দেশভাগ এমন একটি ক্ষত যা থেকে রক্ত ও পুঁজ নিঃসরণ হয়ে চলেছে আজও । যদিও স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে দেশভাগের স্মৃতি উস্কে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি করতে চাইছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ ।
নাগরিকদের একটি বড় অংশ যদিও মনে করেন, ১৫ আগস্ট লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে দেশভাগের বলি নিযুত মানুষের কথা স্মরণ করে ইতিহাসের একটি দায় পালন করেছেন মোদী ।
৭৪ বছর আগে ভারত স্বাধীন হয়েছিল । আবার ৭৪ বছর আগেই ভারত ভেঙে ভাগ হয়েছিল । ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে ঐতিহাসিক লালকেল্লার প্রাকারে দাঁড়িয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বেদনাদায়ক ‘ দেশভাগ ‘ নিয়ে অনেকটাই সময় ব্যয় করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ আমরা স্বাধীনতা দিবসে উৎসব পালন করছি বটে কিন্তু দেশভাগের যন্ত্রণা আজও ভারতবর্ষের বুকে বিঁধে আছে ।’ নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ দেশভাগ বিংশ শতাব্দীর সবথেকে বড় বিপর্যয় গুলির অন্যতম । দেশভাগের যন্ত্রণা ভুলে যাওয়ার নয় । ‘ দেশভাগের বলি হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। স্বাধীনতার পর এদের দুঃখদুর্দশার কথা দ্রুত ভুলে যাওয়া এবং ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করেন মোদী । কিন্তু তাঁর সরকার দেশের স্বাধীনতার পাশাপাশি দেশ ভাগের ইতিহাসকেও সমান গুরুত্ব দেবে বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী । শনিবার ট্যুইট করে ১৪ আগস্ট দিনটিকে বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস বা Partition Horrors Remembrance Day হিসেবে পালনের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী । রবিবার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর বক্তৃতা শুরু করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেশভাগ প্রসঙ্গে চলে আসেন তিনি ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ এখন থেকে প্রত্যেক বছর ১৪ আগস্ট দিনটিকে ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস ‘ হিসেবে স্মরণ করা হবে । কেন এই উদ্যোগ ঐতিহাসিক লালকেল্লার মঞ্চ থেকে তারও জবাব দিয়েছেন মোদী । নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ দেশভাগের সময় যে মানুষেরা দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করেছেন । মানবেতর পরিবেশে বাস করেছেন । যে মানুষদের উপর নৃশংস অত্যাচার নেমে এসেছে । যারা নিহত হয়েছেন এমনকি মৃত্যুর পর যাদের শেষকৃত্য টুকুও সম্মানের সঙ্গে হয় নি । তাঁদের স্মৃতি যত দুঃসহই হোক তা জীবিত রাখা জরুরী। ‘
রাজনৈতিক মহল বলছে , এই প্রথম ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে দেশভাগ ও দেশভাগের বলি জনগণের কথা এতটা গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করলেন। আগামী বছর স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ হবে । সিকি শতাব্দী পরে মোদী কেন দেশভাগের তিক্ত স্মৃতি বারেবারে উস্কে দিচ্ছেন ? এমন প্রশ্নও তুলতে শুরু করে দিয়েছেন বিরোধীরা । যদিও দেশভাগ নিছক অতীতের স্মৃতি নয় বরং এমন একটি ক্ষত যা থেকে রক্ত ও পুঁজ নিঃসরণ হয়ে চলেছে আজও । তাই নাগরিকদের একটি বড় অংশ মনে করছে, স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে দেশভাগের ভুক্তভোগী নিযুত নর-নারীর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী একটি ঐতিহাসিক দায় পালন করেছেন মাত্র ।
ছবি – ট্যুইটার ও আর্কাইভস থেকে প্রাপ্ত।