দেশকে, সরকারকে, ক্ষমতাকে কখনও বাপের সম্পত্তি মনে করতে নেই। যদিও ক্ষমতাকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে না করতে শিখতে পারাটা খুবই শক্ত কাজ। কারণ, পিতৃদত্ত প্রাণের মায়ার চেয়ে ক্ষমতার মায়া কম বড় নয়। ক্ষমতার ধর্মই হচ্ছে, ইহা সর্বদাই তোমার ইগোকে চুলকে যাবে। মানুষের অহং মানুষকে পথে বসাবেই। তাই ব্যক্তিমানুষ যতই মহান হোন না কেন তাঁর উপর অধিক নির্ভর না করে ঠিক করতে হয় ব্যবস্থাকে। শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই-কে পর্যুদস্ত করার পর মাহিন্দা রাজাপক্ষে সিংহলি জনগোষ্ঠীর মহানায়কে পরিণত হন। তারপর এই উপমহাদেশের মহানায়ক এবং মুক্তিসূর্যরা যা যা করে থাকেন তার সবই একে একে করে ফেলেন মাহিন্দা। দেশকে পরিবার মনে করে পরিবারের হাতেই দেশটাকে তুলে দেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। পুরো শ্রীলঙ্কা সরকারটাই চলত রাজাপক্ষে পরিবারের ড্রয়িংরুম, ডাইনিংরুম থেকে।
ব্রিটিশ উপনিবেশিকদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গত ৭৪ বছরে অনেক উত্থান-পতন এমনকি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মধ্যেও শ্রীলঙ্কায় সাংবিধানিক ব্যবস্থা মোটের উপর বজায় ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই ব্যবস্থা মাহিন্দা রাজাপক্ষের রাজা হয়ে ওঠা আটকাতে পারে নি। দল, প্রশাসন, ব্যবসাবাণিজ্য, বিনিয়োগ, খেলা- সবখানে নিজের গুষ্টির লোক বসিয়ে দিয়েছিলেন মাহিন্দা। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পেছনে অনেক কারণ আছে। কিন্তু রাজাপক্ষে অন্যতম কারণ। পাপের কলস যখন পূর্ণ হয় তখন তা আপনা থেকেই উল্টে যায়। ছয়মাস আগেও রাজাপক্ষে পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে নির্যাতন ছিল অবধারিত। কিন্তু আজ রাজাপক্ষে পরিবারের কাউকে রাস্তায় দেখতে পেলে পিটিয়েই মেরে ফেলবে জনতা। মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভাগলবা। ভাই গোতাবায়া এখনও রাষ্ট্রপতির চেয়ারে। পরিবারের বাকি সদস্যরা হাওয়া। প্রাণভয়ে সবাই নাকি নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। অপরাধের যা বোঝা তাতে রাজাপক্ষে পরিবারের সবকটাকে ধরে আমৃত্যু কয়েদে দেওয়া লাগে। নজরুল কবেই লিখেছিলেন-“চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়।/ আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়।” কিন্তু সময় থাকতে কে রাখে মনে?
বলি, কিছু মিলটিল পান?
Photo ( cartoon ) credit- Daily Mirror