আদালতের চাপেই ন্যায় মিলল বলে মনে করছেন শুভেন্দু অধিকারী।
কলকাতা : বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ সাত বিজেপি বিধায়কের উপর থেকে বৃহস্পতিবার সাসপেনশন তুলে নিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মার্চে বাজেট অধিবেশন চলাকালীন পর পর দুই দফায় সাত বিজেপি বিধায়ককে এক বছরের জন্য বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। এর মধ্যে বগটুই গণহত্যাকান্ড নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে একই দিনে সাসপেন্ডেড হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী সহ পাঁচ বিজেপি বিধায়ক।
বগটুই গণহত্যাকান্ড নিয়ে অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে গত ২৯ মার্চ বিধানসভার ভেতরে তৃণমূলের বিধায়কদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন বিজেপির বিধায়কেরা। কথা কাটাকাটি হাতাহাতিতে গড়ায়। ঘটনায় বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা এবং চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মাল আহত হন। শাসকদলের বিধায়কেরা প্রথমে বিরোধীদের উপর চড়াও হলেও অধ্যক্ষের রোষের মুখে পড়তে হয় কেবল বিজেপির বিধায়কদের। এমনই অভিযোগ ছিল বিধানসভার বিরোধী দলনেতার।
সাসপেনশন প্রত্যাহার নিয়েও কম জলঘোলা হয় নি। তাঁদের বেআইনি ভাবে বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করেছেন অধ্যক্ষ- এই ছিল বিজেপির বিধায়কদের অভিযোগ। সাত বিধায়কের উপর থেকে সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে হাইকোর্টে যায় বিজেপি। আদালত বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে বিধানসভার নিয়ম মেনেই এগোতে বলে বিজেপি বিধায়কদের। আদালতের নির্দেশে গত সোমবার বিধানসভায় বিজেপি প্রস্তাব আনলেও, প্রস্তাবে ত্রুটি আছে জানিয়ে তা বাতিল করে দেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধে। প্রস্তাবে কোনও ভুল ছিল না বলে দাবি করেন শুভেন্দু। সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বাদল অধিবেশনেরে শুরু থেকেই প্রতিবাদী মেজাজে দেখা যায় বিজেপিকে। বিধানসভা চত্বরে লাগাতার বিক্ষোভ চলছিল বিজেপি বিধায়কদের।
আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিজেপি ফের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে দুটি প্রস্তাব আনলে ট্রেজারি বেঞ্চ নমনীয় ভূমিকা নেয়। প্রস্তাবে সায় দেয় তৃণমূল। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা আর তিক্ততা চাই না। সকলকে বলব প্রস্তাব সমর্থন করুন। আমরা সকলে মিলে বিধানসভা চালাব। কাউকে বাইরে রেখে বিধানসভা চালাতে চাই না। কিন্তু বিধানসভা যেমন বিরোধীদের ছাড়া চলতে পারে না। তেমনই বিরোধীদেরও কিছু দায়িত্ব, কর্তব্য আছে, যা তাঁদের পালন করা উচিত।” ধ্বনিভোটে বিজেপির আনা দুটি প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলে বিজেপির সাত বিধায়কের উপর থেকে সাসপেনশনের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, চিফ হুইপ মনোজ টিগ্গা, দীপক বর্মণ, শঙ্কর ঘোষ, নরহরি মাহাতো এবং মিহির গোস্বামী সহ সাত বিজেপি বিধায়কের অধিবেশনে যোগ দিতে আর কোনও বাধাই রইল না। ঘটনার উপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে অধ্যক্ষ জানান, “আগেই অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার ছিল না। বিধানসভার সমস্যা তো বিধানসভাতেই মিটিয়ে নেওয়া যায়।” সাসপেনশন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়ে বিজেপির হাইকোর্টে যাওয়ার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করেই অধ্যক্ষ এই কথা বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সাত বিধায়কের সাসপেনশন প্রত্যাহারের ঘটনাকে নিজেদের বিজয় হিসেবেই দেখছে বিজেপি। আদালতের চাপেই সাসপেনশনের বেআইনি নির্দেশ অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হলেন বলে মনে করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল ও ফেসবুকে করে শুভেন্দু জানিয়েছেন- “সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করার প্রয়াসের বিরুদ্ধে আমরা মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পরে আমরা মোশন পেশ করি। আমরা কৃতজ্ঞ যে যখনই আইন ও সংবিধান কে বিড়ম্বনায় ফেলার অপচেষ্টা হয়, তখন বিচার ব্যবস্থা পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সম্মাননীয় বিচার ব্যবস্থাকে আমার কুর্নিশ। আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে ওনাদের অধিকারের জন্য আমাদের আওয়াজ উঠতে থাকবে, কেউ দমাতে পারেনি আর পারবে না।”