নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অল্পস্বল্প দুর্নীতি নতুন নয়। বাম আমলেও হয়েছে। কিন্তু এই জামানায় যেটা হচ্ছে সেটা কহতব্য নয়। রাজ্যের এমন কোনও পাড়া-এলাকা-গ্রাম বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে ছেলেমেয়ের একটা চাকরির জন্য কোনও না কোনও অভিভাবক শাসকদলের নেতাদের কাছে টাকা জমা রাখে নি। এবং টাকার অঙ্কটা শুরু পাঁচ লক্ষ থেকে। ১০-১১লক্ষও হামেশাই লেনদেন চলে। ঘুষ যে দেয় সেও যেই হেতু সমান অপরাধ করে তাই ছেলেমেয়েদের চাকরি না জুটলেও অধিকাংশই চেপে যায়। ঘুষ দিয়ে যতজনের চাকরি হয়েছে, ঘুষ দিয়েও চাকরি হয় নি তার অনেক অনেক, অনেক গুণ বেশি। হাইকোর্ট একটা জুডিশিয়াল কমিশন বসাক। বলুক যারা যারা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এইভাবে টাকা দিয়েও চাকরি পায় নি তারা এসে কমিশনের সামনে অভিযোগ জানাক। তাদের নাম-পরিচয় গোপন থাকবে। মোট টাকার অ্যামাউন্ট দেখে বিচারপতিদের চোখ কপালে উঠে যাবে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। শিক্ষক-গ্রুপ সি- গ্রুপ ডি। কোনও একটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার লেশ মাত্র রাখে নি। কাকে ছেড়ে কাকে ধরবেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পর্যন্ত ফেঁসে যাচ্ছেন!
চাকরি পেতে টাকার লেনদেন এই রাজ্যে এখন ওপেন-সিক্রেট একটা ব্যাপার। সবাই সব জানে। সরব হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু মাত্র একটা মানুষ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথাসাধ্য প্রতিকার দিয়ে গেলেন। বিচারকের চেয়ারে বসে একা নাড়িয়ে দিলেন। জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সক্রিয় না হলে আজ এত দূর পর্যন্ত জল গড়াতোই না। আজ বাংলার মানুষ দু’হাত ভরে এই বিচারপতিকে আশীর্বাদ করছেন। দিনের পর দিন ন্যায়ের দাবিতে খোলা আকাশের নিচে বসে থাকা ছেলেমেয়েগুলি অবশেষে বিচার পাচ্ছে দেখে অভিভাবকেরা অভিভূত। চাকরি বঞ্চিত শিক্ষিত বেকার যুবকেরা বলছেন- উনি আমাদের ভগবান। জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের এক-একটি রায় যেন দুর্নীতিবাজদের দুর্ভেদ্য দুর্গ লক্ষ্য করে এক-একটি কামানের গোলা। আসলে এইসব রায় কোনও গতানুগতিক বিচার প্রক্রিয়ার অংশ নয়। বরং বলা চলে-ইট ‘স অ্যা জুডিশিয়াল রিবেলিয়ান অ্যান্ড রেভিলিউশন ক্যারেইড আউট বাই অ্যা সিঙ্গেল জাজ ওনলি।
এই বিপ্লব, এই বিদ্রোহ বাংলার যৌবন ধ্বংসকারী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। আপনি যদি এই বিপ্লব, এই বিদ্রোহের পক্ষে না থাকেন তবে ধরে নিতে হবে আপনি দুর্নীতিবাজদের পক্ষে। এখন নিরপেক্ষ থাকারও সময় নয়।
Feature Image is Representational.