ডেস্ক রিপোর্ট: শনিবার (২৫ মে) ষষ্ঠ দফায় বাংলার ৮ আসনে ভোটগ্রহণের আগে প্রাণ গেছে একজনের। রাজ্যে সাতদফা লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফাই যে সবথেকে সংঘাতপূর্ণ হবে, তা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের অজানা নয়। এই পর্বে যে আটটি আসনে ভোট হতে চলেছে, তার পাঁচটিই ( বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর) বিজেপির দখলে। ঘাটাল, কাঁথি ও তমলুকে ২০১৯-এ তৃণমূল জিতেছিল বটে কিন্তু এখন ‘শুভেন্দু গড়’ নাম শ্রবণ মাত্রই কর্ণকুহরে অগ্নিশলাকা প্রবেশের অনুভূতি হয় মমতা-অভিষেকের।
নিজের গড়ে আটে আট করতে চান শুভেন্দু
শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই কাঁথি-তমলুকের সাংসদের নামটাই শুধু তৃণমূলের খাতায়। সাংসদ শিশির অধিকারী এ’বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না, কাঁথি থেকে বিজেপির টিকিটে লড়ছেন তাঁর ছোট ছেলে সৌমেন্দু। শিশিরবাবুর আরেক ছেলে দিব্যেন্দু তমলুকের সাংসদ; কিন্তু এবার লড়ছেন না। এই আসনে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব দিব্যেন্দুর মেজদা শুভেন্দুর কাঁধে। এক সময় কাঁথি ও শিশির অধিকারী ছিল সমার্থক। সিপিএম পর্যন্ত কাঁথি পুরসভা শিশিরের হাত থেকে কব্জা করতে পারে নি। আজ শুধু কাঁথি নয়, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলাটাকেই শিশিরবাবুর মেজ ছেলের গড় বলে জানে রাজনৈতিক মহল।
শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলাই নয়, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের যে আটটি আসনে শনিবার ভোট, সেখানে শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ভিত্তি যে যথেষ্টই মজবুত, সে ব্যাপারে কারও মনে কোনও সন্দেহ নেই। পশ্চিমাঞ্চলে শুভেন্দুর গড় ভাঙতে মমতা যেমন মরীয়া, তেমনি গড় রক্ষায় মাটি কামড়ে লড়ছেন শুভেন্দু। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে জনভিত্তি শক্তিশালী করে ফেলেছিল গেরুয়া শিবির। যার ফলশ্রুতিতে উনিশে আটটিতে পাঁচটিই গিয়েছিল বিজেপির দখলে। চব্বিশে বিরোধী দলনেতার টার্গেট কমপক্ষে সাতটি মোদী-শাহকে উপহার দেওয়া। ঘাটালের দুই বারের সাংসদ অভিনেতা দেব এবারও তৃণমূলের প্রার্থী। মমতার প্রিয়পাত্রকে হারাতে ঘাটালে টলিউডের আরেক অভিনেতা হিরণকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের হাত থেকে ঘাটাল ছিনিয়ে আনতে পারাটা শুভেন্দুর জন্য হবে বিরাট ‘বোনাস’ প্রাপ্তি।
নন্দীগ্রামে বিজেপি নেতার মায়ের খুনিরা অধরা
শুভেন্দু গড়ের ৮ আসনেই আসলে লড়াই শুভেন্দুর সঙ্গে মমতার। তমলুকে পদ্মের হয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিঃসন্দেহে ষষ্ঠ দফা ভোটের প্রধান আকর্ষণ। প্রাক্তন বিচারপতিকে মোকাবিলা করতে বাচ্চা ছেলে দেবাংশুকে দিয়ে ফাটকা খেলছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তবে অভিজিতই হোন আর দেবাংশু, পশ্চিমাঞ্চলের বাকি সাত আসনের মতো তমলুকেও ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ মমতার সঙ্গে শুভেন্দুর। একুশে নন্দীগ্রামে শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারতে হয়েছে। সেই ক্ষতে এখনও প্রলেপ পড়ে নি। নন্দীগ্রামে মমতাকে হারিয়ে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। এগার থেকে একুশ- এই দশ বছরে এমন আক্রমণাত্মক বিরোধী দলনেতার মুখোমুখি হতে হয় নি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। তাই ষষ্ঠ দফায় শাসকদল বেপরোয়া। বুধবার রাতে নন্দীগ্রাম-১ নম্বর ব্লকের সোনাচূড়ায় বিজেপির এসসি মোর্চার স্থানীয় নেতা সঞ্জয় আড়ির মা রথীবালা আড়ি খুন হয়েছেন। দুষ্কৃতীদের মারে আহত সঞ্জয়ের অবস্থা এখন-তখন। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।
নন্দীগ্রামে বিজেপির নেতার মাকে হত্যায় জড়িতদের পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারলেও নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বিজেপির মন্ডল সভাপতি ধনঞ্জয় ঘড়াকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অসুবিধা হয় নি। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মনোনয়ন পেশের দিন তমলুকের হাসপাতাল মোড়ে বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিজেপির নন্দীগ্রাম-১’এর মন্ডল সভাপতিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ভোটের আগের দিন তুচ্ছ মামলায় দলের মন্ডল সভাপতিকে গ্রেফতারের মধ্যে নোংরা রাজনীতি দেখছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে কাঁথি-তমলুক
বিজেপি নেতার মা খুন হয়ে যাওয়ার পর থেকেই নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। তমলুক ও কাঁথি জুড়ে চাপা উত্তেজনা। ষষ্ঠ দফার ভোট শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচন কমিশন চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। পূর্ব মেদিনীপুরের দুই লোকসভা কেন্দ্র কাঁথি ও তমলুকের জন্য ২৩৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে কমিশন। রাজ্য পুলিশের উপর নির্ভর করতে পারছেন না কমিশনের কর্তারা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ভোটের দিন পুলিশ থাকছে মাত্র ৭১৪ জন। সেই রাগেই উপর মহলের নির্দেশে রাজ্য পুলিশ ভোটের আগের দিন নন্দীগ্রামে বিজেপির বিরুদ্ধে অতি সক্রিয় কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। শনিবার রাজ্যের আট আসনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাখাটা নির্বাচন কমিশনের জন্য নিঃসন্দেহে অগ্নিপরীক্ষা।
Feature graphic is representational and created by NNDC.