আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০২৪-এর শেষ লগ্নে বিমানযাত্রা যেন অভিশাপ হয়ে উঠল। ডিসেম্বরের শেষে চারদিনের মধ্যে পরপর দুটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার খবরে স্তম্ভিত বিশ্ববাসী। ২৫ ডিসেম্বর আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার ধাক্কা সামলে না উঠতেই রবিবার সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হল জেজু এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ১৭৫ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন। দু’জন বাদে সকলের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেজু এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানের দুর্ঘটনার ভয়াবহ দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেছেন কেউ কেউ। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্লেনটি রানওয়েতে দ্রুত গতিতে ছুটছে। বিমানের চাকা বা ল্যান্ডিং গিয়ার দেখা যাচ্ছে না। পেটে ভর করেই বিমানটি জোরে ছুটছে। ছুটতে ছুটতে রানওয়ের শেষ প্রান্তে থাকা একটি দেওয়ালে আঘাত করতেই বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণে বিমানটিতে আগুন ধরে যেতে দেখা যাচ্ছে।
পাখির ধাক্কায় ল্যান্ডিং গিয়ার বিকল হয়ে দুর্ঘটনা?
জেজু এয়ারলাইন্সের ৭সি ২২১৬ ফ্লাইটটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক থেকে ১৭৫ জন যাত্রী নিয়ে মুয়ানে ফিরছিল। অবতরণকালে বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ার যে কাজ করছিল না, প্রাথমিকভাবে তা প্রমাণিত। চাকা না খোলায় বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটিকে পাইলট ‘বেলি ল্যান্ডিং’ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছে দক্ষিণ কোরিয়ার অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। কী কারণে বিমানটির ‘ল্যান্ডিং গিয়ার’ বিকল হয়ে গিয়েছিল এই প্রশ্ন উঠেছে। পাখির ধাক্কায় ‘ল্যান্ডিং গিয়ার’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে বিধ্বস্ত বিমানটির ‘ব্ল্যাক বক্স’ সংগ্রহ করা হয়েছে, তদন্তের কাজ চলছে। পাখি থেকে কোনও ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা আছে, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে এই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল বলে একটি সূত্র থেকে জানানো হয়েছে। বিমানটির পাইলটেরা অবতরণের আগে কন্ট্রোল টাওয়ারে ‘মেডে’ বা ‘বিপদ সংকেত’ পাঠিয়েছিলেন বলে দক্ষিণ কোরিয়ার এক সিভিল এভিয়েশন আধিকারিক জানিয়েছেন। এর ঠিক এক মিনিট পরেই বিমানটি রানওয়েতে ‘বেলি ল্যান্ডিং’-এর চেষ্টা করে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2024/12/Picsart_24-12-29_19-07-19-307-1024x625.jpg)
অবতরণের মুহূর্তে বিমানের চাকা শেষ পর্যন্ত না খুললে ‘বেলি ল্যান্ডিং’ করানো ছাড়া পাইলটদের সামনে আর কোনও রাস্তা থাকে না। ‘বেলি ল্যান্ডিং’ য়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকেই। জেজু এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির দুর্ঘটনার মুহূর্তের ভিডিও থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, রানওয়েতে বিমানটির গতি অনেক বেশি ছিল। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানটি রানওয়ের শেষ প্রান্তে দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে।
পাইলটদের তাড়াহুড়োয় শেষ রক্ষা হয় নি?
বিমান বিশেষজ্ঞদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, জেজু এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির দুই পাইলট কি সিদ্ধান্ত নিতে তাড়াহুড়ো করেছেন? অবতরণের মুহূর্তে বিমানে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লে সাধারণত বিমান বন্দরের উপরে অনেকটা সময় ধরে চক্কর মারতে থাকে বিমান। ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল’ থেকেও তেমনই নির্দেশ দেওয়া হয় পাইলটদের। অবতরণ যথাসম্ভব ঝুঁকিমুক্ত রাখতেই এই ধরণের পরিস্থিতিতে অবতরণ বিলম্বিত করা হয়।
মুয়ান এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ!
কোনও বিমান ‘বেলি ল্যান্ডিং’ করলে বিমানে আগুন ধরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাইলটদের কাছ থেকে আপৎকালীন বার্তা পাওয়া মাত্রই তাই রানওয়েতে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সহ উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে দেওয়াই নিয়ম। রবিবার সকালে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির পাইলটদের কাছ থেকে এমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের বার্তা পাওয়ার পরেও মুয়ান এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ রানওয়েতে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের আগাম ব্যবস্থা রাখে নি বলে কোনও কোনও মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে।
Feature image and video are collected.