জলপাইগুড়ি :একটি জীবিত প্যাঙ্গোলিন সহ দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করল বন দফতরের বৈকুণ্ঠপুর রেঞ্জ। বৃহস্পতিবার সকালে জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি সড়কের নৌকাঘাট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে প্যাঙ্গোলিনটিকে নেপালে পাচার করা হচ্ছিল। গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে পাচারের পরিকল্পনা ভেস্তে দেন বৈকুণ্ঠপুর রেঞ্জের কর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন রেঞ্জার সঞ্জয় দত্ত।
সিকিমের জঙ্গল থেকে প্যাঙ্গোলিনটিকে সংগ্রহ করেছিল পাচারকারীরা। পাহাড় থেকে শিলিগুড়িতে নেমে নেপাল হয়ে প্রাণীটিকে চিনে পাচারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল তারা। এদিকে নৌকাঘাট এলাকায় বন দফতরের কর্মীরা নজরদারি শুরু করেন। একটি হালকা খয়েরি রঙের মারুতি জেন গাড়িকে আসতে দেখে সন্দেহ হওয়ায় গাড়িটিকে দাঁড় করান বনকর্মীরা। গাড়ির ভেতরে তল্লাশি চালাতেই প্যাঙ্গোলিনটি দেখতে পান তারা। চালক সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত দু’জনের বাড়িই কালিম্পং জেলায় বলে জানা গেছে।
একবার নেপালে পাচার করে দিতে পারলে প্যাঙ্গোলিনটি বন দফতরের নাগালের বাইরে চলে যেত। মোটা টাকার বিনিময়ে বন্যপ্রাণীটিকে পাচারের রফা হয়েছিল বলে ধৃতদের জেরা করে বন দফতরের আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন। তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের পরিচয় গোপন রেখেছে বন দফতর। এদের পেছনে আরও অনেকেই জড়িত বলে অনুমান। ধৃতদের জেরা করে তাদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। ধৃত দুই পাচারকারীকে শুক্রবার আদালতে তোলা হবে। এদের রিমান্ডে নিতে চায় বন দফতর।
ফোলিডোটা বর্গের আঁশযুক্ত এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটির মতো নিরীহ প্রাণী পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পিঁপড়ে,পিঁপড়ের ডিম খায় বলে এদের আরেক নাম পিপীলিকাভূক। সর্বাঙ্গ মোটা আঁশ দিয়ে ঢাকা। তাই বাঙালিরা এর নাম দিয়েছে বনরুই। মানুষের লালসার শিকার হয়ে অবলুপ্ত হতে চলেছে এহেন নিরীহ প্রাণীটিও। ডুয়ার্স ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গলে প্যাঙ্গোলিনের দেখা মেলে। চোরাশিকারীরা হামেশাই জীবিত প্যাঙ্গোলিন অথবা প্যাঙ্গোলিন মেরে এর আঁশ ও চামড়া পাচার করে দেয় মধ্যপ্রাচ্য এবং চিন সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। প্যাঙ্গোলিনের চামড়া ও আঁশের প্রতি দুর্বলতা আছে মধ্যপ্রাচ্যের আরব শেখ ও চিনাদের। চামড়া ও আঁশ দিয়ে নানা ওষুধ তৈরি করে তারা। মোটা টাকার লোভে আমাদের দেশের জঙ্গল থেকে জীবিত প্যাঙ্গোলিন অথবা মৃত প্যাঙ্গোলিনের দেহাংশ পাচার করে দেয় চোরা কারবারীরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেপাল হয়ে দেহাংশ পৌঁছে যায় যথাস্থানে।
ভিডিওতে দেখুন-
Video and Photo- Reporter.