষয়টি নিয়ে মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার ওই সাব-ইন্সপেক্টরকে সাসপেন্ড করতে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে নিরীহকে হয়রানি করার অভিযোগ নতুন নয়। পুলিশের বিরুদ্ধে দলের কর্মী-সমর্থকদের মিথ্যে মাদক মামলা বা গাঁজা কেসে গ্রেফতার করার অভিযোগে সরব রাজ্যের বিরোধীরাও। চাপড়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর চন্দন সাহার বিরুদ্ধে ঘুষ চেয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্থানীয় এক বাসিন্দা। টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওই পুলিশ কর্তা তাঁকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটানোর হুমকি দেন বলে আদালতকে জানান অভিযোগকারী। নিজের দাবির সমর্থনে ফোনকলের রেকর্ডিং আদালতে জমা দিয়েছিলেন অভিযোগকারী। অভিযোগ পেয়েই রেকর্ডিং-এর সত্যতা পরীক্ষা করতে সিআইডি-কে নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। মোবাইলে ধারণকৃত ওই কথোপকথনে কোনও ভেজাল নেই বলে সিআইডি-র তরফে আদালতকে জানানো হলে, অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেরি করেন নি বিচারকেরা।
বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি পর্ব শেষ হতেই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দেন- ঘুষ দাবি করে হুমকি দেওয়া চাপড়া থানার সাব-ইন্সপেক্টরকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করতে হবে। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
সমাজে পুলিশের কাজ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। কিন্তু পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার হয়ে নীরবে চোখের জল ফেলতে হয় নিরপরাধ নাগরিকদের। ভয়ে অভিযোগ জানানোরই সাহস পান না অধিকাংশ ভুক্তভোগী। বহু অভিযোগ প্রমাণাভাবে ধামাচাপা পড়ে যায়। আবার অভিযোগ জানিয়ে আরও বড় বিপদ ডেকে আনেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় সাধারণ মানুষের মনে সাহস জোগাবে বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
Feature image is representational.