পতনের মুখে কিয়েভ। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি রাশিয়ার দখলে। পরাজয় অনিবার্য বুঝে নরম প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমি জেলেনস্কি। গোপন বাঙ্কার থেকে পুতিনের উদ্দেশ্যে আলোচনার বার্তা জেলেনেস্কির। জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ইউক্রেনিয়ান সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান পুতিনের।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একেবারে দোরগোড়ায় রুশ সেনাবাহিনী। শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তাদের সেনারা কিয়েভ থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে। রাজধানী কিয়েভের উত্তরপশ্চিমে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হোস্টোমেল এরোড্রোমের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। কৌশলগতভাবে এই এরোড্রোমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন সমর বিশেষজ্ঞরা। ঝাঁকে ঝাঁকে রুশ প্যারাট্রুপাররা সেখানে অবতরণ করেছে বলে খবর। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী প্রবল প্রতিরোধ করেও রুশ ফৌজের আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ। মুহুর্মুহু বিমান হামলার পাশাপাশি স্থলেও দাপট দেখাচ্ছে রাশিয়া। যে কোনও মুহুর্তে কিয়েভের পতনের আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।
এদিকে কিয়েভের পতন আসন্ন বুঝতে পেরে বিলম্বে বোধোদয় হয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমি জেলেনস্কির। জেলেনস্কি এখন গোপন বাঙ্কারে। দুয়ারে দাঁড়িয়ে রাশিয়ান সেনা। শুক্রবার বিকেলের দিকে প্রচারিত একটি ভিডিয়ো বার্তায় যুদ্ধ বন্ধ করে ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনায় বসার আবেদন জানিয়েছেন জেলেনেস্কি।
ভিডিয়ো বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমি জেলেনস্কি পুতিনের উদ্দেশ্যে বলেছেন- ” আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। এখন ইউক্রেন জুড়ে যুদ্ধ চলছে। দোহাই মানুষের মৃত্যু বন্ধ করে আসুন আমরা আলোচনার টেবিলে বসি।”
ন্যাটো’তে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি কোনও মতেই বরদাস্ত করতে রাজি নয় রাশিয়া। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি ঘনিয়ে উঠতেই রাশিয়ার দিক থেকে একাধিকবার ইউক্রেনকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ন্যাটো নিয়ে বিশেষ নমনীয়তা দেখান নি জেলেনেস্কি। জেলেনেস্কির ধারণা ছিল রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করলেই আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো পাশে এসে দাঁড়াবে। পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পর সেই ভুল ভাঙতেই সম্বিত ফিরেছে প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমি জেলেনস্কির।
ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাশিয়ার কোনও অনাগ্রহ নেই। কিন্তু রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সাফ কথা- আলোচনা চাইলে ইউক্রেনের সেনাকে অস্ত্র সংবরণ করতে হবে। পাল্টা প্রতিরোধ থেকে সরে আসতে হবে। ৬ লক্ষ ৩৬২৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ইউক্রেন ছিল পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ইউক্রেনের ১৭ শতাংশের বেশি অধিবাসী রুশ জাতিগোষ্ঠীর। এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য থাকা লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া এবং ল্যাটেভিয়ার মতো বাল্টিক রাষ্ট্রগুলি বহু আগেই ন্যাটো জোটের ছত্রছায়ায় এসেছে।
আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো একটি সামরিক জোট, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলতেই যা তৈরি করা হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পরেও ন্যাটোর সম্প্রসারণকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করে রাশিয়া। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ গ্রহণ করলেই সেখানে আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি বাড়বে। যা নিয়েই পুতিন প্রশাসনের ঘোরতর আপত্তি।
এদিকে ইউক্রেনের ভেতরে থাকা রুশ জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকেরা নিজেদের অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে জুড়তে মরীয়া। এ’ভাবেই রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযুক্তি ঘটে ২০১৪ সালে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নামে ইউক্রেনের আরও দুটি রুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে। সমাজতন্ত্রের পতন হলেও রুশ অস্মিতার মৃত্যু ঘটে নি। ভ্লাদিমির পুতিনকে কট্টর রুশ জাতীয়তাবাদী হিসেবেই চেনে আন্তর্জাতিক মহল। চলতি সামরিক অভিযানের মধ্যেই দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তিও পুতিনের লক্ষ্য বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
পুতিনকে তাঁর লক্ষ্যে অবিচল বলেই মনে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমি জেলেনস্কি ও তাঁর প্রশাসনকে উৎখাত করতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পুতিন। দ্য মস্কো টাইমসের পোর্টালে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, শুক্রবার এক বার্তায় ইউক্রেনের বর্তমান সরকারের নেতাদের সন্ত্রাসবাদী এবং মাদকাসক্ত ও নব্য নাৎসীদের একটি চক্র বলে বর্ণনা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
Photo Credit- The Gurdian, Washington Post and The Moscow Times. Feature image is representational.