দলের কান্ডকারখানায় ঘরের মানুষ ও বন্ধুদের কাছে মান থাকছে না তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারের!
ডেস্ক রিপোর্ট : সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর গলায় দাবি করলেন- যে যাই বলুক, তৃণমূল কংগ্রেসই দেশের একমাত্র সাচ্চা পার্টি। মমতার এই দাবির কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের দলকে যে ভাষায় কমপ্লিমেন্ট দিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ জহর সরকার তাতে সন্ধ্যার পর রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে জোর চাঞ্চল্য পড়ে গেছে। জহর সরকার সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন- “দলের একটা সাইড পচে গিয়েছে। একটা সাইড পচা শরীর নিয়ে চব্বিশে লড়াই করা মুশকিল!” যাদের কারণে দলের অঙ্গের একটা দিকে পচন ধরেছে, তাদের বাদ না দিলে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে দলের ভাল ফলের কোনও আশা দেখছেন না প্রাক্তন এই আমলা।
ধর্মতলায় দলের ছাত্র সংগঠনের সভায় মমতা বলেন- দিল্লির লড়াইটা আমার শেষ লড়াই। এই লড়াই থেকে তাঁকে সরিয়ে দিতে দলের আরও কয়েকজন নেতাকে কেন্দ্রীয় সরকার ইডি-সিবিআই দিয়ে গ্রেফতার করাতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অথচ তাঁরই দলের সাংসদ মনে করেন- পচা দল নিয়ে চব্বিশে দিল্লি জয় দূর অস্ত! জহর সরকার ২০১৬ সালে প্রসার ভারতীর অধিকর্তা হিসেবে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ভারতের ইতিহাসের ওপর তাঁর পান্ডিত্য প্রশংসার দাবি রাখে। মাত্র একবছর আগে তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভায় যান জহর। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে রাজ্যসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন দীনেশ ত্রিবেদী। দীনেশের ছেড়ে যাওয়া আসনে জহর সরকারকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জহর সরকারকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দিয়ে সবাইকে বেশ চমকে দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জহর যেভাবে দলের বিরুদ্ধে বিষ উগড়ে দিচ্ছেন তাতে তৃণমূল সুপ্রিমোর পায়ের রক্ত রাগে মাথায় ওঠারই কথা। জহর সরকার এমন সময় প্রকাশ্যে দলের ভাবমূর্তি ধরে টান মারলেন, যখন তৃণমূলের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা দুর্নীতির অভিযোগে জেলে। এসএসসি-টেট নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে জেরবার সরকার। অনুব্রত মণ্ডলকে গরুপাচার মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে রাস্তায় তৃণমূল। খোদ মুখ্যমন্ত্রী অনুব্রতের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দুর্নীতি ইস্যুতে বিরোধীরা মমতা সহ দলের নেতাদের নাম করে বিষোদ্গার শুরু করায় বেলাগাম তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের মুখ। এঁদের মধ্যে আছেন বর্ষীয়ান সাংসদ অধ্যাপক সৌগত রায়ও।
নিজের দল সম্পর্কে জহর সরকারের মূল্যায়ণ বিরোধী শিবিরকে খুশি করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিব্রত তৃণমূল নেতৃত্ব কী ব্যবস্থা নেবে দলের বিশিষ্ট সাংসদের বিরুদ্ধে? সবে এক বছর হল রাজনীতিতে পা রেখেছেন জহর সরকার। এর মধ্যেই রাজনীতিতে বিতৃষ্ণা এসে গেছে প্রাক্তন আমলার। বাড়ির লোকেরা এবং বন্ধুবান্ধব তাঁকে রাজনীতি ছেড়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জহর। তিনি বলেন- “বাড়ির লোকেরা বলছে, তুমি ছেড়ে দাও। বন্ধুরা বলছে, তুই এখনও আছিস? কত পেয়েছিস?” প্রাক্তন আইএএস-এর আক্ষেপ- “এই ধরণের লাঞ্ছনা জীবনে আগে কখনও সইতে হয় নি!”
কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির কঠোর সমালোচকদের মধ্যে জহর সরকার অন্যতম। সুবক্তা। রাজ্যসভায় একাধিক ইস্যুতে তাঁকে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গেছে। এহেন হাই প্রোফাইল সাংসদের মুখ থেকে দলের বিরুদ্ধে এমন কঠিন শব্দ বেরোনোর ঘটনায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা প্রাথমিকভাবে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু কেউই এখনও পর্যন্ত জহরের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন নি। এমনকি মুখপাত্র কুণাল ঘোষও মন্তব্য করতে নারাজ।
Photo credit- official FB page of Mamata Banerjee and Jwahar Sircar.