এই নিয়ে চতুর্থবার অনুব্রত মণ্ডলকে গরু পাচারকান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করল সিবিআই। আগের তিনবার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হড়কে গেছেন কেষ্ট। এইবার অনুব্রত মণ্ডল কী করেন, সেই দিকেই সবার নজর।
কলকাতা :গরু পাচারকান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ফের অনুব্রত মণ্ডলকে ডাকল সিবিআই। ১৪ মার্চ কলকাতার নিজাম প্যালেসে কেষ্টকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। গরু পাচারকান্ডে এই নিয়ে চতুর্থবার অনুব্রতকে নোটিশ পাঠালো সিবিআই। আগের তিনবারই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়িয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল।
সিবিআই ডাকলেই অসুস্থ কেষ্টদা
এমনিতে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে মুখে খই ফোটে কেষ্টর। তিনি ডায়ালগ ঝাড়লেই সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ধমকেচমকে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে ‘কেষ্ট’ অদ্বিতীয়। সদ্য সমাপ্ত পুরভোটে বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করেছেন বলেকয়েই। কিন্তু সিবিআইয়ের নোটিশ দুয়ারে আসা মাত্রই অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায় বীরভূম জেলা তৃণমূলের এই দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতাকে।
গরু পাচারকান্ডে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে অনুব্রতের কাছে তিন নম্বর নোটিশটি এসেছিল গত ১০ ফেব্রুয়ারি। ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁকে নিজাম প্যালেসে আসতে আসতে বলেছিল সিবিআই। সিবিআইয়ের নোটিশ আসার আগের দিনও অনুব্রতকে তরতাজাই দেখতে পান সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। কিন্তু নোটিশ পাওয়ার পরেই কেষ্টদাকে পাওয়া যায় বোলপুরের সরকারি হাসপাতালে। হাসপাতালে শয্যাশায়ী উন্মুক্ত উদর অনুব্রত মণ্ডলের সেই ছবি ভাইরাল হতে দেরি হয় নি। সে’সময় অনুব্রতের ব্লাড প্রেসার, সুগার, কোলস্টেরল সবই নাকি হাই পেয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
হাজিরার দিন পেরোলেই সুস্থ অনুব্রত
সিবিআইয়ের নোটিশ পিরিয়ড পেরোনোর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ফের স্বমহিমায় দেখা যায় বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে। পুরসভার প্রচারে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দাপটে। স্বভাবসুলভ রসিকতাতেও ভাঁটা পড়ে নি। ২৭ ফেব্রুয়ারি পুরভোটের দিন এক অনুগামীর স্কুটির পেছনে বসে দিব্যি ভোটও দিয়ে আসেন কেষ্ট। পুরভোটের ফল বেরোয় ২ মার্চ। বীরভূমের পাঁচ পুরসভা হেলায় তৃণমূলকে পাইয়ে দেওয়ার পর দন্ত বিকশিত করে সংবাদমাধ্যমের সামনে যখন অনুব্রত মণ্ডল আবির্ভূত হলেন তখন তাঁকে দেখে অসুস্থ বলে মনে হয় নি।
সাত মার্চ সকালে সিবিআই সূত্রে ফের অনুব্রতকে নোটিশ পাঠানোর কথা জানতে পেরেছে সংবাদ মাধ্যম।
নোটিশ পাওয়ার পর কেষ্টদার পালস রেট কত চলছে বা অক্সিজেন লেভেল কেমন, এখনও জানতে পারেন নি সাংবাদিকেরা। তবে এবারও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুব্রত মণ্ডল হাজিরা এড়ানোর চেষ্টা করলে সিবিআই কঠোর হবে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে।
এবারও কি হড়কে যাবেন কেষ্ট?
আদালতের নির্দেশেই গরু পাচারকান্ডের তদন্তে নেমেছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের জালে গরু পাচারচক্রের মূল চাঁই এনামুল হক। গ্রেফতার হয়েছেন বিএসএফের কমান্ডেন্ট সতীশকুমারও। আরও একাধিক বিএসএফ আধিকারিক সিবিআইয়ের স্ক্যানারে আছেন বলে খবর। গরু পাচারের টাকার ভাগ এনামুলের মাধ্যমে রাজ্যের শাসকদলের একাধিক নেতার হাতে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ। গরু পাচারকান্ডে তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেবকেও জেরা করেছে সিবিআই। দেবের বিরুদ্ধে অবশ্য তদন্তে অসহযোগিতা করার কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু সিবিআইয়ের হাত থেকে বারেবারেই পিছলে যাচ্ছেন অকুতোভয় কেষ্টদা।
গরু পাচারকান্ডের তদন্তে নেমে ধৃত এনামুলের সঙ্গে অনুব্রতের যোগাযোগ থাকার কিছু প্রমাণ সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এই নিয়েই বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তাঁরা। হাজিরা দেওয়ার তারিখ পেরিয়ে গেলেই অনুব্রত মণ্ডল যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তা সিবিআই আধিকারিকদের দৃষ্টি এড়ায় নি।সাম্প্রতিক সময়ে অনুব্রত মণ্ডলের মধ্যে অসুস্থতার কোনও লক্ষণ নেই- এটাও লক্ষ্য করছে সিবিআই। তাই চতুর্থবারও অনুব্রত অসুস্থতার বাহানায় জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে গেলে সিবিআই আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে বলে খবর। বিষয়টিকে আদালত অবমাননার সমতুল্য বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীরা। আপাতত সবার নজর অবশ্য বোলপুরে কেষ্টদার গতিবিধির উপর।
Photo- Collected.