দিন দুয়েক আগে থানায় ডেকে নিয়ে তপন কান্দুকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিলেন ঝালদা থানার আইসি! এমনই অভিযোগ নিহত ঝালদা পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলরের স্ত্রী পূর্ণিমার। পূর্ণিমা কান্দু নিজেও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর। নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রীর অভিযোগের পর খুনের ঘটনায় জড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশের নামও।
ডেস্ক রিপোর্ট :উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি এবং পুরুলিয়ার ঝালদায় একই দিনে খুন সদ্যজয়ী দুই কাউন্সিলর! পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর অভিযোগ নিহতের স্ত্রীর। রবিবার সন্ধ্যায় বাঘমুন্ডির রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়াবার সময় খুন হন চারবারের বিজয়ী ওই কংগ্রেসী কাউন্সিলর। কয়েকজন দুষ্কৃতী বাইকে চেপে এসে একদম সামনে থেকে তাঁকে গুলি করে।আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝাড়খণ্ডের রাঁচির নিয়ে যাওয়ার পথেই কাউন্সিলর তপন কান্দুর মৃত্যু হয়। তপনবাবুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু ঝালদা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর। স্বামীর খুনের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন পূর্ণিমা।
অনেক চেষ্টার পরেও ঝালদা পুরসভা বিরোধী শূন্য করতে পারে নি তৃণমূল। ১২ ওয়ার্ডের ঝালদা পুরসভায় কংগ্রেস ও তৃণমূল পাঁচটি করে ওয়ার্ড জিতেছে। দুটি গিয়েছে নির্দলের দখলে। ফল ত্রিশঙ্কু হওয়ার পরেই ঝালদায় বোর্ড দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শাসক শিবির। শাসকদলকে পুরসভা পাইয়ে দেওয়ার কাজে পুলিশও সামিল হয় বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। সোমবার সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে পূর্ণিমা কান্দু অভিযোগ করেন, ”ফল প্রকাশের পর থেকেই ঝালদা থানার আইসি তপনকে তৃণমূলে যোগদানের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।” তপন তৃণমূলে নাম না লেখালে তাঁর পরিণতি খারাপ হবে বলেও আইসি হুমকি দিয়েছেন বলে পূর্ণিমার অভিযোগ।
নিহত তপন কান্দুর স্ত্রীর দাবি- দিন দুয়েক আগে তাঁর স্বামীকে থানায় ডেকে নিয়ে আইসি হুমকি দেন। সেই সময় থানায় তপনের ভাইপো দীপক কান্দু, দাদা নরেন কান্দু সহ তৃণমূলের আরও কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। ভাইপো দীপক তৃণমূলের টিকিটে কাকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। আইসি তপন কান্দুকে হুমকি দেন, তৃণমূলে যোগ না দিলে তোমায় তুলে নেবো- এমনই অভিযোগ নিহত তপনের স্ত্রী পূর্ণিমার। উল্লেখ্য, সোমবার তপন কান্দুকে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভাইপো দীপক ও দাদা নরেনকে আটক করেছে ঝালদা থানার পুলিশ।
ঝালদা পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর খুনের ঘটনার পরপরই তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। যেনতেন প্রকারে ঝালদা পুরসভা দখলের উদ্দেশ্যেই কংগ্রেসের কাউন্সিলরকে খুনন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অধীরবাবু। একজন নির্দল কাউন্সিলরকে দলে টানার পরেও বোর্ড গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে নি তৃণমূল। এই কারণেই কি বিরোধী দলের কাউন্সিলরকে দলে টানার জন্য হুমকি এবং তাতে কাজ না হওয়ায় চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার মতো চরম সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের।
নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রীর অভিযোগ সত্য হলে তো ভয়ঙ্কর কথা! থানার আইসি কীভাবে বিরোধী দলের একজন কাউন্সিলরকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য থানায় ডেকে চাপ দিতে পারেন? নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুও কাউন্সিলর। পূর্ণিমার অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে রাজনৈতিক মহল। পরপর চারবারের জেতা কাউন্সিলর তপন কান্দু। এই পরিসংখ্যানই তপনের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিচ্ছে। এবারের কঠিন লড়াইয়েও তপনকে হারাতে ব্যর্থ হয় তৃণমূল। সেই রাগেই কি দলের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই কংগ্রেস নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হল?
সোমবার নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলরের বাড়িতে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। খুনের নেপথ্যে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করে বিচারের জন্য তোলা না হলে কংগ্রেসে তীব্র আন্দোলনে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অধীর। এই খুনের কিনারা না হলে রাজ্যের আর কোথাও দলের কাউন্সিলরদের জীবনের কোনও নিরাপত্তা থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
বিরোধী কাউন্সিলরকে দলত্যাগে চাপ দিতে পুলিশকে ব্যবহার এবং প্রয়োজনে বিরোধী দলের কাউন্সিলরকে খুন করেও পুরবোর্ড দখলের চেষ্টা- এই দুই অভিযোগ সত্য হলে বলতে হয় পশ্চিমবঙ্গে সামনের দিনগুলি ভয়াবহ।
ছবি- সংগৃহীত।