পদ্মে কাঁটা আছে জানা কথাই। এখন দেখা যাচ্ছে পদ্ম সম্মানও যথেষ্টই কন্টকময়। পদ্মভূষণের কাঁটায় চার রাজ্যের ভোটের আগে শত্রুর ঘরে কোন্দল আরও জোরালো হয়েছে দেখে দিল্লির তীব্র ঠান্ডাতেও বেশ উষ্ণই থাকার কথা দীনদয়াল ভবনের কর্তাদের।
বিশেষ প্রতিবেদন : গুলাম নবি আজাদকে পদ্মভূষণ দিয়ে কংগ্রেসের ঘরের কোন্দল যেন আরও উস্কে দিল মোদী সরকার। পদ্মভূষণ সম্মান গ্রহণে সম্মত হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে আজাদকে ট্যুইটারে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। বুধবার জম্মু- কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই দাঁড়ালেন আরেক কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। সিব্বলের আগে গতরাতেই পদ্মভূষণ সম্মান পাওয়ায় আজাদকে বাধাই দিয়েছেন শশী থারুরও। সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় পদ্ম প্রাপকদের তালিকা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সরকার। আজাদ সানন্দে পদ্ম সম্মান গ্রহণে সম্মত হলেও পত্রপাঠ তা প্রত্যাখ্যান করেন বুদ্ধদেব।
গুলাম নবি আজাদ ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য – দু’জনের সঙ্গেই বিজেপির আদর্শগত ব্যবধান মেরু সদৃশ। কিন্তু দুই বর্ষীয়ান রাজনীতিককেই সামাজিক কাজে অবদানের জন্য রাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পদ্মভূষণ সম্মান গ্রহণ করে নিজেদের দলের অনেকেরই বিরাগভাজন হয়েছেন গুলাম নবি আজাদ। রাতেই আজাদকে ঘুরিয়ে কটাক্ষ করে ট্যুইট ছাড়েন জয়রাম রমেশ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যানের উদাহরণ টেনে রমেশ লিখেন- ” বুদ্ধদেববাবু আজাদ রয়েছেন, গুলাম হতে চান নি। ” কংগ্রেসের অন্দরে জয়রাম রমেশ সোনিয়া-রাহুল শিবিরের লোক বলেই পরিচিত। আর আজাদ সোনিয়া-রাহুল বিরোধী কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম একজন।
মঙ্গলবার রাতে গুলাম নবি আজাদ দলের মধ্যে থারুর বাদে আর কাউকে সমর্থক খুঁজে না পেলেও বুধবারের সকাল তাঁকে নিরাশ করে নি। পদ্মভূষণ সম্মান স্বীকার করায় আজাদের কোনও দোষ দেখতে পাচ্ছেন না কপিল সিব্বল। উল্টে পদ্মভূষণ পাওয়ায় ট্যুইট করে গুলাম নবি আজাদকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। আজাদকে কংগ্রেস উপেক্ষা করায় দলকে খোঁচা দিয়ে ট্যুইটে সিব্বল লেখেন- ” জনস্বার্থে আজাদের অবদানকে প্রয়োজন বলে মনে করে নি কংগ্রেস। এটা খুবই হাস্যকর।” উল্লেখ্য সিব্বলের সঙ্গেও সোনিয়া-রাহুলের সম্পর্ক তলানিতে। সিব্বলের মতোই আজাদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ খোলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরও। মঙ্গলবার রাতে ট্যুইটারে থারুর লিখেন- ”পদ্মভূষণের জন্য আজাদকে অভিনন্দন। জনসেবার জন্য বিপক্ষ সরকারের কাছ থেকে এই সম্মান লাভ খুবই ভাল।” আজাদ ও সিব্বলের মতো আইয়ারও সোনিয়া-রাহুলের নেতৃত্বের প্রতি বিরক্ত।
দেখা যাচ্ছে যে, গুলাম নবি আজাদের পদ্মভূষণ ঘিরে জাতীয় কংগ্রেসের ঘরোয়া ঝামেলা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর নেতারা আজাদের পাশেই। পদ্মে কাঁটা আছে জানা কথাই। এখন দেখা যাচ্ছে পদ্ম সম্মানও যথেষ্টই কন্টকময়। পদ্মভূষণের কাঁটায় চার রাজ্যের ভোটের আগে শত্রুর ঘরে কোন্দল আরও জোরালো হয়েছে দেখে দিল্লির তীব্র ঠান্ডাতেও বেশ উষ্ণই থাকার কথা দীনদয়াল ভবনের কর্তাদের।
গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক বেশ কিছু দিন ধরেই যথেষ্ট হৃদ্যতাপূর্ণ। রাজ্যসভা থেকে বিদায়বেলায় মোদীর মুখে নিজের প্রশস্তি শুনে আবেগে চোখ ভিজিয়ে ফেলে ছিলেন আজাদ। বুধবার সকাল থেকেই আজাদের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে কংগ্রেসের নাম-চিহ্ন উধাও। দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিক আজাদ কি শীঘ্রই কংগ্রেস থেকে আজাদি নেবেন ? আজাদের হৃদয়েও কি পদ্মের তসবির আঁকা হচ্ছে ? উত্তর দেবে সময়।
Photo Credit- Twitter and newsx.