কলকাতা: মঙ্গলবার একই দিনে মোদী এবং মমতা দু’জনেই প্রচারের ঝড় তুললেন কলকাতায়। রাজ্যে পা দিয়েই মোদীর ঘোষণা, এবার বাংলা থেকে বেশি আসন জিতবে বিজেপি। শেষ দফা ভোটের আগে আত্মপ্রত্যয়ী মোদী মুহুর্মুহু জানান দিচ্ছেন, আরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সাউথ ব্লকে তাঁর প্রত্যাবর্তন আর কয়েক দিনের অপেক্ষা মাত্র। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, আর মাত্র ৭-৮ দিন মোদীর নামের আগে প্রধানমন্ত্রী শব্দটা বসবে; এরপর এক্স প্রাইম মিনিস্টার বলে ডাকতে হবে। মঙ্গলবার মমতার প্রচার শুরু হয় দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে বিরাটি বণিক মোড় থেকে এয়ারপোর্টের দুই নম্বর গেট পর্যন্ত পদযাত্রা দিয়ে।
বিকেলে কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণের দুই তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মালা রায়ের সমর্থনে এন্টালি মার্কেট থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি পর্যন্ত পদযাত্রা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলে মমতার শেষ কর্মসূচি ছিল বেহালা পশ্চিমের চৌরাস্তায়। সন্ধ্যায় সেখানে মালা রায়ের সমর্থনে সভায় ভাষণ দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সভায় মোদীর প্রত্যাবর্তনের দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে মমতা বলেন, “আমার করে যাওয়া মেট্রো প্রকল্প বারবার উদ্বোধন করেন মোদী। প্রত্যেকটা আমার করা। একটাও ওদের করা নয়। ওরা উল্টে টাইম নিয়েছে বাংলাকে বঞ্চিত করার জন্য। জিজ্ঞেস করুন টালিগঞ্জ টু গড়িয়া কে করেছে? তারাতলা টু জোকা কে করেছে? এমনকি জোকা থেকে দমদম চলে যাবে। এর উদ্বোধন কবে হবে?” মমতার কটাক্ষ, “আর উদ্বোধন করার টাইম পাবে না। এবার আর আসছে না। এবার আর আসছে না তো! আবার কী করে উদ্বোধন করবে? আসছেই তো না।”
সভায় মমতার দাবি, বেহালার বেহাল দশা দূর হয়েছে একমাত্র তাঁর আমলেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বেহালার কী হাল ছিল! আর বেহালা আজকে কীভাবে বদলেছে। এটা আজকে যাদের দেখা নেই; তাদের বলব, চোখ না থাকলে চোখটা একটু খুলুন। এই যে মেট্রো আজ বেহালা দিয়ে যাচ্ছে, এটা কার সময়ে করা? কে করেছিল? টাকা রেখে গিয়েছিলাম, আমি রেল মিনিস্টার থেকে চলে গেলেও প্রোজেক্ট যাতে ক্যানসেল করতে না পারে।” মমতা বলেন, “এই মেট্রো আপনাদের এলাকার চেহারা বদলে দিয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী তিনবার করে উদ্বোধন করছেন। লজ্জাও করে না!” জোকা-তারাতলা মেট্রোর কাজে বিলম্ব হয়েছে বলে অভিযোগ করে এর দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে ঠেলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “একটা প্রোজেক্ট করতে ১৩ বছর লাগায়। আমি ২০০৯ সালেই করে দিয়ে এসেছিলাম। আমি যদি থাকতাম, দু বছরের মধ্যে কমপ্লিট করে দিয়ে বেরিয়ে যেতাম।” বেহালায় মেট্রো সম্প্রসারণে বিলম্বের জন্য আগের বামফ্রন্ট সরকারকেও অভিযুক্ত করেন মমতা। ২০০৯-এ রেল অনুরোধ করার পরেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার বেহালার রাস্তা থেকে ট্রাম লাইন তুলে দেয় নি বলে সভায় দাবি করেন তিনি।
বেহালা চৌরাস্তার সভায় বেহালার উন্নতির জন্য প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও কৃতিত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন,”আরেকজনকে আজকে আমি যদি থ্যাংকস না দিই, তাহলে আমি ভুল করব। সে আজকে হয়তো ডাইরেক্ট তৃণমূল কংগ্রেস করে না। সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু তখন সে মেয়র ছিল। কোন কোন স্পটে স্টেশন হবে, সেই জমি পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি নিজেদের পকেটের টাকা দিয়েও জমি কিনে রেল স্টেশন তৈরি করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত অনেকে টাকা পায় নি।” বেহালার নিকাশি ব্যবহার উন্নতিতে রাজ্য সরকার ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা খরচ করেছে বলে সভায় দাবি করেন মমতা। মমতা বলেন, “বেহালায় আগে একটু বৃষ্টিতেই এক কোমর জল দাঁড়িয়ে থাকত। আজকে নিকাশি ব্যবস্থার পেছনে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা খরচ করে তিনটি পাম্পিং স্টেশন তৈরি করে দেওয়ায় বেশি বৃষ্টিতেও জল আর দাঁড়ায় না।”
বেহালার সভায় দাঁড়িয়ে মোদীর উদ্দেশ্যে মমতার হুঙ্কার, “৩৪ বছরের বামফ্রন্টকে যদি উপড়ে ফেলতে পারি, মানুষের আশীর্বাদে তোমাকেও উপড়ে ফেলতে পারব। অপেক্ষা করো। মা-বোনেরা জেনে রাখুন, ওদের এত সাহস, বলে লক্ষ্মীর ভান্ডার তুলে দেবে। যত দিন বেঁচে থাকবেন, এটা পাবেন। আপনাদের আশীর্বাদ, দোয়া, লড়াই না পেলে জিততে পারব না।”
Feature image: NNDC.