ফিরহাদ হাকিম এ’বার পুরভোটে লড়বেন কিনা তা নিয়ে একটা সংশয় ছিল । কিন্তু প্রার্থী তালিকায় ফিরহাদের নাম উঠতেই রাজনৈতিক মহল এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় যে মেয়র পদে ফের ববিকেই পছন্দ তৃণমূল নেত্রীর।
কলকাতা : কলকাতার মহানাগরিকের চেয়ারে ফের ফিরহাদ হাকিম। ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পাচ্ছেন মালা রায়। ভোটের আগে কলকাতা কর্পোরেশনের তিন শীর্ষ পদে রদবদলের হালকা হালকা কানাঘুষো শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত কোনও পরিবর্তনই আনলেন না তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের নির্দেশে শোভন চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগ করার পর ২০১৮-র ২০ নভেম্বর বিশ্বস্ত ববির হাতেই কলকাতার দায়িত্ব তুলে দেন মমতা। অতিমারির জেরে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় ২০২০-এর জুনে পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়া হলেও কলকাতা কর্পোরেশনের মুখ্য প্রশাসক পদে হাকিমকেই বসিয়ে দেয় সরকার। একুশের ফাঁড়া কাটিয়ে বিপুল বিক্রমে নবান্নে ফেরার পর কলকাতার ছোট লালবাড়ি জয় করা ছিল মমতার কাছে সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু মেয়র কে হবেন, এই নিয়ে একটা জল্পনা ছিলই রাজনৈতিক মহলে।
কেন্দ্রে মন্ত্রীত্ব হারানোর দুঃখে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে সবাইকে চমকে দেন বাবুল সুপ্রিয়। তখন বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল কলকাতার মেয়রের চেয়ারে বাবুলকেই নাকি দেখতে চান দিদি। সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে কলকাতার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জার্সি পরে ফুটবল খেলেলেও পুরভোটের টিকিট পান নি বাবুল । প্রার্থী তালিকায় জায়গা না পাওয়ার পর থেকেই মেয়র পদে বাবুলের নাম নিয়ে জল্পনা থিতিয়ে যায়। ফিরহাদ হাকিম এ’বার পুরভোটে লড়বেন কিনা তা নিয়ে একটা সংশয় ছিল । কিন্তু প্রার্থী তালিকায় ফিরহাদের নাম উঠতেই রাজনৈতিক মহল এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় যে মেয়র পদে ফের ববিকেই পছন্দ তৃণমূল নেত্রীর।
রাজ্য ক্যাবিনেটে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলাতে হলেও পুনরায় কলকাতার মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে হাকিমের নিজেরও আগ্রহের কোনও অভাব ছিল না বলে ভেতরের খবর। স্বাধীনতার আগে কলকাতার পাঁচ জন মেয়র মুসলমান সম্প্রদায় থেকে এসেছিলেন। এঁদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন আবুল কাশিম ফজলুল হক। স্বাধীনতার পরে ফিরহাদ হাকিমই কলকাতার প্রথম মেয়র , যিনি মুসলমান জনগোষ্ঠী থেকে এসেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগেই কলকাতা পুর কর্পোরেশন দখল করে। ২০১০-এর পুরভোটে জেতার পর শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মেয়র পদে বসান মমতা। তৃণমূলের রাজত্বে শোভন যে কখনও পদ হারাতে পারেন এটা ছিল রাজনৈতিক মহলের কাছে কল্পনারও অতীত। কিন্তু ভাগ্যের ফের কখন কাকে কোথায় নিয়ে ফেলে কেউ জানে না। বৈশাখী কান্ডে শোভনের ঘরের অশান্তি দল এবং পুর প্রশাসনে প্রভাব ফেলতে শুরু করায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই স্নেহের কাননকে ছেঁটে ফেলতে বাধ্য হন মমতা। শোভনের কপাল পুড়তেই ভাগ্যের দরজা আরও চওড়া হয়ে যায় ববির। পুর রাজনীতিতে অভিজ্ঞ আরও অনেক নেতা দলে থাকলেও ২০১৮-র ২০ নভেম্বর ববি হাকিমকেই শোভনের স্থলাভিষিক্ত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯ ডিসেম্বর কলকাতার পুরভোটে বেনজির জয় পেয়েছে তৃণমূল। ১৪৪টি ওয়ার্ডের ১৩৪টিই জোড়াফুলের দখলে। দু-চারটে বাদ দিলে কলকাতার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওয়ার্ড গুলিতে নব্বুই শতাংশ ভোটই কব্জা করেছে তৃণমূল। ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে রেকর্ড মার্জিনে জিতেছেন ফিরহাদ হাকিমও। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতার মহারাষ্ট্র নিবাস হলে বিজয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মমতা। বৈঠকেই মেয়র পারিষদ ঠিক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৫৯ সালের ১লা জানুয়ারি কলকাতাতেই জন্ম ফিরহাদ হাকিমের। ব্যবসায়িক সূত্রে বিহারের গয়া জেলা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন ফিরহাদের ঠাকুর্দা। উর্দুভাষী মুসলমান হলেও বাংলায় রীতিমতো সড়গড় ফিরহাদ হাকিম। চেতলায় বাড়ি । এলাকার মানুষের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। ধর্মীয় গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় দেন না। চেতলা অগ্রণী সংঘের দুর্গা পুজো কমিটির সভাপতি ফিরহাদ। বাঙালির দোল থেকে দুর্গোৎসব – সবেতেই সামনের সারিতে ববি হাকিম। তীক্ষ্মবুদ্ধি রাজনীতিক বলতে যা বোঝায় হাকিম ঠিক তাই। উচ্চাকাঙ্ক্ষীও। কলকাতার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক হাতে রাখতেই মমতা ববির মাথায় কলকাতার মহানাগরিকের শিরোপা তুলে দিয়েছেন বলে অনেকের ধারণা।
Photo Credit- Official FB page of Firhad Hakim,Mamata Banerjee and Atin Ghosh.