বৃহত্তর স্বার্থে বারে বারে তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিতে নারাজ আদালত। গরু পাচারকান্ডে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে অনুব্রতের কোনও সমস্যা থাকার কথা নয় বলেই মনে করেন বিচারক।
কলকাতা:গরু পাচারকান্ডে সিবিআইয়ের জেরা থেকে বাঁচতে হাইকোর্টে গিয়েও এ’বার আর লাভ পেলেন না অনুব্রত মণ্ডল। ১৪ মার্চ বেলা এগারোটায় অনুব্রতকে নিজাম প্যালেসে হাজির হতে বলেছে সিবিআই। গত ৭ মার্চ কেষ্টকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর আগে তিনবার সিবিআইয়ের তলব পেয়েও অসুস্থতার কথা বলে গরহাজির থেকেছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি।
জেরার মুখোমুখি হলেই সিবিআই তাঁকে ধরে গারদে ভরবে- এই ভয়ে রক্ষাকবচ চেয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে আবেদন জানান অনুব্রত মণ্ডল। শুক্রবার সকালে ছিল মামলার শুনানি। দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর অনুব্রতের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। আদালত বারবার তদন্তের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না- সাফ জানিয়ে দেন তিনি। বিচারপতি বলেন- ” বারবার আদালতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কোনও তদন্ত প্রক্রিয়ায় এইভাবে সিবিআইয়ের হাত বাঁধতে পারে না আদালত।”
আদালতকে কাজে লাগিয়ে তাঁর মক্কেল আর হাজিরা এড়াতে পারবেন না, এটা বুঝতে পেরেই অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী বিচারপতিকে বলেন- অনুব্রত মণ্ডল তদন্তের কাজে সিবিআইকে সবরকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যেন কোনও কঠোর পদক্ষেপ না করা হয়। যদিও অনুব্রতের আইনজীবীর এই আবেদনেও কান দেন নি বিচারপতি। এইভাবে বারবার আদালতকে ঢাল করে তৃণমূল নেতার সিবিআইকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা যে তিনি ভাল চোখে দেখছেন না তা বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার মন্তব্য থেকেই পরিস্কার। বিচারপতি রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করে বলেন-” অনুব্রত মণ্ডল যে অভিযোগ করেছেন, আমি তা মানতে পারছি না। সিবিআই মানেই ড্রাগন নয়। বৃহত্তর স্বার্থের কথাও তো ভাবতে হবে। আগে আপনাকেকে দুর্গাপুরে ডাকা হয়েছিল। কলকাতাতেও ডাকা হয়েছিল। আপনি যান নি। এ বার তো আপনাকে নিজাম প্যালেসে ডাকা হয়েছে। আপনার সমস্যাটা কোথায়?”
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেই অনুব্রত মণ্ডল অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার হাজিরার তারিখ পেরিয়ে গেলেই তিনি তাজা হয়ে ওঠেন। এটা লক্ষ্য করেছে সিবিআই। এদিন মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন- ” উনি সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওঁর ফেসবুকই প্রমাণ। শুধু সিবিআই ডাকলেই যত রকমের সমস্যা দেখা দেয় ওনার।” অনুব্রত মণ্ডলের যদি এতই গ্রেফতারির আশঙ্কা থাকে তবে উনি আগাম জামিনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করছেন না কেন? জানতে চান সিবিআইয়ের আইনজীবী।
স্রেফ জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বাঁচতেই যে অনুব্রত মণ্ডল রক্ষাকবচ চাইছেন এটা বুঝেই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি। সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে গ্রেফতারের কোনও সম্ভাবনা খুঁজে পায় নি আদালত। তাই জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার কোনও কারণ দেখছে না সিঙ্গেল বেঞ্চ। তবে অনুব্রত চাইলে আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে আবেদন জানাতে পারেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।
আগাম জামিনের আবেদন জানিয়ে শুক্রবারই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা অনুব্রত মণ্ডলের। আদালতের নির্দেশেই গরু পাচারকান্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের জালে গরু পাচারচক্রের অন্যতম পান্ডা এনামুল হক। গরু পাচারের টাকার ভাগ এনামুলের হাত ঘুরে রাজ্যের শাসকদলের অনেকের কাছেই গিয়েছে বলে সিবিআইয়ের সন্দেহ। তদন্তের স্বার্থে তৃণমূলের সাংসদ অভিনেতা দেবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। দেব তদন্তে সহযোগিতা করলেও সিবিআই ডাকলেই গড়িমসি করছেন কেষ্ট। আর এই কারণেই রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন – সিবিআইয়ের জেরাকে ডাকাবুকো কেষ্টর এত ডর কেন?
Feature Image is symbolic.